বান্দরবান: থানচিতে জুমিয়ারা প্রায় চার মাস পরিচযার্র পর এখন জুমের ধান পাকতে শুরু করায় ফসল ঘরে তোলার নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।
বুধবার (২ সেপ্টেম্বর) উপজেলার বলিপাড়া ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের সুংথাং খুমি পাড়া, ক্যচু মারমা পাড়া, জনেরাম ত্রিপুরা পাড়া ও ব্রম্মদত্ত চাকমা পাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়,আগস্ট মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে জুমের ধান কাটা শুরু করলেও সেপ্টেম্বর মাস শুরু থেকেই জুমের ফসল তোলার নিয়ে জুমিয়া পরিবারগুলো এখন ধান কাটার ব্যস্ততায় রয়েছেন।
ধান ছাড়া তিল, ভূট্টা, মরিচ, মারফা, বেগুন, হলুদ, আদাসহ জুমের অন্যান্য ফসল তোলার অপেক্ষায় রয়েছেন। বেশীর ভাগ জুমিয়া জুমের মাচাং ঘরে অবস্থান করছেন।
জুমিয়াদের ধান কাটার এই মৌসুম এলেই প্রতি বছর স্থানীয় হাট বাজার গুলোতে এর প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। এই উপজেলায় ৪টি বাজারের মধ্যে থানচি সদর বাজার ও বলিপাড়া বাজার নির্দিষ্ট হাটের দিন ছাড়া জুমিয়া কোন ক্রেতাকে আর বাজারে আসতে দেখা যাচ্ছে না।
সপ্তাহের হাটের দিন ছাড়া জন শূন্য বাজারে দোকানে বসে বেকার সময় কাটাতে হচ্ছে বলে বললেন, বলিপাড়া বাজারে কসমেটিক ও ইলেক্ট্রনিক্স ব্যবসায়ী সোনাতন বড়ুয়া।
বলিপাড়া ইউনিয়নের সুংথাং খুমি পাড়ার প্রধান(কারবারী) এওয়াং খুমি তিনি বলেন, এ বছর জুমের ধান ভাল হয়েছে,জুুমের পোকা মাকড় আক্রমণের লক্ষ্য করা গেছে ধান কাটার শেষ না হওয়ার পর্যন্ত কিছুই বলা যাচ্ছে না।
জমা ত্রিপুরা মেম্বার (তিন্দু ইউনিয়ন) বলেন, এই এলাকায় যারা জুম চাষ করেছেন কম বেশী সবার ধান ভাল হয়েছে। আমার ওয়ার্ডের জুমিয়ারা এখন ধান কাটার ব্যস্ত সময় কাটাছেন।
বলিপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়াঅং মারমা বলেন, আমার ইউনিয়নের জুমিয়ারা এখন জুমের পাকা ধান কাটার ব্যস্ত সময় পার করছেন। আমার তিন্দু ইউনিয়নটি ভৌগলিক ভাবে সাধারণ মানুষের একমাত্র জীবন জীবিকার জুমের উপর নির্ভরশীল। তাই প্রত্যেক জুমিয়া পরিবারের জন্য দোয়া করছি।
উল্লেখ্য যে, জুম চাষ এক ধরনের পাহাড় অঞ্চলে স্থানান্তর কৃষি পদ্ধতি, যা জঙ্গল কেটে পুড়িয়ে পাহাড়কে চাষের উপযোগী করার মাধ্যমে যে চাষ করা হয় তারই নাম জুম চাষ। দেশের তিন পার্বত্য অঞ্চলে ৩৫ হাজারেও বেশী পাহাড়ী মানুষের জীবন জীবিকার একমাত্র আদিম ও প্রধান উৎস হল জুম চাষ। বছর শুরুতেই জানুয়ারী মাস হতে সুবিধাজনক স্থান নিবার্চন করে জুমের জঙ্গল কাটা শুরু হয়।
এপ্রিল মাসের শুরুতেই জঙ্গল পুড়িয়ে পরিস্কার করে ধান লাগানোর উপযোগি গড়ে তোলে। এপ্রিল-মে মাসের মধ্যেই জুমের ধান লাগিয়ে দিতে হয়। তারপর জাত (সাদা-লাল চাল) ভেদে আগস্ট মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের পর জুমের ফসল তোলার উপযোগি হতে শুরু করলে জুমের পাকা ধান কেটে ফসল ঘরে তোলার শুরু করে জুমিয়ারা।