পেকুয়া প্রতিনিধিঃকক্সবাজারের পেকুয়ায় কবির আহমদ চৌধুরী বাজারে (পেকুয়া বাজার) ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও ইজারাদারের মধ্যে সংঘর্ষের আশংকা দেখা দিয়েছে। দোকান উচ্ছেদ আতংক ও হাসিলের নামে অতিরিক্ত অর্থ আদায়, ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়সহ নানা অভিযোগ নিয়ে পেকুয়ার প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র কবির আহমদ চৌধুরী বাজারে দু’পক্ষের বিরোধ প্রকট আকার ধারণ করেছে। এর সুত্র ধরে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও ইজারাদার মুখোমুখি হয়েছে।
বিষয়টিকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষই পাল্টাপাল্টি অভিযোগ তুলেছেন। পেকুয়ার কর্মরত গণমাধ্যম কর্মীদের একত্রিত করে ইজারাদার সংবাদ সম্মেলন আহবান করে। এ সময় পরষ্পরকে দায়ী করে পৃথক বিবৃতি দেয়া হয়েছে। বাজারের অচলাবস্থা কাটাতে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের পক্ষে পেকুয়া বাজার ব্যবসায়ী কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লি:এক প্রেস ব্রিফিংয়ে মিলিত হয়েছে।
এ সময় সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে পেকুয়া বাজারে নজিরবিহীন জুলুম ও নিপীড়ন চলছে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জিম্মী করে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে হাজার হাজার টাকা। উচ্ছেদ আতংক ছড়িয়ে বাজারের ইজারাদার ভ্রাম্যমান ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কয়েক দফা উৎকোচ আদায় করে। যে সব ব্যবসায়ী টাকা না দিতে সম্মত হচ্ছে এদেরকে দেখানো হচ্ছে উচ্ছেদ ভয়। পেকুয়া বাজারে সরকারী ভ্যাট আদায়ের নামে ক্রেতা ও ভোক্তাগণের পকেট কাটা হচ্ছে। সরকারী নির্দেশিত পণ্যের উপর যে ভাবে হাসিল নির্ধারণ করা হয়েছে পেকুয়া বাজারে আদায় হচ্ছে এর কয়েকগুণ বেশী।
গরু ছাগল বিক্রির সময় টাকা নিচ্ছে ক্রেতা ও বিক্রেতা দু’পক্ষ থেকে। অথচ দেশের অন্যান্য হাট বাজার সমূহে কেনাকাটার সময় ভোক্তাকে ভ্যাটের আওতায় নিয়ে আসা হয়নি। এখানে হাসিলের নামে এক প্রকার ব্যবসায়ীদের জিম্মী করে আদায় করা হচ্ছে টাকা। এতে করে পেকুয়া বাজারের সুনাম বিনষ্ট হচ্ছে। কবির আহমদ চৌধুরী বাজার পেকুয়াসহ উপকুলের প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র। এ বাজারের উপর নির্ভরশীল এখানকার বিশাল অর্থনীতি। এ অচলাবস্থা নিরসন না করা হলে বাজারের স্বাভাবিক গতি স্থবির হবে। থেমে যাবে অর্থনৈতিক গতিশীলতা। মানুষ এ বাজার থেকে দৃষ্টিভঙ্গি ফিরিয়ে নিবে।
এ দিকে পেকুয়া বাজারে অনিয়ম ঠেকাতে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ পৌঁছান। প্রায় শতাধিক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী গনস্বাক্ষর করে স্মারকলিপি সহকারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান,পেকুয়া থানা, বাজার বণিক সমিতিসহ আরো একাধিক স্থানে পৃথক অভিযোগ প্রেরণ করে। অভিযোগে পেকুয়া বাজারের ইজারাদার এইচএম শওকতের নাম উল্লেখ করে তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
মুরগীর দোকানদার ফোরকান জানান, আমরা কঠিন অবস্থায় পড়েছি। ৪০ হাজার টাকা দিতে হয়েছে ইজারাদার শওকতকে। এখন প্রতিনিয়ত হুমকি দিচ্ছে দোকান উচ্ছেদ করতে।
পোল্ট্রি ফার্ম ব্যবসায়ী নুর মোহাম্মদ জানান, আমরা প্রশাসনকে বিষয়টি লিখিত জানিয়েছি। বাপদাদার আমল থেকে এ বাজারে আছি। তবে এ ভাবে আর জুলুম হতে হয়নি।
মনির স্টোরের মালিক মনির জানান, বাজারে ব্যবসায়ীদের উপর জুলুম শুরু হয়েছে। ৪০ হাজার টাকা চাঁদা দিয়েছি। তবু থামছেনা। আজগর পোল্ট্রির মালিক আজগর আলী বলেন, খুটি পুঁতে দিয়েছে। বলা হচ্ছে দোকানের কিছু অংশ ছেড়ে দিতে হবে। দেড় মাস আগে দাবীকৃত ৪০ হাজার টাকা চাঁদা দিয়েছি। এখন দোকান থেকে উচ্ছেদ করতে চায়।
তেলের পাইকারী ব্যবসায়ী মহিউদ্দিন জানান, আমরা কি করবো। এ বাজার থেকে সওদা করে সংসার চালায়। তারা এ ভাবে বিশাল ডাকের টাকা আমাদের ওপর কেন ছাপিয়ে দিচ্ছে। টাকা দিয়েছি তবুও নির্যাতন চলছে।
পেকুয়া বাজার বণিক সমিতির সভাপতি মিনহাজ উদ্দিন জানান, আমাদেরকে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। আসলে আমরা সবকিছু দেখছি। এ ভাবে মানুষ ব্যবসা বাণিজ্য করতে পারেনা। এটিকে আমরা নিপীড়ন বলবো।
পেকুয়া বাজারের ইজারাদার এইচ,এম শওকত জানান, এ সব মিথ্যাচার। আগে যারা বাজার ডেকেছিল এরাই কলকাঠি নাড়ছে। লাভের আশায় আমি বাজার ইজারা নিই নাই। মূলত ব্যবসায়ীদের জুলুম নিপীড়ন বন্ধ করতে এটি আমার উদ্বেগ। উপভাড়া দিয়ে কিছু ব্যবসায়ী আগের ইজারাদারদের দোকানের ভাড়া দেন। আমরা যখন এ সব ধরতে শুরু করেছি তখন এ ষড়যন্ত্র।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বাজারে ব্যবসায়ীদের ওপর নির্যাতন চলছে। লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। রহস্যজনক কারনে এখনো ইজারাদারের সাথে সরকারের চুক্তি হয়নি। অথচ প্রায় ছয়মাস হয়ে গেছে পেকুয়া বাজার ইজারা হয়েছে।