নিজস্ব প্রতিনিধিঃ বান্দরবান পার্বত্য জেলায় সকল শর্ত পূরণ করার পরও জাতীয় করন করা হয়নি ১১টি বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ৪৪জন শিক্ষকের মানবেতর জীবনযাপন। হাজারের অধিক শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন অনিশ্চিত।
ধূইল্যাতলী বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মু.জসিম উদ্দিন বলেন,১৯৯৮সাল থেকে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩০হাজার বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়কে ধাপে ধাপে জাতীয় করনের ঘোষণায় আশার আলো দেখেছিলেন মনে করেছিলেন এবার ২০বছরের দুঃখ কষ্ট লাঘব হবে। সে আশায় যাবতীয় ডকুমেন্ট সংগ্রহ করে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু এখনো জাতীয়করণের দেখা মেলেনি।স্কুল জাতীয়করন করা না হলে খালি হাতে অবসর নিতে হবে এই দুঃচিন্তায় দিনযাপন করতেছি।
মশাবনিয়া বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোঃ আব্দুল হাই বলেন,বিনা বেতনে দশ বছর ধরে পাঠদান করে যাচ্ছি ইতিমধ্যে সরকারী চাকুরীতে আবেদনের বয়স ও পার হয়ে যাওয়াতে নিজেকে এখন খুব অসহায় লাগে। তারপরও আশা একদিন জাতীয়করন হবে এই আশায় দিন প্রহর গুনছি।
হেব্রন পাড়া বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক লাল রাম নোয়াম বম বলেন,মাননীয় প্রধান মন্ত্রী একসময় নিশ্চয় সুদৃষ্টি দিয়ে জাতীয় করন করবেন এই আশায় ২০০৭সাল থেকে বিনাবেতনে কোমল মতি শিক্ষার্থীদের পাঠদান করে যাচ্ছি।
সরেজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে স্কুল সমুহ দেখা যায় অধিকাংশই স্কুল কাচা ঘর টিনশেড অথবা সেমি পাকা তৈরী এবং স্কুলের চতুঃপার্শ্বে ৩কিলোমিটার থেকে ১৫কিলোমিটারের মধ্যে কোন প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই এবং জেলা শহর থেকে কোন কোন স্কুল ১০ কিলোমিটার থেকে ৩০কিলোমিটার আর অন্যান্য স্কুল সমুহ উপজেলা শহর থেকে প্রায় সমান দুরত্বে দুর্গম এলাকায় অবস্থিত।
বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সমুহ হল বান্দরবান সদর উপজেলায়,খমঙখ্যংওয়া বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়,এম্পু পাড়া বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়,মশাবনিয়া বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়,হেব্রন পাড়া বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়,রেনি পাড়া বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, লামা উপজেলায়,নুনারঝিড়ি বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়,মেরেঞ্জা বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়,ধুইল্যা পাড়া বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়,কমিউনিটি সেন্টার বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়,নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা,শৈল শক্তি বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়,ক্যকরোপ জুমখোলা বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়,তিন উপজেলায় ৪৪জন শিক্ষক-শিক্ষিকা কর্মরত আছেন আর ছাত্র-ছাত্রী ১১৯৩ জন অধ্যায়নরত।
গত ৩রা ফেব্রুয়ারী২০১৬সালে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় হতে উপসচিব নুজহাত ইয়াসমিন স্বাক্ষরিত চিঠিতে বান্দরবান জেলার বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জাতীয় করণের বিষয়ে জেলা যাচাই-বাছাই কমিটির মতামত সহ প্রতিবেদন চাওয়ার প্রেক্ষিতে বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয় করণ এবং কর্মরত শিক্ষকগণের চাকুরী সরকারীকরণের বিষয়ে জেলা যাচাই-বাছাই কমিটির সভাপতি তৎকালীন জেলা প্রশাসক (বর্তমানে অতিরিক্ত সচিব)দিলীপ কুমার বণিক এর সভাপতিত্বে ১৭আগষ্ট ২০১৬ সভা অনুষ্টিত হয়। সভায় বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের যাবতীয় তথ্য ছক আকারে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করার সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়।বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা ১১টি বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করনে পদক্ষেপ গ্রহন করার অনুরোধ জানিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মহোদয় বরাবরে গত ১৬ফেব্রুয়ারী ২০১৭ তারিখে চিঠি প্রেরণ করেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি ১১টি বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয় করনের জন্য গত ৩রা সেপ্টেম্বর”২০১৬ তারিখে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী বরাবরে ডিও লেটার এর মাধ্যমে অনুরোধ জানিয়েছিলেন।
এগারটি বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জাতীয়করণের অগ্রগতি সম্পর্কে মূঠোফোনে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শফিউল আলম এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন ১১টি বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সম্পর্কে তিনি অবগত নন। নথিপত্র দেখতে হবে। তিনি এ ব্যাপারে আর কিছু বলতে নারাজ।
বান্দরবান জেলা অন্যান্য জেলার তুলনায় শিক্ষা-দীক্ষায় সবচেয়ে অনগ্রসর। ভৌগলিকগত কারনে দুর্গম এলাকার একটি পাড়া থেকে আর একটির দুরত্ব অনেক বেশী।<সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসী ও ১১টি বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ স্কুল সমুহ কে মানবিক কারনে জাতীয়করন করার জন্য মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর নিকট আকুল আবেদন জানিয়েছে।