পাহাড়কন্ঠ ডেস্কঃ নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানার নয়াহাট এলাকায় একটি পোশাক কারখানায় গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)-এর জন্য তৈরিকৃত ২০ হাজার ৩০০ পিস ইউনিফর্ম জব্দ করেছে পুলিশ। এসময় কারখানা মালিকসহ তিনজন কে আটক করেছে পুলিশ।
গত ১৭ মে (শনিবার) রাতে ‘রিংভো অ্যাপারেলস’ নামের ওই পোশাক কারখানায় এই অভিযান চালায় নগর গোয়েন্দা পুলিশ। অভিযানে কারখানার মালিক সাহেদুল ইসলামসহ গোলাম আজম ও নিয়াজ হায়দার নামের তিন ব্যক্তিকে আটক করে পুলিশ।
বিভিন্ন মাধ্যমে ৮ দিন পর ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে রোববার (২৫ মে), তবে এখনো পর্যন্ত চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি এইবিষয়ে। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা।
১৮ মে বায়েজিদ থানায় নগর গোয়েন্দা পুলিশের এসআই ইকবাল হোসেন বাদী হয়ে চারজনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন বলে জানাযায়। এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত মার্চে গোলাম আজম ও নিয়াজ হায়দার কেএনএফ সদস্য মংহলাসিন মারমা ওরফে ‘মং’-এর কাছ থেকে প্রায় দুই কোটি টাকার বিনিময়ে ইউনিফর্ম তৈরির এই চুক্তি নেন। কেএনএফ সদস্যরাই ইউনিফর্ম তৈরির কাপড় সরবরাহ করে, আর মে মাসে পোশাক হস্তান্তরের কথা ছিল।
উক্ত ঘটনায় কারখানাটির সকল কার্যক্রম, ব্যাংক লেনদেন এবং সংশ্লিষ্টদের যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গভীরভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। চট্টগ্রামের মতো বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ শহরে এমন গোপন কার্যক্রম কেএনএফ-এর অপারেশনাল সক্ষমতার নতুন মাত্রা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত
২০২৪ সালে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) পার্বত্য জেলা বান্দরবানের রুমা, থানচি ও রোয়াংছড়ি উপজেলা ও রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ি উপজেলায় সক্রিয় একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী। সংগঠনটি ‘স্বাধীন রাজ্য’ গঠনের দাবি নিয়ে তাদের সন্ত্রাসী কাযর্ক্রম চালিয়ে যাচ্ছে, যা খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের বম জনগোষ্ঠীর কিছু মানুষ প্রতিনিধিত্ব করে।
২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে বান্দরবান জেলার রুমা উপজেলা ও থানচি উপজেলায় ব্যাংক ডাকাতি এবং ব্যাংক ম্যানেজার কে অপহরণের ঘটনায় আবার সবার সামনে চলে আসে এই সশস্ত্র সংঘটনের নাম। এরপর থেকেই কে-এন-এফ-এর বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী, র্যাব ও পুলিশের একাধিক অভিযান হয়েছে গ্রেফতার করা হয়েছে ২০০ এর বেশি সদস্যকে। তাদের বিরুদ্ধে সরকারি স্থাপনায় হামলা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর গুলিবর্ষণ, চাঁদাবাজি, এবং পার্বত্য এলাকায় মাদক ও অস্ত্র পাচারের অভিযোগ রয়েছে।
গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, কেএনএফ এর কিছুদিন আগে জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়ার সঙ্গে মিলে পার্বত্য অঞ্চলে যৌথ ট্রেনিং ক্যাম্প পরিচালনা করছিল। তবে বর্তমানে এই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বিভাজন হয়েছে এবং কেএনএফ এখন স্বাধীনভাবে অস্ত্র ও লজিস্টিক সংগ্রহে মনোযোগী হয়েছে।