সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৩:২৭ পূর্বাহ্ন
প্রধান সংবাদ :
মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ডাকা ধর্মঘটে ভোগান্তিতে যাত্রীরা -থানচি সীমান্তবর্তী এলাকায় নিরাপত্তার বাহিনীর সাথে গোলাগুলিতে কেএনএফ দুই সদস্য নিহত থানচিতে কেএনএফ সতর্কতায় বিজিবি’র গণসংযোগ বান্দরবান ব্যাংক ডাকাতির মামলায় কেএনএফের আরও ৫ জন রিমান্ডে নাজুক পরিস্থিতিতে ভুগছে থানচির পর্যটন কেন্দ্র গুলো বান্দরবান থানচি ব্যাংক ডাকাতির মামলায় কেএনএফ সদস্য ও সহযোগী রিমান্ডে  নাইক্ষ্যংছড়ি-মিয়ানমার সীমান্ত পরিদর্শনে বিজিবির মহাপরিচালক দুর্গম ধুপানিছড়া যৌথ বাহিনী অভিযানে অস্ত্র ও গোলাবারুদ সহ ৯জন আটক বান্দরবান কেএনএফের আরও ৪ সদস্য কারাগারে নাইক্ষ্যংছড়িতে বর্ণাঢ্য আয়োজনে বাংলা নববর্ষ পালন

বান্দরবান থানচিতে মিলল ৩২৯৮ ফুটের নতুন পর্বতশৃঙ্গের খোঁজ

পাহাড় কন্ঠ ডেস্ক
  • প্রকাশিতঃ মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৯
  • ২৩৭ জন নিউজটি পড়েছেন

বান্দরবানের থানচি উপজেলার রেমাক্রি মৌজায় বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শৃঙ্গ ‘জো ত্নং’। শৃঙ্গটির উচ্চতা ৩ হাজার ৩৪৫ ফুট। চতুর্থ সর্বোচ্চ শৃঙ্গ যোগী হাফং। এর উচ্চতা ৩ হাজার ২২২ ফুট। এর মাঝামাঝি বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের ৩০০ মিটার ভেতরে আবিষ্কৃত হয়েছে আরেকটি শৃঙ্গ। বম আঞ্চলিক ভাষায় যায় নাম ‘আইয়াং ত্নং’। যার উচ্চতা ৩ হাজার ২৯৮ ফুট।

জানা যায়, রেমক্রি মৌজার দালিয়ান পাড়ার “ভান রউসান বম” একজন বম হিসেবে প্রথম “আইয়াং ত্নং” এর সন্ধান পান। সৌখিন পর্বতারোহী প্রকোশলী জোতির্ময় ধর ১৩ নভেম্বরে একজন প্রথম বাঙালি হিসেবে এই পাহাড়ে অভিযান চালান এবং উচ্চতা পরিমাপ করেন ৩ হাজার ২৯৮ ফুট। তার গাইড ছিলেন দালিয়ান পাড়ার ল্লালিয়ান বম এবং লাল ঠাকুম বম। ৩৭১ রেমাক্রি মৌজা, দালিয়ান হেডম্যান পাড়ার হেডম্যান লাল রাম বম এই অভিযানের সত্যতা নিশ্চিত করেন। বাংলায় আবিষ্কৃত এই শৃঙ্গের নামকরণ করা হয়েছে “রিনির চূড়া”।

আবিষ্কৃত শৃঙ্গের অভিযান বিষয়ে প্রকৌশলী জোর্তিময় বলেন, মানুষ চিরকাল বৈচিত্র্যের প্রত্যাশী। প্রকৃতি এবং এর বৈচিত্র্যের একটা অদ্ভুত সম্মোহনী শক্তি আছে। বৈচিত্র্যের এই হাতছানিকে অবলোকন করতে যুগ যুগ ধরে মানুষ চালিয়েছে অভিযান পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে।

তিনি বলেন, এ মাসের শুরুতে বন্ধু প্রকৃতিবিশারদ ডা. অরুণাভ চৌধুরীর উৎসাহে জয় করলাম বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক স্বীকৃত সর্বোচ্চ শৃঙ্গ কেওক্রাডং। ফিরে আসার পর বন্ধু দিল এক অদ্ভুত তথ্য। কেওক্রাডং বাংলাদেশের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ নয়। এর চেয়েও উঁচু বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে দৈত্যের মতো দাঁড়িয়ে আছে আরও চারটি শৃঙ্গ। সেগুলো যথাক্রমে সাকা হাফং (৩৪৭১ ফুট), জো-ত্নং (৩৩৪৫ ফুট), দুম্লং (৩৩১০ ফুট) এবং যোগী হাফং (৩২২২ ফুট)। ভ্রমণ এবং অভিযান রক্তে মিশে আছে আমার সেই ছোটবেলা থেকেই। তাই আমার সুদীর্ঘ ১৮ বছরের প্রবাস জীবনে ভ্রমণ করেছি প্রায় ৩৯টা দেশ। চলতে থাকলো বাংলাদেশে আমার একের পর এক অভিযান। সাফা হাফং থেকে শুরু করে একে একে সবগুলো।

প্রকৌশলী জোর্তিময় জানান, বাংলাদেশের ৩ হাজার ফুটের এই শৃঙ্গগুলোর বেশিরভাগের অবস্থান বান্দরবান জেলার থানচি এবং রুমা এলাকায়। গত ২৬ অক্টোবর যখন আমি ৪র্থ সর্বোচ্চ শৃঙ্গ যোগী হাফংয়ের ৪র্থ চূড়ায় আরোহন করি, প্রায় ৪ ঘণ্টার মতো আমি সেখানে অবস্থান করেছি। ঠিক ওই সময় আমার পথপ্রদর্শকরা আমাকে একটার পর একটা পাহাড় দেখাচ্ছিল। ওই দূরে সাকা হাফং (যেটা আমি ৬ মাস আগে জয় করেছি), ওইটা জো-ত্নং (২য় সর্বোচ্চ শৃঙ্গ) এবং জো-ত্নং ও যোগী হাফংয়ের ২য় চূড়ার মাঝে অস্পষ্টভাবে দাঁড়িয়ে আছে আরেকটা চূড়া।

তিনি আরও বলেন, আমি আমার পথপ্রদর্শকদের ওই চূড়া সম্পর্কে প্রশ্ন করলে ওই চূড়া কিংবা পাহাড় সম্পর্কে তেমন কিছু জানে না বলে জানান। পথ দুর্গম হওয়ার কারণে ওই চূড়ায় কেউই ওঠে না। শুধুমাত্র আমাদের পাড়া (দালিয়ান পাড়া এবং মুরং পাড়া) থেকে শিকারিরা ওই পাহাড়ের অর্ধেক পথ আসেন বাঁদর, সজারু আর ধনেশ পাখি শিকার করতে। মনে প্রচণ্ড সন্দেহ হচ্ছিল এবং যোগী হাফংয়ের ৪র্থ শৃঙ্গ থেকে আমাকে ওই অজানা পাহাড়টিকে দেখে আমার কেন যেন উঁচু মনে হচ্ছিল। সামিট শেষ করে দালিয়ান পাড়ায় ফিরে এসে পাড়ার হেডম্যান (চেয়ারম্যান) লাল রাম বম দাদাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, পথ খুবই দুর্গম হওয়ায় ওদিকটায় শুধু শিকারিরা যায়। বম ভাষায় ওই পাহাড়ের নাম “আইয়াং ত্নং”। আমরা কেউ ওই রাস্তা পুরোটা চিনি না। আমার জানামতে আমাদের পাড়ার কেউই ওই পাহাড়ের চূড়ায় কোনদিন যায় নি। আর বাঙালিতো প্রশ্নই আসে না।


‘একজন ৭২ বছরের বৃদ্ধ আছেন যিনি প্রায় ৩০ বছর আগে আইয়াং ত্নং এর চূড়ায় উঠেছিলেন। তিনি অস্পষ্টভাবে রাস্তাটা চিনেন। তখনই সিদ্ধান্ত নিলাম আমার পরের অভিযান ওই অচেনা চূড়ায়। থানচির রেমাক্রি খাল পার হয়ে পৌঁছালাম দালিয়ান পাড়ায়। ভোরের আলো ফুটেনি তখনো। ভোর চারটা। আমার দুই শিকারি পথপ্রদর্শক লাল্লিয়ান বম, লাল ঠাকুম বম এবং আমাদের সাথে শিকারি কুকুর হেরমিনসহ যাবতীয় সরঞ্জাম নিয়ে প্রস্তুত। দালিয়ান পাড়া থেকে প্রায় ১২ কি. মি. সহজেই অতিক্রম করে ১ ঘণ্টায় পৌঁছে গেলাম জংশনে। এই জায়গাটার মাঝে বিশাল আকৃতির গাছ দাঁড়িয়ে। এই গাছের বাম দিকের রাস্তাটা চলে গেছে পূর্বের ৪র্থ সর্বোচ্চ শৃঙ্গ যোগী হাফংয়ের দিকে, ডান দিকেরটা বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শৃঙ্গ জো-ত্নং এর দিকে। অভিযাত্রীরা এই গাছটিকে অনুসরক চিহ্ন হিসেবে ব্যবহার করে। আমরা কোন দিকেই না গিয়ে সোজা সামনের দিকে এগিয়ে চললাম। প্রায় ১২’শ ফুটের মতো একটা পাহাড় অতিক্রম করে শুরু ঝিরিপথ। আগের দিন বৃষ্টি হওয়ার কারণে ঝিরির পাথরগুলো অসম্ভব পিচ্ছিল। পাড়ি দিলাম ৬৭ কি. মি. ঝিরিপথ। এই পথে দেখলাম প্রায় ১২টির মতো সব নাম না জানা ঝরণা। এই ঝিরিপথ পাড়ি দিতে গিয়ে আমাকে পার হতে হয়েছে ৮০০-৯০০ ফুট উঁচু প্রায় ৭টা পিচ্ছিল খাঁড়াই। মানে এই পিচ্ছিল জায়গাগুলো দিয়ে অনেক উঁচু থেকে ঝরণার জল, ঝিরিতে এসে পড়ে, যেখানে শুধু বাঁশ এবং দড়ির উপর ভর দিয়ে উপরে উঠতে হয়। থেমে গেলে স্লিপ কেটে নিচে পড়ে হাত-পা ভাঙার সম্ভাবনা কিংবা জায়গামত পড়লে নিশ্চিত মৃত্যু। ঝিরিপথ যখন শেষ তখন সূর্য প্রায় ডুবো ডুবো। সূর্য অস্ত গেলে পথপ্রদর্শকেরা জানিয়ে দিল তারা এই পর্যন্তই রাস্তা চেনে এবং পাড়ার মুরুব্বির কথা অনুযায়ী ঝিরিপথ যেখানে শেষ হবে, তার কিছুদূর হাতের বামে গেলেই আইয়াং ত্নং পাহাড় শুরু। ওটা প্রচণ্ড দুর্গম। তাই সকাল ছাড়া উঠা যাবে না। রাতটা ঝিরির শেষে বড় পাথরটার উপরে কাটাতে হবে। কাটা হলো কলাপাতা, জ্বালানো হলো আগুন। সঙ্গে নিয়ে আসা হলো বিনি চালের ভাত আর আলু ভর্তা। এটা আমাদের দুপুরের খাবার হলো। সন্ধ্যায় প্রচণ্ড ক্লান্তিতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি তার খেয়াল নেই।’

তিনি বলেন, সকালে শিকারিদের চিৎকারে ঘুম ভাঙল। দাদা, ওঠেন। এগোতে হবে। পাড়ার মুরুব্বির নির্দেশনা অনুযায়ী এগোতে থাকলাম। পাহাড়ের গায়ে প্রচণ্ড জংলী সব গাছ-গাছালি, আমাদের দুই শিকারির হাত যেন থামছেই না। দা দিয়ে জঙ্গল পরিষ্কার করতে করতে প্রায় অর্ধেক ওঠার পর শুরু বাঁশ বাগান। আর এগোনো সম্ভব না। আমাদের দুই শিকারি পথপ্রদর্শক তখন ক্লান্ত। বলল, চলেন ফিরে যাই, আমরা আর পারছি না। পারবো না শব্দটা আমার অভিধানে কখনও ছিল না। আমি বললাম, তোমরা ফিরে যাও, আমি একাই উঠবো। যাই হোক বাঁশ বন পরিষ্কার করতে করতে উঠতে থাকলাম। একপর্যায়ে আমার পথপ্রদর্শক লাল ঠাকুম বম এর চিৎকার- দাদা, আমরা পৌঁছে গেছি চূড়ায়। মানে, এটা যে আইয়াং ত্নং এর চূড়া বুঝবো কিভাবে? পাড়ার সেই মুরুব্বির কথা অনুযায়ী এর পশ্চিমে দেখা যাবে যোগী হাফং এর ২য় চূড়া এবং পূর্বে দেখা যাবে জো-ত্নং এর চূড়া। আমি নির্দেশ দেওয়ার আগেই, আমার শিকারিরা জঙ্গল সাফ করে দেখাল, পূর্ব আর পশ্চিমে তাকিয়ে দেখেন। আরে সবই মিলে যাচ্ছে। আমার চোখে তখন গড়িয়ে পড়ছে আনন্দ অশ্রু। এবার কাজের পালা। জিপিএস দিয়ে দুইবার করে উচ্চতা পরিমাপ করলাম, ৩ হাজার ২৯৮ ফুট। সাথে সাথে ছবি তুলে নিলাম বেশ কয়েকটা। উড়িয়ে দিলাম লাল সবুজের পতাকা। ১৩ নভেম্বর ২০১৯ বেলা ১টা ৪১ মিনিটে, আমি প্রথম বাঙালি, পা রাখলাম বাংলাদেশের একটি অদ্ভুত অনাবিষ্কৃত অপরিচিত একটি চূড়ায়। লিখলাম সামিট নোট। এবার ফেরার পালা। পরদিন হেডম্যান দাদা আমার নামে প্রত্যয়ন পত্র দিলেন যে, প্রথম বাঙালি হিসেবে আমিই “আইয়াং ত্নং” জয় করেছি এবং এটার নাম রিনির চূড়া। নিকটস্থ বিজিবি ক্যাম্পে রিপোর্ট করা হলো। তারাও আমার এই সামিট রেকর্ডবুকে লিখে রাখল। এই অভিযান সফল করতে যার কাছে আমি কৃতজ্ঞ, দালিয়ান পাড়ার সেই বৃদ্ধ বম, যিনি প্রথম বম হিসেবে আইয়াং ত্নং এর সন্ধান পান। তার নাম ভান রউসাং বম। আর আমি এই অভিযান উৎসর্গ করেছি আমার একজন প্রিয় মানুষকে এবং তাঁর নাম অনুসারে বাংলায় এই শৃঙ্গের নাম দিয়েছি “রিনির চূড়া”।

চট্টগ্রাম থেকে আইয়াং ত্নং বা রিনির চূড়াতে যাওয়ার রাস্তা: চট্টগ্রামের বান্দরবান থানচি-রেমাক্রি দালিয়ান পাড়া বেস ক্যাম্প জংশন “আইয়াং ত্নং”।

নির্দেশঃ অভিযানে গিয়ে যত্রতত্র ময়লা, বিস্কুট, চিপস্, চকোলেটের খালি প্যাকেট, খালি পানির বোতল ইত্যাদি ফেলবেন না। পরিবেশ নষ্ট করবেন না। পাহাড়িদের সাথে ভালো ব্যবহার করুন।

সূত্র:চট্টগ্রাম প্রতিদিন

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরির আর নিউজ

আজকের নামাজের সময়সুচী

  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ৩:৫২ পূর্বাহ্ণ
  • ১১:৫৮ পূর্বাহ্ণ
  • ১৬:৩৩ অপরাহ্ণ
  • ১৮:৪০ অপরাহ্ণ
  • ২০:০৩ অপরাহ্ণ
  • ৫:১৩ পূর্বাহ্ণ
© All rights reserved ©paharkantho.com-২০১৭-২০২১
themesba-lates1749691102
error: Content is protected !!