প্লেব্যাক সম্রাট খ্যাত কিংবদন্তী গায়ক এই গায়ক গেয়েছিলেন ‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে, রইব না আর বেশি দিন তোদের মাজারে’এ গানে চোখে পানি আসেনি বা আবেগ তাড়িত হননি এমন মানুষ খুব কমই আছে। গানের কথাগুলির মতোই আজ চলে গেলেন কিংবদন্তী গায়ক এ্যান্ড্রূ কিশোর। সবাইকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে চলে গেলেন ওপারে।
প্লেব্যাক সম্রাট খ্যাত এ শিল্পীর ‘আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি’ ‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস দম ফুরাইলে ঠুস’ ‘জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প’ ‘পৃথিবীর যত সুখ আমি তোমার ছুঁয়াতে খুঁজে পেয়েছি’এ ধরনের গানগুলি বাংলাদেশের গানের জগতকে পাল্টে দেয়।আট বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্ত এই কিংবদন্তিগায়ক। সূরের মূর্ছনায় গান পাগল অগণিত মানুষ তার কণ্ঠের যাদুতে বিমোহিত হয়ে নিজেরাই গুণগুণ করে গাইতে থাকে, তার মৃত্যুতে বাংলা প্লেব্যাক গানের একটি ইতিহাসের সমাপ্তি ঘটল।
এ্যান্ড্রূ কিশোর দীর্ঘদিন ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন তিনি,সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে দীর্ঘ চিকিৎসা শেষে ৯ মাস পর গত ১১ জুন সিঙ্গাপুর থেকে দেশে আসেন। কিন্তু ক্যান্সারের কাছে তাকে হার মানতে হল।রাজশাহীতে তার বোনের বাসায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
কিংবদন্তী এ শিল্পীর জন্ম ৪ নভেম্বর, ১৯৫৫ সালে রাজশাহীতে। সেখানেই কেটেছে তার শৈশব ও কৈশোর। এন্ড্রু কিশোর প্রাথমিকভাবে সংগীতের পাঠ শুরু করেন রাজশাহীর আবদুল আজিজ বাচ্চুর কাছে। একসময় গানের নেশায় রাজধানীতে ছুটে আসেন। মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলসংগীত, আধুনিক গান, লোকগান ও দেশাত্মবোধক গানে রেডিওর তালিকাভুক্ত শিল্পী হন।
১৯৭৭ সালে আলম খানের সুরে ‘মেইল ট্রেন’ চলচ্চিত্রে ‘অচিনপুরের রাজকুমারী নেই যে তাঁর কেউ’ গানের মধ্য দিয়ে এ্যন্ড্রু কিশোরের চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক যাত্রা শুরু হয়। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। তার রেকর্ডকৃত দ্বিতীয় গান বাদল রহমান পরিচালিত এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী চলচ্চিত্রের ‘ধুম ধাড়াক্কা’। এন্ড্রু কিশোর বাংলা চলচ্চিত্রের সর্বাধিক ১৫ হাজার গান গাওয়া শিল্পী। চলচ্চিত্রে তার চেয়ে বেশি জনপ্রিয় গান আর কারও নেই।
তার গাওয়া উল্লেখযোগ্য আরও গানের মধ্যে রয়েছে ‘আমার বুকের মধ্যে খানে’ ‘আমার বাবার মুখে প্রথম যেদিন শুনেছিলাম গান’ ‘ভেঙেছে পিঞ্জর মেলেছে ডানা’ ‘সবাই তো ভালোবাসা চায়’ ‘পড়ে না চোখের পলক’ ‘পদ্মপাতার পানি’ ‘ওগো বিদেশিনী’ ‘তুমি মোর জীবনের ভাবনা’ ‘আমি চিরকাল প্রেমের কাঙাল’ প্রভৃতি।