বান্দরবান প্রতিনিধিঃবান্দরবানে উজানী পাড়া বৌদ্ধ বিহারে নানা ভাব গাম্ভীর্যের মধ্যে দিয়ে বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের কঠিন চীবর দান উৎসব পালিত হয়েছে।
এই ধর্মীয় অনুষ্ঠান উপলক্ষে আজ ১৭ই নভেম্বর বুধবার সকালে দায়ক-দায়ীকারা মঙ্গলচরন বের হয়ে ভান্তের চীবর (কাপড়), পেদেসাঃ (কাগজের তৈরি টাকা ঝুলানোর ফুল গাছ) নগদ টাকাসহ পূজার সামগ্রী হাতে নিয়ে বিহার আসেন। পরে সমবেত হয়ে পঞ্চশীল, অষ্টশীল গ্রহণ এবং পূণ্যলাভের জন্যে উজানী পাড়া বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষের নিকট চীবর দান করেন দায়ক-দায়ীকারা।
ওইসময় বান্দরবান উজানি পাড়া বিহারে অধ্যক্ষ ধর্মগুরু ড. উ সুওয়াইন্না মহাথের সবার উদ্দেশে ধর্ম দেশনা দেন ও অতিমারি করোনা মুক্তি আর দেশের শান্তির জন্য মঙ্গল কামনা করেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন সার্কেল চীফ ১৭ তম রাজা বোমাংগ্রী উচপ্রু চৌধুরী সহ নর-নারী, দায়ক-দায়ীকারা অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
তাছাড়া সারাদিন বর্ণাঢ্য কর্মসূচির মধ্যে জাতীয় ও ধর্মীয় পতাকা উত্তোলন, প্রভাত ফেরী সহকারে বুদ্ধ পূজা, অষ্ট উপকরণসহ সংঘদান শেষে বিকালে নর-নারী, দায়-দায়িকা, উপ-উপাসীকাবৃন্দ পুনরায় বিহারের সমবেত হয়ে ভগবানের উদ্দেশে বিহারে জ্বল উৎসর্গ (পানি ঢালা), নগদ অর্থ দান, মোমবাতি ও হাজার প্রদীপ প্রজ্বলন, কল্পতরু উৎসর্গ, অষ্টপরিষ্কার দান, পঞ্চশীল,অষ্টশীল গ্রহণ, ফানুস উত্তোলন ও বিশ্বশান্তি দেশের মঙ্গল কামনায় প্রার্থনা করবেন ভক্তরা।
এইদিকে একইদিনে রোয়াজা পাড়া বৌদ্ধ বিহার প্রাঙ্গনে ২৯তম দনোত্তম শুভ কঠিন চীবর দানোৎসব পালিত হয়েছে। চেমীডুলু পাড়া বাঘমারা বিহার অধ্যক্ষ ধর্মগুরু উঃ ভদন্ত সমা মহাথের সবার উদ্দেশে ধর্ম দেশনা দেন ও অতিমারি করোনা মুক্তি আর দেশের শান্তির জন্য মঙ্গল কামনা করেন।
এইসময় বান্দরবান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা, সদর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সাচপ্রু, রোয়াজা পাড়া কারবারী শৈগ্যউ মারমা সহ নর-নারী, দায়ক-দায়ীকারা অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
কথিত আছে গৌতম বুদ্ধের মহাপুণ্যবতী নারী বিশাখা দেবী এই কঠিন ব্রতী পালন করে বুদ্ধকে চীবর দান করেছিলেন। সেই থেকে প্রতিবছর কঠিন চীবর দানোৎসব ধর্মীয়ভাবে পালন করে আসছে সকল বৌদ্ধ ধর্মালম্বীরা।
বৌদ্ধর্ ধর্ম শাস্ত্র মতে র্চীবর হচ্ছে বৌদ্ধ ভিক্ষুগণের পরিধেয় বস্ত্র। যেদিন চীবর দান করা হবে সেদিনের সূর্যোদয় হতে পরবর্তী সূর্যোদয় পর্যন্ত সুতা কাটা, কাপড় ধোয়া, কাপড় কাটা, সেলাই, রঙ করা, ধৌত করা ও শুকানো ইত্যাদি একসাথে দ্রুত কাজগুলো সম্পাদন করতে হয়। এছাড়া আরও কিছু কঠিন নিয়ম পালনের মধ্য দিয়ে এ চীবর দান সম্পন্ন করতে হয়। তাই চীবর শব্দটির সাথে কঠিন শব্দটি যুক্ত হয়ে এর নামকরণ হয় কঠিন চীবর দান।