সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে স্থগিত দুই কেন্দ্র— নগরীর ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের গাজী বুরহান উদ্দিন গরম দেওয়ান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের হবিনন্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে পুনরায় ভোট গ্রহণ করা হচ্ছে।
শনিবার সকাল ৮টায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে, যা একটানা চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। ভোট গ্রহণের পর গণনা শেষে মেয়র পদে বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে।
নগরীর ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের হবিনন্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র এলাকায় শনিবার সকাল থেকে ভারী বৃষ্টি হয়। তবে বৃষ্টির মাঝেও ছাতা মাথায় নারী ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে গিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।
প্রিসাইডিং অফিসার মাহবুবুর রহমান জানান, সকাল ১০টা পর্যন্ত ভোট কেন্দ্রের আটটি কক্ষে প্রায় দুইশ’ ভোট পড়েছে।
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার পরিতোষ ঘোষ জানান, শান্তিপূর্ণভাবে দুই কেন্দ্রে ভোট চলছে। ভোট কেন্দ্রগুলোতে এবার বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
এদিকে হবিনন্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের চার এজেন্টকে বের করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এদের মধ্যে একজন সতন্ত্র মেয়র প্রার্থীর (জামায়াত) এবং বাকি তিন কাউন্সিলর প্রার্থীদের এজেন্ট ছিলেন।
এ বিষয়ে প্রিজাইডিং অফিসার জানান, নিয়ম অনুযায়ী, এজেন্ট হতে হলে এই কেন্দ্রের ভোটার হতে হবে। কিন্তু চারজনের কেউই এই কেন্দ্রের ভোটার না হওয়ায় তাদের বের করে দেওয়া হয়েছে।
গত ৩০ জুলাই সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট গ্রহণ করা হয়। এতে ১৩৪টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৩২টি কেন্দ্রের ফলে এগিয়ে রয়েছেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের চেয়ে ৪ হাজার ৬২৬ ভোটে এগিয়ে আছেন তিনি। ১৩২টি কেন্দ্রের ভোট গণনায় আরিফুল হক চৌধুরী ৯০ হাজার ৪৯৬ ভোট এবং বদর উদ্দিন আহমদ কামরান ৮৫ হাজার ৮৭০ ভোট পেয়েছেন।
শনিবার যে দুটি কেন্দ্রে পুনরায় ভোটগ্রহণ হচ্ছে, তাতে মোট চার হাজার ৭৮৭ ভোটের মধ্যে মাত্র ৮১ ভোট পেলেই মেয়র পদ ধরে রাখতে সমর্থ হবেন আরিফুল হক। তবে এই দুটি কেন্দ্রের মোট ভোটারের মধ্যে মারা যাওয়ায় ও প্রবাসে থাকায় ৩০১ জন ভোট দিতে পারবেন না বলে দাবি করেছেন তিনি।
গত বৃহস্পতিবার আরিফুল হক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে. এম. নুরুল হুদার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে মৃত ও প্রবাসীদের ভোট ঠেকানোর আহ্বান জানিয়েছেন। এমন হলে শনিবার আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরান স্থগিত দুটি কেন্দ্রের সব ভোট পেলেও প্রতিদ্বন্দ্বী থেকে ১৪০ ভোটে পিছিয়ে থাকবেন।
৩০ জুলাই সিলেট নির্বাচনের ভোট চলাকালে গোলযোগের কারণে নগরীর ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের গাজী বুরহান উদ্দিন গরম দেওয়ান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের হবিনন্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছিল। শনিবার মেয়র পদের পাশাপাশি এই দুই কেন্দ্রে সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদেও ভোটগ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আলীমুজ্জামান।
নগরীর ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে তিনজন এবং ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে চারজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এই দুটি কেন্দ্রের জন্য সংরক্ষিত ৮ নম্বর ওয়ার্ডের পাঁচজন নারী এবং সংরক্ষিত ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ৮ জন নারী প্রার্থীর ভাগ্য ঝুলে আছে।
এ ছাড়া সংরক্ষিত ৭ নম্বর (সাধারণ ওয়ার্ড ১৯, ২০ ও ২১) ওয়ার্ডের ১৪টি কেন্দ্রে ভোট গণনা শেষে প্রার্থী নাজনীন আক্তার কনা ও নার্গিস সুলতানার ভোট সমান হওয়ায় তাদের মধ্যেও পুনরায় ভোট অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ৩০ জুলাই অনুষ্ঠিত ভোটে তারা দু’জনেই সমান চার হাজার ১৫৫ ভোট পেয়েছেন।
এই ওয়ার্ডগুলোতে সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণের জন্য সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। তিনি বলেন, পুলিশ, র্যাব ও আনসারের পাশাপাশি দুই প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। এ ছাড়া নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে আছে।
প্রসঙ্গত, সিলেট সিটি নির্বাচনে এবারে মোট ভোটার সংখ্যা তিন লাখ ২১ হাজার ৭৩২ জন; যাদের মেয়র পদে এখন পর্যন্ত ভোট দিয়েছেন এক লাখ ৯৮ হাজার ৬৫৬ জন। অন্যদিকে মেয়র পদে সাতজন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৯৬ জন এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৬২ জন প্রার্থী হয়েছিলেন।