নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বান্দরবানে রোয়াংছড়ি উপজেলায় কেন্দ্রীয় জেতবন বৌদ্ধ বিহারের বিহারাধ্যক্ষ ও পার্বত্য চট্টগ্রামে ৬ষ্টতম সংঘরাজ, বর্ষীয়ান ধর্মীয় গুরু সংঘনায়ক ভদন্ত বিচারিন্দ মহাথের ভান্তের প্রয়াণে, ২৯ ও ৩০মার্চ দু’দিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠানের আয়োজনের মধ্য দিয়ে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
অনুষ্টানে ২৭টি সইং নৃত্য দল (দল বেঁধে সংস্কৃতি নৃত্য), ১৩টি ইঁয়ই নৃত্যদল (দোলনা নৃত্য) এবং ৪শতাধিক ভিক্ষুসংঘের উপস্থিতে লাখ খানেক পূণ্যার্থীর অংশহণে দুদিন ব্যাপী এই অনুষ্টান আয়োজন করা হয়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়। এছাড়াও পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে ৫শতাধিক স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকরা শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত ছিলো,অনুষ্টানে তিন পার্বত্য জেলা কক্সবাজার-চট্টগ্রামসহ সারাদেশ থেকে আগত লাখো পূণ্যার্থী অনুষ্টানে অংশগ্রহণ করবেন বলে প্রত্যাশা করছেন উদযাপন কমিটি।
শনিবার (৩০ মার্চ)বিকালে বৌদ্ধ বিহার প্রাঙ্গনে ডং বাজীর মধ্য দিয়ে বৌদ্ধ ভিক্ষুর মরদেহ পোড়ানো হয়। এই অনুষ্ঠানে হাজরো মানুষ ভিড় জামায় রোয়াংছড়ি উপজেলায়।
জানা যায়, রোয়াংছড়ি উপজেলার কেন্দ্রীয় জেতবন বৌদ্ধ বিহারের বিহারাধ্যক্ষ ভদন্ত বিচারিন্দ মহাথেরোর মৃত্যুর ৬ মাস পর এই বৌদ্ধ ভিক্ষুর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করা হল।২০২৩ সালের পহেলা সেপ্টেম্বর জ্যেষ্ঠ এই বৌদ্ধ ভিক্ষু পরলোক গমন করেন। ঐতিহ্যবাহী রীতিতে বিশেষ প্রক্রিয়ায় এই মৃতদেহ এতদিন কফিনে সংরক্ষণ করা হয়েছিল। এই ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠান দেখতে হাজার হাজার মানুষ ভিড় জমায় অনুষ্ঠান স্থলে।
এদিকে ধর্মসভায় শীল ও ধর্মীয় দেশনা প্রদান করেন নাইক্ষ্যংছড়ি কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ বিহারের বিহারাধ্যক্ষ ভদন্ত আসাবা মহাথের, লংগদু পুনবার্সন পাড়া বৌদ্ধ বিহারের বিহারাধ্যক্ষ ভদন্ত ঞানুত্তরা মহাথের, রামগড় মহামুনি বৌদ্ধ বিহারের বিহারাধ্যক্ষ ভদন্ত সুমনা মহাথের, পার্বত্য ভিক্ষু পরিষদের সাবেক সভাপতি ভদন্ত সমা মহাথের সহ বিভিন্ন বৌদ্ধ বিহারের বিহারাধ্যক্ষরা।
এসময় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রদূত সুপ্রদীপ চাকমা।আরো উপস্থিত ছিলেন,সেনাবাহিনীর রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মেহেদী হাসান,বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা,বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বান্দরবান সেক্টর দপ্তরের কমান্ডার কর্নেল মো. আবুল কালাম শামসুদ্দিন রানা,বান্দরবান সেনা জোনের জোন কমান্ডার লে: কর্নেল এএসএম মাহমুদুল হাসান, পিএসসি, রোয়াংছড়ি সাব জোন কমান্ডার মেজর এম এম ইয়াসিন আজিজ,রোয়াংছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান চহাইমং মারমা সহ ৭শতাধিক বিভিন্ন বৌদ্ধ বিহারের বিহারাধ্যক্ষরা।
প্রসঙ্গতঃ বান্দরবান পার্বত্য জেলার রোয়াংছড়ি উপজেলা রোয়াংছড়ি পাড়ার স্থায়ী বাসিন্দা পিতা মৃত উ সাজাই মারমা ও মাতা মৃত মাথুই মারমা’র ৪ ছেলে ও ১মেয়ের মধ্যে চতুর্থ সন্তান হলেন মংম্রা মারমা যা পরবর্তীতে বৌদ্ধ ধর্মের সন্ন্যাসী ভিক্ষু হলে নাম রাখা হয় ভদন্ত বিচারিন্দ মহাথের। তাঁর অন্যান্য ভাইবোনেরা হলেন উচিংথোয়াই মারমা, গংব্রা মারমা, মংহ্লাচিং মারমা ও একমাত্রবোন মাসংচিং মারমা। মংম্রা মারমা’ ১৯৩৩ সালে রোয়াংছড়ি পাড়ায় জন্ম হয়। ১৯৪৮ সালের ১৫ বছর বয়সে গৃহত্যাগ করে শ্রমণ বা প্রবজ্জ্যা গ্রহণ করেন। ১৯৫৫ সালের ২২ বছর বয়সে ভান্তের দীক্ষা নেন। শ্রমণ্য ধর্মে দীক্ষা নেওয়ার পর মায়ানমার রাজধানী ইয়াঙ্গুন শহরে খারাইক্ষ্যং এ লেখা পড়া করে বসবাস করেন। ভান্তে থাকাকালে থেরো, মহাথেরো ও সংঘনায়ক পদে উপাধি লাভ অর্জন করেন। ভান্তে অবস্থায় ৬৮ বছর বষার্বাস বা ওয়া ছিলেন। তিনি ৭০ বছর যাবৎ বৌদ্ধ ভিক্ষু সন্নাসী হিসেবে বৌদ্ধ ধর্মের প্রচার ও প্রসারে কাজ করেছিলেন। তিনি ৯০ বছর ৬ মাস বয়সে গতবছর ১৭ আগষ্ট বৃহস্পতিবার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি কোন ওয়ারিশ বা উত্তরাধিকারী রেখে যাননি। পার্বত্য চট্টগ্রামে ৬ষ্টতম সংঘরাজ, বর্ষীয়ান ধর্মীয় গুরু, সংঘনায়ক ভদন্ত বিচারিন্দ মহাথের তিনি আজীবন রোয়াংছড়ি কেন্দ্রীয় জেতবন বৌদ্ধ বিহারের বিহারাধ্যক্ষ হিসেবে অধিষ্ঠিত ছিলেন।