রুমা প্রতিনিধিঃ বান্দরানের রুমা উপজেলার পাইন্দু ইউনিয়নে কোন কাজ না করে প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ এর অভিযোগ উঠেছে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। এছাড়াও সৌর বিদ্যুতের ব্যবস্থা করে দিবেন বলে বৌদ্ধ বিহারের দানবাক্সের টাকা আত্মসাত করেছেন উহ্লামং মারমা নামক এই ইউপি চেয়ারম্যান। এনিয়ে প্রকল্প এলাকার স্থানীয় লোকজনের মধ্যে চাপা ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। আরো অভিযোগ আছে গীর্জার জন্য বরাদ্দকৃত সোলার আত্মসাত সহ অসংখ্য অনিয়মের।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গ্রামীন অবকাঠামো সংস্কার দাবি ট্রাস্ট কর্মসূচির আওতায় বান্দরবানের রুমার পাইন্দু ইউনিয়ন পরিষদের অনুকূলে ৬ লক্ষ ৬৩ হাজার ২৪৮ টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়। এর মধ্যে দুই লক্ষ ৭৩ হাজার ২৪৮ টাকা ব্যয়ে চাইরাগ্র পাড়া হতে সেঙ্গুম পাড়া পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এই প্রকল্পের সভাপতি ও ১নং পাইন্দু ইউপি চেয়ারম্যান উহ্লামং মারমা গত ৩০ জুনের আগে প্রকল্পের সব টাকা উত্তোলন করে নেন।
গত শুক্রবার দুপুরে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চাইরাগ্র পাড়া হতে সেঙ্গুম পাড়া যাওয়ার এই রাস্তাটি চলাচলের অনুপযুক্ত হয়ে গেছে। রাস্তাটি সংস্কারের অভাবে ঝোপ জঙ্গলে ভরে গিয়ে চলাচলের অনুপযুক্ত হয়ে যায়।
পায়ে হেঁটে রাস্তাটি সরে জমিনে দেখতে গিয়ে কথা হয় চাইরাগ্র পাড়া কারবারী (পাড়া প্রধান) মংচ মারমা’র সাথে। তিনি বলেন, গত এক বছর ধরে চাইরাগ্র পাড়া হতে সেংগুম পাড়ার এ রাস্তায় সরকারি কিংবা বেসরকারি কোন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে মাটিকাটা, জঙ্গল কাটা কিংবা কোন ধরণের সংস্কারের কাজ করা হয়নি। এ রাস্তা উন্নয়নের জন্য সরকারি বেসরকারি কোন প্রতিষ্ঠান থেকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে কিনা এ ব্যাপারে জানেন না বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন।
এদিকে সেঙ্গুম পাড়ার কারবারী মংওয়ে মার্মা বলেছেন, কেউ একজন এই রাস্তা সংস্কারের জন্য বরাদ্দ দেয়ার কথা তাকে জানিয়েছেন। তবে কোথা থেকে কত টাকা বরাদ্দ হয়েছে তা তিনি জানতেন না।
তিনি অভিযোগ করেন, গত বছর পাড়ার বৌদ্ধ বিহারের নামে একটি সৌরবিদ্যুৎ (সোলার) দিবেন বলে নগদ তিন হাজার টাকা নেন ১নং পাইন্দু ইউপি চেয়ারম্যান উহ্লামং মারমা। অনেক আশা নিয়ে ওই টাকা বিহার কমিটির সদস্য ও ভিক্ষুদের সাথে পরামর্শ করে বৌদ্ধ বিহারের দান বাক্স ভেঙ্গে চেয়ারম্যানকে দেয়। কিন্তু নানা অজুহাতে সৌরবিদ্যুৎ দেয়া হয়নি। এ অবস্থায় সম্প্রতি একদিন রুমা বাজারে গিয়ে একটি দোকানে দেখা করে চেয়ারম্যানের নিকট জানতে চাওয়া হয়, বৌদ্ধ বিহারের নামে কবে নাগাদ সোলার বরাদ্দ দেয়া হবে? পাড়া কারবারীর এমন প্রশ্নে খানিকটা বিব্রত হন পাইন্দূ ইউপি চেয়ারম্যান উহ্লামং মারমা। তখন চেয়ারম্যান নিজের অপকর্ম ঢাকতে সোলার বা রাস্তা সংস্কারের পরিবর্তে আগামী আশ্বিনী পূর্ণিমার আগে জেনারেটর বিতরণ করা হবে বলে আশ্বাস প্রদান করেন। বৌদ্ধ বিহারের দান বাক্সের টাকার অবমূল্যায়ন ও অবমাননা করা হয়েছে উল্লেখ করে মংওয়ে মার্মা (কারবারী) বলেন, চেয়ারম্যানের এসব ওয়াদা প্রতিশ্রুতির কথা বিশ্বাসযোগ্য না। তাই চেয়ারম্যানকে বলে এসেছিলেন, জেনারেটরের আর প্রয়োজন নেই, বিহারের দান বাক্স থেকে নিয়ে যাওয়া টাকা ফেরত দিতে।
এক প্রশ্নের জবাবে সেঙ্গুম পাড়া প্রধান (কারবারী) মংওয়ে মার্মা বলেন, রাস্তা সংস্কারের টাকা আত্মসাত বা বিহারের দানবাক্সের টাকা আত্মসাত নিয়ে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিতে চাননা। কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, পূর্বে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বহু অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ দিয়েছিলেন এলাকাবাসীরা। কিন্তু প্রশাসন শেষ পর্যায়ে নিরবে জনপ্রতিনিধির পক্ষ হয়ে যাওয়ায় কোনো সুবিচার বা কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত পাইন্দু ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, পাড়াবাসীর পরামর্শ ও চাহিদা মোতাবেক প্রকল্পের টাকা থেকে বৌদ্ধ বিহারের জন্য জেনারেটর কিনে দেয়া হবে। রাস্তা সংস্কারের জন্য আরো ৩০ হাজার টাকা পাড়াবাসীকে দেয়া হবে, এ বিষয়ে পাড়া প্রধান মংওয়ে মার্মার সাথে কথা হয়েছে। আর পাড়া বাসী যদি শুধু রাস্তা সংস্কার চায়, সব টাকা রাস্তা সংস্কারের জন্য দিয়ে দেবেন বলে উল্লেখ করেন তিনি। যদিও তার এ বক্তব্যের পদ্ধতিগত কোন ভিত্তি নেই এবং তার এ বক্তব্যের সাথে এলাকাবাসী বা কারবারীর বক্তব্যের কোন মিল পাওয়া যায়নি।
বিষয়টির বিস্তারিত জানতে মুঠোফোনে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার নাম্বারে একাধিকবার কল দিলে বন্ধ পাওয়ায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। তবে তার অফিসের প্রতিনিধি জীবংকর চাকমা বলেছেন, যদি প্রকল্পের কাজ না করে থাকে, সরেজমিনে পরিদর্শন করে বাস্তবায়ন করা
নো হবে।