ইনকিলাব মঞ্চের মুখ্য সংগঠন এবং ঢাকা–৮ আসনের এমপি প্রার্থী শরীফ ওসমান হাদির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর গত ১৮ ডিসেম্বর মধ্যরাতে সারাদেশজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভকারীরা মিছিল ও সহিংস কর্মকাণ্ডে জড়ায়। এ সময় প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার কার্যালয়, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবের বাড়ি, সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানটসহ একাধিক স্থাপনায় হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। একই সঙ্গে দেশের বিভিন্ন জেলায়ও বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
হাদি হত্যার খবর সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ার পর একই রাতে বান্দরবানেও বিক্ষোভ তীব্র আকার ধারণ করে। মধ্যরাতে একদল বিক্ষোভকারী মিছিল নিয়ে বান্দরবানের সাবেক পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগ নেতা বীর বাহাদুর উশৈ সিংয়ের বাসভবনের সামনে জড়ো হয়। একপর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা তার বহুতল ভবনের নিচতলায় প্রবেশ করে অগ্নিসংযোগ করে।

দীর্ঘ সময় ধরে আগুন জ্বলতে থাকলে খবর পেয়ে বান্দরবান ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছালেও বিক্ষোভকারীদের বাধার মুখে পড়ে তারা প্রথমে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হয়। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশের সহায়তায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।
অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ভবনের নিচতলা প্রায় সম্পূর্ণভাবে পুড়ে যায়। নিচতলার গ্যারেজে থাকা বীর বাহাদুরের একটি টয়োটা প্রাডো মডেলের গাড়ি সম্পূর্ণভাবে ভস্মীভূত হয়। গাড়িটির উৎপাদন সাল নিশ্চিত হওয়া না গেলেও ধারণা করা হচ্ছে এটি ২০১২ সালের মডেল। গাড়িটির বর্তমান আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা। এছাড়া হোন্ডা কোম্পানির একটি ভেজেল মডেলের গাড়ি (আনুমানিক মূল্য ৪০ লাখ টাকা), দুটি স্কুটার, একটি পানির পাম্প মেশিন, ছয়টি ফ্যান, একটি জেনারেটর সোফাসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র আগুনে পুড়ে যায়।

বীর বাহাদুরের একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, অগ্নিকাণ্ডে বাড়িটির ইন্টেরিয়র ডেকোরেশনসহ সব মিলিয়ে প্রায় ১ কোটি ৫০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সূত্রটি আরও জানায়, আগুনে বাড়িটির একটি অংশ পুরোপুরি ঝলসে যায় এবং ভবনের সামনের ও পেছনের অংশে ব্যাপক ক্ষতি হয়। অগ্নিকাণ্ডের সময় বাড়িটিতে কেউ উপস্থিত ছিলেন না।
এদিকে শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) সকালে সাবেক মন্ত্রী বীর বাহাদুরসহ বান্দরবানের অন্যান্য ‘ফ্যাসিস্টদের’ দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভকারীরা বান্দরবান জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় ঘেরাও করে। পরে দুপুরে জেলা সদরের মুক্তমঞ্চ প্রাঙ্গণে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে বান্দরবানের সর্বস্তরের জনগণ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে।

সাবেক মন্ত্রীর বাসভবনে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় ওঠে। আগুনের ঘটনার একাধিক ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের একাংশ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গণমাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে এ ঘটনার নিন্দা জানান।

ঘটনার পর থেকে জেলা জুড়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ দাবি করছেন, মোটা অঙ্কের চাঁদা না পাওয়ায় একটি চক্র পরিকল্পিতভাবে এ অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটিয়েছে। এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে ইতোমধ্যে বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও তাদের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন ছাত্রদল, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
আরো পড়ুন→বান্দরবানের দুর্গম এলাকায় সেনাবাহিনীর শীতবস্ত্র বিতরণ


