কাশ্মীরের শ্রমিক সঙ্কটে বাগানেই পচছে আপেল
পাহাড় কন্ঠ ডেস্ক:
-
প্রকাশিতঃ
শনিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০১৯
-
১২২৭
জন নিউজটি পড়েছেন
আপেল কাশ্মীর উপত্যকার অন্যতম অর্থকরী ফল। কাশ্মীরের নিচু পাহাড়গুলোর ভাঁজে ভাঁজে রোদ-ছায়ার খেলা লাল সবুজ আপেলের মিতালি দেখতে সত্যিই মনোরম। কাশ্মীরি ভাষায় আপেলকে বলা হয় ‘চুঁওট’। শীতল আবহাওয়ায় এর ফলন হয় বলে একে বলা হয় টেম্পরেচার ফ্রুটস । আগস্টের শুরুতেই দু’একটা গাছে আপেল পাকা শরু হয় । আগস্ট থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত গাছ পাকা তাজা আপেল কেনা যায় কাশ্মীরের বাজারগুলোতে।
বর্তমান পরিস্থিতি ভিন্ন,বাগানে ঝড়ে পড়ছে কোটি টাকার আপেল। সবুজ বাগানে রক্তের ছোপ ছোপ দাগ, দূর থেকে দেখলে প্রথমে এমনই মনে হবে। তবে কাছে গেলেই সেই ভুল ভাঙবে। রক্ত নয়, লাল রঙের আপেল ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে সারা বাগানের জমিতে। বর্তমানে এমন দৃশ্যই চোখে পড়ছে ভারতের কাশ্মীরে।
এ নিয়ে বাগান-মালিক আমির হুসেনের গলায় হতাশা। তিনি বলেন, রস জমলেই আপেল ভারী হয়ে গাছ থেকে পড়ে যায়। আর মাটিতে পড়লেই সব নষ্ট। সেটি আর বিক্রি হবে না। কিন্তু এ বছর ফল পাড়ারই লোক নেই। বেচবই বা কোথায়?
কাশ্মীরের আপেল বাগানে এ বার সত্যিই রক্তের দাগ। ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ হওয়ার পর ১০০ দিন কেটে গেছে। প্রথমে ছিল কার্ফু। কার্ফু শিথিল হতে জঙ্গিরা পোস্টার সেঁটে হুঁশিয়ারি দেয়, এ বছর আপেল ব্যবসা বন্ধ থাকবে। এ দিকে কাশ্মীরের ‘অ্যাপল সিটি’ শোপিয়ানের গাছে গাছে লাল-সবুজ-সোনালি রঙের আপেল আসতে শুরু করেছে। আমির হুসেনের কপালে তখন থেকেই চিন্তার ভাঁজ পড়েছিল। এ বার আপেল বিক্রি হবে তো? কিন্তু শোপিয়ানের আপেলে যে রক্তের ছিটে লাগবে, তা আমিরও ভাবেননি।
আপেল চাষি মহম্মদ আশরফ দারের হত্যা দিয়ে শুরু। এর পর শোপিয়ানেই রাজস্থানের ট্রাকচালক মহম্মদ শরিফ খান জঙ্গিদের হাতে খুন হন। তারপর ফের শোপিয়ানেই আপেল ব্যবসায়ীর ওপরে হামলায় মারা যান পঞ্জাবের চরণজিৎ সিং। জঙ্গিরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ১৮ জন অন্য রাজ্যের শ্রমিককেও বন্দুকের সামনে লাইন দিয়ে দাঁড় করিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত অবশ্য কাশ্মীর ছেড়ে পালানোর হুঁশিয়ারি দিয়ে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু পুলওয়ামায় ইটভাটার শ্রমিক সেন্থি কুমার বা মুর্শিদাবাদ থেকে কুলগামে রাজমিস্ত্রির কাজ করতে যাওয়া পাঁচ বাঙালি শ্রমিক রক্ষা পাননি। সাদারণত অন্য রাজ্যের শ্রমিকরাই কাশ্মীরের বাগানে আপেল পাড়ার কাজ করেন। প্রাণের ভয়ে তারা কাশ্মীর ছাড়তে শুরু করায় আপেল পাড়ারই লোক নেই। তাই বউ-ছেলেকে নিয়ে আমির নিজেই হাত লাগিয়েছেন।
প্রায় দু’খানা ফুটবল মাঠের সমান শোপিয়ানের বিশাল আপেল মান্ডি অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকেই গমগম করে। বিভিন্ন রাজ্য থেকে ব্যবসায়ীরা আসতে শুরু করেন। শোপিয়ান ছাড়াও পুলওয়ামা, বিজবেহরা, সোপোর-এর আপেল এসে জমা হয় এই পাইকারি বাজারে। দিনে অন্তত ৩০০ ট্রাক আপেল রওনা হয় দেশ-বিদেশে।
তবে বর্তমানে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। শুনশান মান্ডিতে ধুলো উড়ছে। ৫ অাগস্টের পর থেকে এক ট্রাক আপেলও বের হয়নি। জঙ্গিদের ভয়ে আপেল চাষি বা ব্যবসায়ী কেউই মান্ডির পথ মাড়াচ্ছেন না। ৮০ টাকা কেজি দামের কাশ্মীরের সেরা আপেল ২৫-৩০ টাকা দরে বেচে দিতে হচ্ছে রাতের অন্ধকারে।
আপেল ব্যবসায়ী নাজির আহমেদ জানান, গত বছরও কলকাতায় ‘এ-গ্রেড’ আপেল পাঠিয়েছেন। তিনি আফসোস করে বলেন, কাশ্মীরে জঙ্গি আন্দোলন তো চলছে নব্বইয়ের দশক থেকে। ২০০৮, ২০১০ সালেও অশান্তি হয়েছে। ২০১৬ সালে বুরহান ওয়ানি মারা যাওয়ার পরেও সব বন্ধ ছিল। কিন্তু তখনও আপেল ব্যবসায় ধাক্কা লাগেনি।
তবে এবার শুধু আপেল নয়, ৩৭০ রদের ধাক্কা লেগেছে পর্যটন থেকে হস্তশিল্প, ফলের রস থেকে তথ্যপ্রযুক্তি— কাশ্মীরের অর্থনীতির সব ক্ষেত্রেই। কাশ্মীর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ়ের সভাপতি শেখ আশিক বলেন, গত ১০০ দিনে ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। কাজ হারিয়েছেন অন্তত ১ লাখ মানুষ।
নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন
এই ক্যাটাগরির আর নিউজ