মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০০ পূর্বাহ্ন
প্রধান সংবাদ :
মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ডাকা ধর্মঘটে ভোগান্তিতে যাত্রীরা -থানচি সীমান্তবর্তী এলাকায় নিরাপত্তার বাহিনীর সাথে গোলাগুলিতে কেএনএফ দুই সদস্য নিহত থানচিতে কেএনএফ সতর্কতায় বিজিবি’র গণসংযোগ বান্দরবান ব্যাংক ডাকাতির মামলায় কেএনএফের আরও ৫ জন রিমান্ডে নাজুক পরিস্থিতিতে ভুগছে থানচির পর্যটন কেন্দ্র গুলো বান্দরবান থানচি ব্যাংক ডাকাতির মামলায় কেএনএফ সদস্য ও সহযোগী রিমান্ডে  নাইক্ষ্যংছড়ি-মিয়ানমার সীমান্ত পরিদর্শনে বিজিবির মহাপরিচালক দুর্গম ধুপানিছড়া যৌথ বাহিনী অভিযানে অস্ত্র ও গোলাবারুদ সহ ৯জন আটক বান্দরবান কেএনএফের আরও ৪ সদস্য কারাগারে নাইক্ষ্যংছড়িতে বর্ণাঢ্য আয়োজনে বাংলা নববর্ষ পালন

পার্বত্য চট্টগ্রামে এক ব্রিটিশ কর্মকর্তার রোমাঞ্চকর অভিযান

রিপোর্টারের নাম
  • প্রকাশিতঃ শুক্রবার, ১২ এপ্রিল, ২০২৪
  • ২১৫ জন নিউজটি পড়েছেন

থাংলিয়ানা ____প্রথম নোঙর (১৮৬৫) –

৫. দূর মফস্বল পরিদর্শনে

১৮৬৫ সালের বসন্তে আমি দ্বিতীয়বারের মতো চট্টগ্রাম জেলা পরিদর্শনে বের হলাম।ইচ্ছে আছে যতটা দূরে যাওয়া যায়, নিজের চোখে সব দেখার ইচ্ছে, দেশি
অফিসারদের নোংরা চশমায় না,যারা ভারতবর্ষজুড়ে ইংরেজ অফিসারের আঁচল ধরে ঘুরে বেড়ায়।তাই স্থানীয় কেরানিদের বাদ দিয়ে একটা ধূসর ফ্লানেলের কোট এবং
হলুদ বুটজোড়া পরে,কাঁধে আমার রাইফেলটা ঝুলিয়ে বেরিয়ে পড়লাম । আমার সাথে ছিল মগ দোভাষী সাধু এবং তার ছেলে অপু। ছেলেটার কাছে আমার রিভলবার আর শিকারের ছুরিটা দিলাম। দোভাষী না নিয়ে উপায় নেই। আমি বাংলা বা হিন্দুস্থানি কোনো ভাষাই পারি না । চট্টগ্রামের সীমানা পেরিয়ে আরো দক্ষিণে গেলে বার্মিজ ভাষার লোকের দেখা মেলে। আর সভ্যতার সীমানা পেরিয়ে পার্বত্য অঞ্চলের বাসিন্দাদের ভাষা তো একদমই অচেনা।

আমার মালপত্রের বহর যতটা সম্ভব সংকুচিত করেছি। হাতের ব্যাগটা যতটা ছোট রাখা যায় ততটাই রেখেছি। এটা ছাড়া আরেকটি সাদা শার্ট, লাল ওয়েস্ট কোট, একটা দাঁতের ব্রাশ,একটা তোয়ালে, একটা সাবান, একটা চিরুনি ইত্যাদি নিয়ে ছোট একটা পুঁটলি হয়েছে যা আমার সঙ্গী সহজেই বহন করতে পারে।

বোঝা হালকা হওয়াতে জঙ্গলের মধ্যে আমার যাত্রাটা আনন্দময় হলো। জীবন কিংবা ভ্রমণে সুখী হওয়ার গোপন রহস্য হলো কোনোটাতেই অনর্থক বোঝা না বাড়ানো। যেতে যেতে ভাবছিলাম এখন যদি কোনো একটা থানার কাছে হুট  করে গিয়ে পৌঁছাই,সেখানে কীরকম ত্রাস এবং হুড়াহুড়ি পড়ে যাবে। একে তো নতুন সাহেব, তার ওপর সাহেবের ভাবসাব কেমন তা জানে না তারা।এই অতর্কিতপরিদর্শন স্থানীয় পুলিশ কনস্টেবলদের নিস্তরঙ্গ জীবনের ওপর আসমানি গজব হিসেবে নেমে আসতে পারে। ভাবলাম, তাদের ঝামেলায় ফেলার চেয়ে বরং নদীর ধারে কোনো মগ অধ্যুষিত গ্রামে রাত কাটানো শ্রেয় হবে।

সেই ভাবনা মোতাবেক স্থানীয় একটা মগ গ্রামে গিয়ে একটা বাড়িতে উঠলাম। সেখানে জামাকাপড় বদলে নিয়ে কালো রঙের কাঠের মেঝেতে বসে পড়লাম।তারপর গৃহস্থের সাথে সৌজন্য বিনিময় ইত্যাদি সেরে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে বেরিয়ে এলাম।

তারপর আমি ছোট্ট গোলাকার ঝুড়ির মতো একটি নৌকা নিয়ে ঘুরতে বের হলাম,নৌকাটা দেখতে আমার ব্রিটিশ পূর্বপুরুষদের তৈরি কোরাকলের মতো। ঘুরতে ঘুরতে আমি এখানকার আদিম জঙ্গলের ভেতর দিয়ে যাচ্ছিলাম। এখানে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অর্কিড শোভিত ধূসর ঘন শৈবালে আচ্ছাদিত বিশাল আকারের বৃক্ষ,তার সাথে ঝুলছে সর্পিল আকৃতির বুনো লতা।এই অঞ্চলের সমস্তটা জুড়ে রয়েছে বিশাল অন্ধকারাচ্ছন্ন জঙ্গল এবং সংলগ্ন জলাভূমি,যার নিকটেই বন্যহাতির আবাসস্থল রয়েছে। সেই হাতির পাল মাঝে মাঝে কর্দমাক্ত পথে স্নান করার জন্য দল বেঁধে নেমে আসে। এটা এমন অদ্ভুত রহস্যময় ঘন জঙ্গল যে মনে হয় এখানে বিপুল আকৃতির ডায়নোসরও অনায়াসে বাস করতে পারে।

আরেক দিনের কথা আমার মনে পড়ে।জঙ্গলের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলাম। মাথার ওপরে সূর্যকে সম্পূর্ণ আড়াল করে রেখেছে দানবীয় সব বৃক্ষের ডালপালার আচ্ছাদন।ভূমিতে দুর্লভ জাতের অর্কিড এবং বুনো বিচিত্র সব উদ্ভিদের সমাহার। কোথাও কোনো শব্দ নেই, না পাখি, না পশু, কারো কোনো শব্দ নেই, শুনশান নীরব নিস্তব্ধ চারপাশ। অনড় স্থির হয়ে আছে সমস্ত প্রকৃতি। আমাদের পায়ের নিচে মচমচ করে ভেঙে পড়াশুকনো ডালপালার শব্দ ছাড়া আর কিছু নেই।

আমরা সাধারণত দিনে বিশ মাইলের মতো হাঁটতাম। আমার বন্দুকটা থাকত সাধুর কাছে এবং অপুর হাতে বোঁচকাটা। এই জেলায় শিকার করার সুযোগ কম। উপকূলেরদিকের নিচু জঙ্গলে মথুরা নামের এক জাতের সারস পাখি শিকার করেছিলাম একবার।

একটা পাহাড়ি গ্রামে পৌঁছাল আমাদের আন্তরিক আতিথেয়তার সাথে গ্রহণ করল সবাই।এরা হলো খুমি উপজাতি। দেখতে একটু কদাকার এবং অপরিচ্ছন্ন। তাদের পাড়ায় আমি থাকতে চাইলাম না যখন দেখলাম একটা অর্ধেক চামড়া ছিলানো একটা কুকুরকে ঝুলিয়ে রেখে রান্নার জন্য তৈরি করা হচ্ছে। বিশেষত সাধু যখন আমাকে জানালো যে ওই কুকুরটাকে আমার নৈশভোজের জন্য হত্যা করা হয়েছে।অতএব আমরা গ্রাম ছেড়ে জঙ্গলের পথে বের হয়ে গেলাম আবারো।

খুমিরা প্রায় নগ্ন থাকে,কোমরের কাছে এক চিলতে কাপড় ছাড়া আর কিছুই নেই শরীরে। কানে বড় বড় পেতলের চাকতি ঝোলানো,যার ভারে কানের লতি বড় বড় ছিদ্র সহকারে নিচের দিকে ঝুলে গেছে।

আরেকটা চমৎকার উপজাতি হলো চাক বা চাকমা। তাদের গ্রামে আমি দুদিনের জন্য থেমেছিলাম। আমাকে রাখা হয়েছিল একটা অতিথিশালায় যেটা সম্ভবত গ্রামের
পুরুষদের ক্লাব জাতীয় কিছু। সেখানে গ্রামের পুরুষরা দিনের কাজকর্ম সেরে আসার পর জড়ো হয়। সবাই মিলে বসে বসে ধূমপান করে আর আড্ডা দেয়। দেখে বোঝা
যায় ওরা খুব আমুদে লোক। সারাক্ষণ হাসি মশকরা আনন্দে মেতে আছে। তাদের চোখে আমার গুলিভরা বন্দুকটা খুব আকর্ষণীয় । আমি যখন সেখান থেকে পরপর ছয়টা গুলি ছুড়লাম তখন তাদের উচ্ছ্বসিত প্রশংসার কোনো সীমা ছিল না তবে সেই সাথে আমাকে প্রস্তাব করা হলো ওই বন্দুক দিয়ে একটা বন্যহাতি শিকার করার জন্য । একটা হাতির মাংস দিয়ে পুরো গ্রামের সারা মাসের খোরাক হয়ে যাবে। আমি কখনো বন্যহাতি দেখিনি। সেটা শিকার করতে গিয়ে কী বিপদ হতে পােসেটা না জেনেই তাদের প্রস্তাবে দ্রুত রাজি হয়ে গেলাম ।

চলবে………পর্ব -২
১৫০ বছর আগে লিখা থমাস হারবাট লুইন এর থাংলিয়ানা। পার্বত্য চট্টগ্রামে এক  ব্রিটিশ  কর্মকর্তার রোমাঞ্চকর  অভিযান ১৮৬৫-১৮৭২

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরির আর নিউজ

আজকের নামাজের সময়সুচী

  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ৪:১৩ পূর্বাহ্ণ
  • ১২:০০ অপরাহ্ণ
  • ১৬:৩১ অপরাহ্ণ
  • ১৮:২৮ অপরাহ্ণ
  • ১৯:৪৭ অপরাহ্ণ
  • ৫:২৮ পূর্বাহ্ণ
© All rights reserved ©paharkantho.com-২০১৭-২০২১
themesba-lates1749691102
error: Content is protected !!