ভাঙনের খেলায় বসতি সরাতে সরাতে ক্লান্ত লালমনিরহাটের তিস্তা ও ধরলাপাড়ের মানুষ। একেকজন ১৮ থেকে ২০ বার পর্যন্ত বসতি সরিয়ে নিলেও ভাঙন যেন পিছু ছাড়ছে না। সরকারের পক্ষ থেকে নানাভাবে প্রতিশ্রুতি মিললেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। এ অবস্থায় ভাঙন প্রতিরোধে স্থায়ী পদক্ষেপ নেয়ার দাবি নদীপাড়ের মানুষের।
এ যেন এক বিধ্বস্ত জনপদ। দীর্ঘস্থায়ী বন্যা আর ভয়াল তিস্তা গিলে ফেলেছে লালমনিরহাটের মহিষখোঁচার কয়েকটি গ্রাম। এ জনপদের বাসিন্দা হাফিজ উদ্দিন। তিস্তার ভাঙনের খেলায় তার কপাল পুড়েছে বহুবার। বসতি সরিয়ে নিতে নিতে ক্লান্ত তিনি। হাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘বার বার ভেঙে ১১ বছর শ্বশুর বাড়িতে ছিলাম। নদী আমার বাড়িঘরসহ সমস্ত জমি বিলীন করে দিয়েছে। এখন আমি থাকবো কই জানিনা।’
হাফিজের মত ১৮ বার বাড়ি সরানোর পর আবারো নদীর কিনারায় আবুল মিয়ার বসতি। তিস্তার ভাঙনে হারিয়েছেন সবটুকু সম্বল। শেষ সমাধি কোথায় হবে সেই চিন্তার ভাঁজ তার কপালে। তিনি বলেন, ‘এখন যদি আমার মরণ হয় মাটি দেয়ার জায়গাটাও নাই। নদী একেবারে আমার বাড়ির সামনে এসে ঠেকেছে।’
চার দফার বন্যায় ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক। নেমে গেছে বন্যার পানি। ৩০টিরও বেশি পয়েন্টে তিস্তা, ধরলার ভাঙন দেখা দেয়ায় নতুন করে আশ্রয় হারিয়েছেন অন্তত দুই হাজার পরিবার। ভাঙন ঠেকাতে বাঁধ নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন তিস্তাপাড়ের ভুক্তভোগীরা।
বরাবরের মত পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ভাঙন ঠেকাতে কাজ করছেন তারা। লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, ‘পর্যায়ক্রমে আমরা স্থায়ী প্রতিরক্ষা বাঁধ বাস্তবায়ন করছি। বন্যা মোকাবিলায় আপাতত জরুরি প্রতিরক্ষার কাজ করে ম্যানেজ করা হয়েছে।’
আর জেলা প্রশাসক আবু জাফরের দাবি ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘নদী তীরবর্তী এলাকায় যদি একটা বাঁধ নির্মাণ করা যায় স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে। এছাড়া দপ্তরগুুলোর সঙ্গে যদি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোকে সংযুক্ত করা যায় তাহলে বন্যা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।’
ভাঙন মোকাবেলায় সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতি দেয়া হলেও, তার বাস্তবায়ন হয় না।