এস এম নাসিম : বান্দরবানের পাহাড়ি এলাকায় জুমভিত্তিক চাষাবাদ নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসছেন পাহাড়িরা। পাহাড়ি অঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হওয়ার কারণে বেড়েছে কফি, কাজুবাদামসহ বিভিন্ন অর্থকরী ফসলের আবাদ। প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে সৃষ্টি হয়েছে উৎপাদিত পণ্যের বাজার ও ফল-ফসলের ব্যাপক ফলন। সম্প্রতি, আমদানি নির্ভর এ ফলটি পাহাড়ের জুম চাষিদের নতুন স্বপ্ন দেখাচ্ছে।
সংরক্ষণে সমস্যা সমাধান আর উৎপাদনের পর খাওয়ার উপযোগী করে প্রস্তুতকরণ করতে পারলেই খুব শিগগিরই পাহাড়েকাজু ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তোলা সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
গত দুই বছরে বান্দরবান জেলার রুমা ও থানচি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অন্য ফসলের পাশাপাশি ব্যাপকহারে বাণিজ্যিকভাবে কাজুবাদাম চাষাবাদ বেড়েছে।
স্থানীয় লোকজন জনান, ‘পূর্বের তুলনায় বর্তমানে কাজুবাদামের দাম বেড়েছে কয়েকগুন। তখন দাম ছিল ২০-২৫ টাকা কেজি। ২০১৬ সালের পর সেই দাম গিয়ে ঠেকেছে কেজি প্রতি ১২৫ টাকা পর্যন্ত। অথচ এই কাজু সাধারণ মানুষকে কিনতে হয় কেজি প্রতি ১২শ থেকে ২ হাজার টাকা দরে।
স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর অফিস সুত্রে জানায়, কাজুবাদামের রোগ-বালাইও কম। আর একটি গাছে জাতভেদে ৪ থেকে ৪০ কেজি পর্যন্ত বাদাম হয়। সাধারণত পেকে নিচে পড়ে গেলে সংগ্রহ করে শুকানো হয়। আর শুকালে ১ বছর রাখা সম্ভব।’ পোস্ট প্রসেসিংয়ের কাজ করা যায় না বলে পাইকাররা ভারত, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম প্রভৃতি দেশে রপ্তানি করেন। আবার প্রসেসিং হয়ে আমাদেরেই এগুলো কিনতে হয় কয়েক গুণ বেশি দামে। তাই মন্ত্রণালয় প্রসেসিং মেশিনের ও ইন্ড্রাস্ট্রি তৈরির বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে।
কাজুবাদাম ও কফি গবেষণা, উন্নয়ন ওসম্প্রসারণ প্রকল্পের মনিটরিং কর্মকর্তা মো: রেজাউল করিম রতন জানান, কাজু বাদাম একটি বিদেশি ফল। দেশে পাহাড়ি অঞ্চলে এই ফলের চাষ হয়ে থাকে। বান্দরবান জেলার রুমা ও থানচি উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ে কাজু বাদামের চাষ হয়েছে, অফিসের পক্ষ থেকে প্রদর্শনী প্লটও করা হয়েছে। এই উপজেলায় কাজু বাদাম চাষের বিস্তার ঘটার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান এ কর্মকর্তা।
কাজুবাদাম ও কফি গবেষণা উন্নয়ন ওসম্প্রসারণ প্রকল্পের পরিচালক কৃষিবিধ শহিদুল ইসলাম জানান, পাহাড়ি মাটি, আবহাওয়া সবই কাজুবাদাম চাষের বিশেষ উপযোগী। তাছাড়া পরিচর্যা ও উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় অতিরিক্ত কোনো খরচ নেই। জুম চাষিরা আগে একটি পাহাড় পরিষ্কার করলে পরে কয়েকবছর আর সে জমিতে চাষ করতে পারতো না। আমরা পরামর্শ দিচ্ছি ওইসব জমিতে কাজু বাদাম লাগানোর। এতে তারাও লাভবান হচ্ছে। বীজ থেকে চারা হয়। চারা লাগানোর তিন থেকে চার বছরের মধ্যে ফল ধরে। ফেব্রুয়ারি-মার্চে ফুল ধরে। ফল সংগ্রহ করা হয় মে মাসে।