তুলা উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ আখতারুজ্জামান জানিয়েছেন, তুলার উৎপাদন বাড়াতে নানামুখি উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। তুলা চাষে কৃষকদেরকে উৎসাহিত করার জন্য চাষিদের বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করা হয়। তুলা চাষিদের সার কীটনাশক, উচ্চ ফলনশীল বীজ, হরমোন ফ্রি সরবরাহের করার পাশাপাশি কৃষি ঋণের আওতায় আনা হচ্ছে। এছাড়াও কৃষকদের মটিভেশনাল ভ্রমনের মাধ্যমে তুলা চাষে উৎসাহী করা হয়ে থাকে।
১৯৭৩-৭৪ সনে বাংলাদেশে সমভূমির তুলাচাষ শুরু হওয়ার পর থেকে তুলা চাষ এলাকা ও উৎপাদন ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পায়। সাম্প্রতিককালে হাইব্রিড ও উচ্চফলনশীল জাতের তুলাচাষ প্রবর্তনের ফলে তুলার ফলন বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই সঙ্গে তুলার বাজার মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় চাষিদের তুলা এখন একটি লাভজনক ফসল হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। বর্তমানে তুলা উন্নয়ন বোর্ড তুলা গবেষণা, এর সম্প্রসারণ, বীজ উৎপাদন ও বিতরণ, প্রশিক্ষণ, বাজারজাতকরণ ও জিনিং এবং ঋণ বিতরণ প্রভৃতি কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে আসছে। বর্তমানে তুলা বাংলাদেশের দ্বিতীয় অর্থকরী ফসল এবং বস্ত্র শিল্পের প্রধান কাঁচামাল। সম্প্রতি, দেশের বরেন্দ্র ও ৩টি পার্বত্য জেলাতেও পাহাড়ি জাতের পাশাপাশি সমভূমির জাতের তুলার চাষাবাদ হচ্ছে।
তুলা উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ আখতারুজ্জামান এক স্বাক্ষাৎকারে বলেন, “দেশের গার্মেন্টেস শিল্পের প্রয়োজনীয় সুতার ৯৫ ভাগ উৎপাদন করতে সক্ষম হচ্ছে। তুলার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায়, দেশের বরেন্দ্র ও পার্বত্য অঞ্চলে তুলা উৎপাদনের জন্য ব্যাপক কর্মসূচী গ্রহণ করেছে সরকার। চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত আবাদযোগ্য জমি না থাকায় ব্যাপক হরে তুলা চাষকে চাষের আওতায় আনা যাচ্ছে না। তবে নদীতে জেগে ওঠা উচু অনাবাদি চর সমুহকে আবাদের আওতায় নিয়ে আসার জন্য কাজ করছে তুলা উন্নয়ন বোর্ড।”
তিনি আরো বলেন – তুলা চাষে অন্য ফসলের উৎপাদন যেন ব্যহত না হয় সেদিকে খেয়াল রেখে মিশ্র পদ্ধতিতে চাষাবাদ শুরু করা হয়েছে। মিশ্র পদ্ধতিতে তুলা গাছের সাথে লালশাক, ধনেপাতা, পিয়াজ ইত্যাদি ফসল উৎপাদন হচ্ছে। বাংলাদেশের মোট ভুখন্ডের ১২ ভাগ পাহাড়ি জমি। পাহাড়ি জনগোষ্ঠির জুম চাষের মাধ্যমে তুলা চাষ শুরু করেছে।
তুলা উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক জানান- এক বিঘা জমিতে ৪ হাজারেরও অধিক চারা রোপন করা সম্ভব যাপূর্বের তুলনায় দ্বিগুন। বর্তমানে প্রতি বিঘা জমিতে ২০ থেকে ২৫ মন তুলা উৎপাদন করা সম্ভব। পূর্বে গাছের ডালাপালা ছড়িয়ে যাওয়ার কারণে বেশী জায়গায় কম গাছ রোপন করা যেত। তুলা উন্নয়ন বোর্ডের গবেষণায় বিশেষ হরমোন ব্যবহার করে ডালপালাকে ছোট বা খাটো পর্যায়ে আনা হয়েছে। এতেফলনও দ্বিগুনেরও বেশি হচ্ছে।
তুলা চাষে কৃষকদেরকে উৎসাহিত করার জন্য চাষিদের বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করা হয়। তলা চাষিদের সার কীটনাশক, উচ্চ ফলনশীল বীজ, হরমোন ফ্রি সরবরাহের করার পাশাপাশি কৃষি ঋণের আওতায় আনা হচ্ছে। এছাড়াও কৃষকদের মটিভেশনাল ভ্রমনের মাধ্যমে তুলা চাষে উৎসাহী করা হয়ে থাকে। তুলা চাষীদের কাছ থেকে অন্য কোন মধ্যস্বত্ত্ব ভোগী বা দালাল যাতে কোন প্রকার আর্থিক সুবিধা নিতে না পারে সেজন্য তুলা চারা রোপন থেকে শুরু করে বিক্রি পর্যন্ত তদারকি করে তুলা উন্নায়ন বোর্ড। বর্তমানে বীজসহ প্রতি কেজি তুলার দাম ৮৫-৯০ টাকা। সরকারের পাশাপাশি এস আলম গ্রুপ উত্তরবঙ্গে কিছু অঞ্চলে বেসরকারি ভাবে তুলাউৎপাদন করে থাকে।
কৃষিবিদ মোঃ আখতারুজ্জামান বলেন- অন্যান্য অর্থকরী ফসলের তুলনায় তুলা চাষে খরচ অনেক কম। তুলা গাছ অল্প পানি ব্যবহারে পরিবেশে টিকে থাকতে পারে, তাপমাত্রা সহ্য ক্ষমতা বেশী। এর শিকড় অনেক গভীরে যায়। তুলা গাছের সব অংশই মানুষের কল্যাণে কাজে লাগে। এর ডালপালা কান্ড জ্বালানী হিসাবে ব্যবহার করা হয়। বীজ থেকে ভোজ্যতেল উৎপাদন হয়্। বীজের অবশিষ্টাংশ খৈল হিসাবে ব্যবহৃত হয়। যা গরুমোটাতাজা করণ ও মাছের খাবার হিসাবে ব্যবহার করা হয়।