কুতুবদিয়া(কক্সবাজার)প্রতিনিধিঃ বাংলাদেশের দক্ষিণের উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার উপকূলের কুতুবদিয়া,মহেশখালী সহ সংশ্লিষ্ট উপকূলবর্তী অঞ্চলের জেলেরা বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে নেমেই জলদস্যুদের তাণ্ডবে চরম বিপাকে পড়েছে।
গত এক সপ্তাহ ধরে ফিশিং ট্রলার নিয়ে জেলেরা গভীর সাগরে মাছ ধরার জন্য যায়। মাছ ধরারত অবস্থায় গভীর সাগরে ও উপকূলের নিকটবর্তী এলাকায় ডাকাতি করে বেড়াচ্ছে কয়েকটি জলদস্যু দল। সীতাকুন্ড হতে সেন্টমার্টিন পর্যন্ত বিস্তীর্ণ উপকূল জুড়ে যে সব জেলেরা সাগরে মাছ ধরতে নেমেছে অধিকাংশ জেলেদের কপালে জুটেছে দুর্দশা৷ এমনিতে সাগরে মাছের উপস্থিতি না থাকায় হতাশ জেলেরা তার উপর ডাকাতের উপদ্রব যেন মরার উপর খারার ঘা৷
একটি বিশেষ সূত্র জানায়,ছনুয়ার-মাহবুব, পেকুয়ার- মনছুর, সোলতান সহ একদল জলদস্যুর সাথে কুতুবদিয়া উপকূলের-রাসেল, আবদুল হামিদ ওরফে বড় কালু, মামুন, সোহাগ, বাতেন ওরফে কায়সার, হাসান ওরফে বাঁড়ি হাসান, ছোটন সহ একটি দল শক্তি বৃদ্ধি করে ডাকাতিতে সক্রিয় হয়েছে৷ তাদের সমন্বয়কারী হিসেবে রাসেল ও বড় কালু ভূমিকা রাখে বলে জানা যায়৷ এছাড়া আনোয়ারা,গহিরা,মহেশখালী,বাঁশখালী,বদরখালীর ডাকাত সদস্যরা ও সক্রিয়ভাবে সাগরে ডাকাতি চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানায় সূত্র৷
গভীর সাগর ও উপকূলের তীরবর্তী এলাকায় গত দুই দিনে কুতুবদিয়া, বাঁশখালী,পেকুয়া,চকরিয়া, মহেশখালী, কক্সবাজার সদর,উখিয়া, টেকনাফ উপকূলের অর্ধশত ফিশিং ট্রলার ডাকাতের কবলে পড়ে। এ সময় জলদস্যুরা অন্তত অর্ধ শতাধিক জেলেকে অপহরণ পূর্বক মুক্তিপণ দাবীর খবর পাওয়া গেছে।
বাঁশখালী উপকূলের ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদু শুক্কুর জানান, বাঁশখালী জলদী এলাকার তৈয়ব কোম্পানীর এফবি আল্লার দান,শেকেরখীল এলাকার এফবি হাজি আনোয়ার-১,মানিক মাঝির এফবি মায়ের দোয়া-২৪৬ এ তিনটি ফিশিং ট্রলার থেকে জলদস্যুরা জাহাঙ্গীর মাঝি,আকতার হোসেন ড্রাইভার,মোঃ হানিফ মাঝি, মোঃ হাসেম,জাকের হোসেন,সাহাব উদ্দিন ড্রাইভার,আজগর মাঝিসহ বিভিন্ন ট্রলার থেকে মুক্তিপণের জন্য অর্ধশতাধিক জেলেকে জলদস্যুদের ট্রলারে আটক রেখে তাদের জিম্মায় জেলেদের মোবাইল নাম্বার থেকে মুক্তিপণ দাবী করে যাচ্ছে ট্রলার মালিকদের নিকট।
জলদস্যুদের কবল থেকে ফিরে আসা মানিক মাঝির সাথে কথা হলে তিনি জানান, জলদস্যুরা কুতুবদিয়া উপকূলের একটি ট্রলার যোগে সাগরে এসে এক একটি ট্রলার ধরে মাছ, জাল, মালামাল লুট করে দুই/চার জন জেলে তাদের ট্রলারে তুলে নিয়ে বাকি জেলেদের নৌকাসহ ছেড়ে দেয়। জলদস্যুদের হাতে আটক জেলেদের ছেড়ে দিতে জলদস্যুরা প্রতি ট্রলারের জেলে মুক্তি দিতে ৫/৬ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবী করে আসতেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী জলদস্যুর কবল থেকে ফিরে আসা জেলে মনছুর আলম জানান,গত ৩১ জুলাই বাঁশখালী উপকূল হতে তারা মাছ ধরার জন্য গভীর সাগরে যায়। এক সপ্তাহ পর শনিবার(৭ আগস্ট) মাছ ধরে উপকূলে ফিরে আসার পথে মহেশখালী দ্বীপের সোনাদিয়া উপকূলের অদূরে পৌছলে শতাধিক জলদস্যু তাদের ব্যবহৃত ৪টি ট্রলার নিয়ে যৌথ মহড়া দিয়ে তাদের ট্রলারের উপর হামলা চালিয়ে মাছ,জাল, মূল্যবান মালামাল লুট করে প্রতি ট্রারের মাঝি, ড্রাইভার,জেলে তুলে নিয়ে আটক রেখে অনেক ট্রলার ছেড়ে দেয়। তিনি ধারণা করেন, জলদস্যুরা মহেশখালী,কুতুবদিয়া, বাঁশখালী, চকরিয়া, পেকুয়া, হাতিয়ার হতে পারে।
কুতুবদিয়া উপজেলা মৎস্যজীবি ফেড়ারেশনের সভাপতি আবুল কালাম বলেন, গত কয়েকদিন ধরে জলদস্যুরা চরম উত্তেজিত হয়ে সাগরে ডাকাতি করে বেড়াচ্ছে।বড়ঘোপ আমজাখালী গ্রামের এফবি মায়ের দোয়া, এফবি সাগর কন্যা, আলী আকবর ডেইল এলাকার এফবি কুতুব ফিশিং ট্রলার জলদস্যুদের কবলে পড়লে মাছ, জাল মূল্যবান মালামাল লুট করে।
বিগত তিন বছর পূর্বে উপকূলে আইনশৃংখলা বাহিনীর অভিযানে জলদস্যু, ইয়াবাকাবারিদের জিরো টলারেন্সে নিয়ে আসছিল। সাবেক ওসি দিদারুল ফেরদাউস কুতুবদিয়া উপকূলের জলদস্যুদের আটক এবং আত্মসমর্পণ করিয়ে জলদস্যু শুন্য থানা ঘোষনা করছিলেন। ইদানিং জলদস্যুরা আবারও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
তিনি আরো জানান, এরিমধ্যে অপহৃত মায়ের দোয়া ফিশিং ট্রলারটি ইঞ্জিন বিকল অবস্থায় সাগরে ভাসমান পাওয়া গেছে সোনাদিয়া উপকূলের কাছাকাছি তবে দাবিকৃত টাকা না দেওয়ায় বোটের সকল সরঞ্জামাদি নিয়ে নিয়েছে ডাকাতরা৷
কোস্ট গার্ড কুতুবদিয়া কন্টিজেন্ট অফিস সূত্রে জানা গেছে, জলদস্যুতার খবর পেয়ে সাগরে তাদের টহল জোরদার রেখেছে। শুক্রবার (৬ আগস্ট) দুপুরে বাঁশখালী শেকেরখীল তৈয়ব কোম্পানীর এফবি আল্লাহর দান ফিশিং ট্রলারটি ১৭ জন জেলে নিয়ে সাগরে সাঙ্গু গ্যাস ফিল্ড এলাকায় ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার করে। নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ডের দুইটি জাহাজ বর্তমানে সাগরে টহলরত আছে।
এব্যাপারে কুতুবদিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ ওমর হায়দার বলেন, আমাদের লক্ষ্য ডাকাত ও মাদক মুক্ত কুতুবদিয়া গড়ার৷ সাগরে বোট ডাকাতির বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে এবং ডাকাতি বন্ধ ও ডাকাতদের ধরার লক্ষ্যে ব্যাপকভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি৷ আশাকরি কয়েকদিনের মধ্যেই সেটা নিয়ন্ত্রণে আমরা সক্ষম হব ইনশাআল্লাহ।