বান্দরবান জেলা জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)’র প্রধান সমন্বয়ক মো. শহীদুর রহমান সোহেলের বিরুদ্ধে সংগঠনের ভেতর থেকেই চাঁদাবাজী, অর্থ আত্মসাৎ ও ক্ষমতার অপব্যবহারের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে জেলা কমিটিতে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে।
গত ১৩ জুন সাবেক ফুটবলার মো. শহীদুর রহমান সোহেলকে প্রধান সমন্বয়ক করে ২৯ সদস্যবিশিষ্ট বান্দরবান জেলা কমিটি ঘোষণা করা হয়। এর পর কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গত ১৯ জুলাই বান্দরবানে “জুলাই পদযাত্রা” অনুষ্ঠিত হয়।
অভিযোগ রয়েছে, ওই কর্মসূচির খরচ মেটাতে প্রধান সমন্বয়ক সোহেল তার অনুগত কিছু কর্মী ও বহিরাগত লোকজনকে নিয়ে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ, এলজিইডি, উন্নয়ন বোর্ড, সড়ক ও জনপথ, গণপূর্ত ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তর থেকে প্রায় ১০ লাখ টাকা সংগ্রহ করেন। পাশাপাশি মামলার ভয় দেখিয়ে পলাতক আওয়ামী লীগ নেতা–কর্মী এবং স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেও আরও প্রায় ১৫ লাখ টাকা আদায় করেন তিনি।
কিন্তু কর্মসূচি শেষে সমন্বয় সভায় সোহেল মোট ২৫ লাখ টাকার বিপরীতে মাত্র ২ লাখ ৭৯ হাজার টাকার হিসাব দেন। আর খরচ দেখান প্রায় ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা।
জেলা এনসিপি’র যুগ্ম সমন্বয়ক আ হ ম সায়েমুল ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছ থেকে মামলার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়ের বিষয়টি তার সরাসরি জানা নেই, তবে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের চলমান প্রকল্প এলাকায় সোহেলের বিশ্বস্ত কিছু লোক চাঁদার দাবিতে কাজে বাধা দিচ্ছে—এমন ভিডিও তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখেছেন। তিনি আরও অভিযোগ করেন, “প্রধান সমন্বয়ক সোহেল আমাদের আড়ালে থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা আদায় করেছেন, অথচ আয় দেখিয়েছেন মাত্র আড়াই লাখ টাকা। কেন্দ্র থেকেও কর্মসূচির জন্য ২ লাখ টাকা পাঠানো হয়েছিল, যা তিনি গোপন রেখেছিলেন।”
তিনি আরও জানান, কর্মসূচি শেষে দুই মাস পার হলেও সেই বকেয়া টাকা না পেয়ে তিনি ব্যক্তিগত ঋণ গ্রহণ করে দেনা পরিশোধ করছেন। অনুষ্ঠান বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকায় এখনো বিভিন্ন দোকানে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা তার নামে বকেয়া রয়ে গেছে।
অভিযোগ রয়েছে, প্রধান সমন্বয়ক সোহেল জেলা কমিটির কোনো বৈঠকে অংশ নেন না, বরং উল্টো জেলা নেতাদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রে মিথ্যা অভিযোগ দাখিল করেন। তার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যেই,চাঁদাবাজি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও অর্থ আত্মসাতের লিখিত অভিযোগ কেন্দ্রে জমা দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জেলা এনসিপি’র আরেক যুগ্ম সমন্বয়ক আব্দুল গফুর বলেন,“ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করা পার্টির নীতি বা সিদ্ধান্ত নয়। কিন্তু সোহেল ব্যক্তিগতভাবে মামলার ভয় দেখিয়ে প্রায় ১৫ লাখ টাকা নিয়েছেন। এর কোনো হিসাব দেননি।” তিনি আরও অভিযোগ করেন, এর পর থেকেই এনসিপি কার্যত নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে এবং সোহেল আত্মগোপনে চলে গেছেন। প্রতিবাদ করলেই তিনি প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি। কেন্দ্রীয় কমিটি যদি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে সংগঠনের বিভিন্ন পদে থাকা নেতাকর্মীরা সংগঠন থেকে গণপদত্যাগ করবেন বলে জানান তিনি।
এ প্রসঙ্গে এনসিপি’র পার্বত্যাঞ্চল তত্ত্বাবধায়ক ইমন সৈয়দ বলেন,“প্রধান সমন্বয়ক সোহেলের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ আমরা জেনেছি। এ বিষয়ে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
অভিযোগ রয়েছে, প্রধান সমন্বয়ক হওয়ার পর থেকেই সোহেল বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। সম্প্রতি তিনি বান্দরবান জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ৯ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ ভাগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। কাজ না পাওয়ায় তার অনুগত কিছু বহিরাগত লোক দিয়ে শহরের পানি সরবরাহ প্রকল্পের পাইপলাইনের কাজ বন্ধ করে দেন। পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
এ বিষয়ে মো. শহীদুর রহমান সোহেলের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তার ব্যবহৃত মুঠোফোনের হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বারে বার্তা পাঠিয়েও কোনো সাড়া মেলেনি তাই তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।