পেকুয়া (কক্সবাজার)প্রতিনিধিঃআর মাত্র পাঁচ দিন বাকি। আগামি ২০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে বহু কাঙ্খিত কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার টইটং ইউপির নির্বাচন। নির্বাচনকে ঘিরে প্রানচাঞ্চল্যতা ফিরে এসেছে টইটংয়ে। ১ম ধাপে নির্বাচনে পেকুয়ার ৭টি ইউনিয়নের মধ্যে ভোট হচ্ছে মাত্র টইটং ইউপিতে। করোনা সংক্রমনে লকডাউনে কয়েক দফা পিছিয়ে ছিল ভোট। তফসিল ঘোষণার পর ফিরে পেয়েছে ভোটের উৎফুল্লতা। কোমর বেঁধে নেমেছে প্রার্থীরা। কর্মী সমাবেশ, প্রচার প্রচারনা, শোডাউন করে পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভিক্ষা চাওয়া হচ্ছে ভোট।
পাহাড়বেষ্টিত ইউনিয়ন টইটং। এক সময় খুন,চাঁদাবাজি, অপহরণ, দা-বাহিনী ও বোরকা বাহিনীর অত্যাচারে অতিষ্ট ছিল আতংকের জনপদ খ্যাত টইটং। টইটং নাম শুনলে গা শিউরে ওঠতো মানুষের। আর সেই ইউপিতে ভোট হচ্ছে ২০ সেপ্টেম্বর। মানুষের মাঝে আগ্রহ যেমন বেড়েছে, তেমনি শঙ্কাও বেড়েছে।
এবারের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন ৭জন প্রার্থী। নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন বহিস্কৃত চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম। আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ঘোড়া প্রতীক নিয়ে ভোট করছেন সাবেক দুইবারের চেয়ারম্যান শহীদুল্লাহ বিএ,বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান জেড.এম মোসলেম উদ্দিন। তিনি লড়ছেন চশমা প্রতীক নিয়ে। এছাড়া নুরুল আমিন (মোটর সাইকেল), কফিল উদ্দিন (আনারস), ইসলামী আন্দোলনের মনোনীত প্রার্থী মৌ.শাহাব উদ্দিন (পাকা) ও নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জাহেদুল ইসলামের সহধর্মিনী শামীমা নাসরিন সায়মা (টেলিফোন) প্রতীক নিয়ে ভোট যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। তবে ভোটাররা জানিয়েছেন সায়মা ড্যামী প্রার্থী। তার কোন প্রচার প্রচারনা নেই। স্বামী জাহেদ চেয়ারম্যানকে জেতাতে প্রার্থী হয়েছেন।
মো.বাচ্চু, এরশাদ, নুরুন্নবী, আব্দুল মালেক,বেবী আক্তার,রোজিনা আক্তারসহ ভোটাররা জানিয়েছেন,মুলত সাবেক তিন চেয়ারম্যানের মধ্যে লড়াই হবে। তিনজনই হেভিওয়েট প্রার্থী। তবে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ভোটের সমীকরণটা পাল্টে যেতে পারে। সুযোগ নিতে পারে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী। ভোট নিয়ে মানুষের মধ্যে আগ্রহও বেড়েছে,তেমনি শঙ্কাও রয়েছে। তবে কয়েকদিন ধরে বিদ্রোহী প্রার্থী শহিদুল্লাহ সরে দাঁড়াবেন বলে গুনজন শুনা যাচ্ছে। তাই ফুরফুরে মেজাজে আছে নৌকার প্রার্থী। অন্য প্রার্থীরা একটু টেনশনে রয়েছে। আমরা অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই।
সরেজমিনে ভোটারদের সাথে কথা বলে জানাগেছে, টইটং উচ্চ বিদ্যালয়, বটতলী শফিকীয়া মাদরাসা ও কাছেমুল উলুম মাদরাসা এ তিনটি ভোটকেন্দ্র খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তিনটি কেন্দ্রই নৌকার প্রার্থী জাহেদের বাড়ির পাশাপাশি। এখানে তার নিজস্ব বলয় রয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও শঙ্কা ও আতংকে রয়েছে টইটংবাসি।
নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী জানান, জনগনের চাওয়া সুষ্টু ভোট। আমিও চাই নিরপেক্ষ ভোট। নৌকার জোয়ার ইনশাল্লাহ কেউ ঠেকাতে পারবেনা। মানুষ চাই উন্নয়ন,সন্ত্রাসমুক্ত টইটং। আমার মেয়াদে আমি সেটাই করেছি। জনগনকে মডেল টইটং উপহার দিয়েছি। আশা করি টইটংবাসি এবারও আমাকে বিপুল ভোটে জয়ী করবেন। আমার মনে হয়না টইটংয়ে কোন ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র আছে। কথায় বলেনা যেখানে বাঘের ভয় সেখানে রাত হয়। বনের বাঘের আগে মনের বাঘে ধরেছে।
বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী জেড.এম মোসলেম উদ্দিন জানায়, জনগন শঙ্কা ও আতংকে আছে। জনগন হিটলারী শাসনের অবসান চায়। মানুষ সুষ্টভাবে ভোট দিতে পারলে বিজয় ছিনিয়ে আনতে পারবো। মানুষ এখন অনেক সচেতন।জনগন পরিবর্তন চায়। চারটি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ।
এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেক ভোটাররা জানান, জাহেদ চেয়ারম্যানের অনুসারী লোকজন ১,২,৩ ও ৪নং ওয়ার্ডের ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। নির্বাচনী প্রচারনায় বাঁধাগ্রস্ত করা হচ্ছে। ৪টি ওয়ার্ডের জনজন চরম আতংকের মধ্যে রয়েছে।
আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী শহীদুল্লাহ বিএ বলেন, আমি আর্থিক সংকটে আছি। প্রচার প্রচারনায় বেরও হয়নি। তবে আমি কাউকে ভয় করিনা।
চেয়ারম্যান প্রার্থী কফিল উদ্দিন,নুরুল আমিন বলেন,জনগনের একমাত্র চাওয়া সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট। জনগনই নেতা নির্বাচন করবে।তবে সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন তারা। চারটি ভোট কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ বলে দাবী করছেন।