শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০২:৪৮ পূর্বাহ্ন
প্রধান সংবাদ :
থানচিতে কেএনএফ সতর্কতায় বিজিবি’র গণসংযোগ বান্দরবান ব্যাংক ডাকাতির মামলায় কেএনএফের আরও ৫ জন রিমান্ডে নাজুক পরিস্থিতিতে ভুগছে থানচির পর্যটন কেন্দ্র গুলো বান্দরবান থানচি ব্যাংক ডাকাতির মামলায় কেএনএফ সদস্য ও সহযোগী রিমান্ডে  নাইক্ষ্যংছড়ি-মিয়ানমার সীমান্ত পরিদর্শনে বিজিবির মহাপরিচালক দুর্গম ধুপানিছড়া যৌথ বাহিনী অভিযানে অস্ত্র ও গোলাবারুদ সহ ৯জন আটক বান্দরবান কেএনএফের আরও ৪ সদস্য কারাগারে নাইক্ষ্যংছড়িতে বর্ণাঢ্য আয়োজনে বাংলা নববর্ষ পালন বান্দরবান যৌথবাহিনীর অভিযানে এক নারীসহ কেএনএফ এর আরো ৩জন গ্রেফতার আরো ১জন কেএনএফ সহযোগীকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে

করোনা আমাদের কতটা অমানুবিকতা শেখাল

এস এম নাসিম
  • প্রকাশিতঃ বৃহস্পতিবার, ৯ জুলাই, ২০২০
  • ৬০২ জন নিউজটি পড়েছেন

চারিদিকে শুধু মৃত্যুর মিছিল। গত কয়েক মাস ধরে বিশ্বের কোন দেশ থেকে শান্তির কোন বার্তা বয়ে আসেনি। জন্মগতভাবে আমাদের মাঝে যে মানবিক গুনাবলি ছিল সেটা যেন দিনে দিনে লোভ পেয়েছে। করোনা ভাইরাস যেন আমাদেরকে বেশি নিষ্ঠুরতার দিকে ঠেলে দিয়েছে। অসুস্থ মানুষের প্রতি আমাদের নিষ্ঠুরতা বেড়ে গেছে। কেউ অসুস্থ হলে তার কাছে যাওয়াও যেন পাপ। লকডাউন শব্দটি আমাদের আরো বেশি আতœকেন্দ্রীক দিয়েছে। এই তো কিছুদিন আগে কেউ মারা গেলে সেথানে যেতে না পারলে নিজেকে অপরাধী মনে হতো। আর এখন মৃত্যু বাড়ি গেলেই যেন অপরারী। কতটা বদলে গেছি আমরা।

কোন পারিবারে কেউ মারা গেলে প্রতিবেশিরা তাদের শাস্তনা দিত, পাশে থাকতো, দুর-দূরন্ত থেকে আগত অতিথি দের খবর নিত। জানাজা, দাফন-কাফনের দায়িত্ব ছিল প্রতিবেশিদের।

আর কর্তমানে করোনা কালে কেউ মারা গেলে তার কাছে যাওয়া যাবে না, ছোয়াঁ যাবে না, আক্রান্ত পরিবারটি যেন মহা পাপী। তাদের কে সান্তনা দেওয়ার মতো কেউ নেই। মারা গেলে তাকে জানাজা, দাফন-কাফন করার মতো মানুষ নেই।

শোকাহত পরিবারটির উপর লকডাউন শব্দটি জুড়ে দিয়ে তাকে সামাজিক ভাবে এক ঘরে করে রাখা হয়। আমি লকডাউনের বিপক্ষে নয়, তবে লকডাউনের নামে সামাজিক নিষ্ঠুরতার আচরণের বিপক্ষে।

যে ছেলেটি বাবার গলা জড়িয়ে না ধরলে ঘুম আসে না সেই বাবাকে ফেলে দিয়েছে সন্তান। করোনার ভয়ে স্ত্রী ছেড়ে গেছে স্বামীকে। অনেক স্বামীও ছেড়ে দিয়েছে স্ত্রীকে। অনেক সন্তান মাকে ফেলে দিয়েছে রাস্তা বা বনের ধারে। প্রশাসনের লোকজন তাদেরকে উদ্ধারও করেছে।

এইতো কয়েকদিন আগে নোয়াখানিতে একজন মানুষ জ¦রে আক্রান্ত হন। করোনা পরীক্ষা করা হয়নি, করোনা সন্দেহে তাকে দুই তালা বাড়ির নিচ তলার একটি রাখা হয়। স্ত্রী তার তিন সন্তানকে নিয়ে চলে যায় উপরের তলায়। লোকটির গায়ে জ¦র বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে মৃত্যুর যন্ত্রনা উঠে গায়ে, এক গ্লাস পানির জন্য কত না আকুতি করেছে। কিন্তু পানি নিয়ে এগিয়ে আসে নি প্রিয়তমা স্ত্রী, এমনকি সন্তানদের কেউ আসতে দেন নি। লোকটি নিচতলার সেই ঘরে উলঙ্গ অবস্থায় মারা গেল। অবশেষে, স্থানীয় চেয়ারম্যান এসে তার মরদেহ বের করে প্রশাসনের সহযোগিতায় তার করোনা টেষ্ট করা হলো। মৃত্যুর তিন দিন পর জানা গেল সে করোনা পজেটিভ ছিল না।

আমাদের কিছু সামাজিক ও নৈতিক অবক্ষয়ের কিছু চিত্র তুলে চেষ্টা করছি, গত ২৮ জুন এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য দেখা গেল ভারতের উত্তরপ্রদেশের কনৌজের একটি হাসপাতালের চত্বরে। প্রেমচাঁদ নামে এক পিতা তার এক বছরের শিশু সন্তানকে কোলে নিয়ে হাসপাতাল চত্বরে শুয়ে হাউমাউ করে কাঁদছিলেন। পাশে বসে তার স্ত্রী আশা দেবীও সমানে কেঁদে যাচ্ছিলেন। ছেলেটির গায়ে জ¦র ছিল, গলাও ফুলে উঠেছিল। করোনা সন্দেহে কোন ডাক্তার তাকে ছুয়ে দেখেনি। পিতার কোলে শিশুটির মৃত্যু হয়। আমার জানা মতে, কোন পিতা কাছে এর চেয়ে কোন কঠিন বাস্তবতার আর কি হতে পারে। কিন্তু ছেলেটি করোনা আক্রান্ত ছিল কিনা সেটা আজও জানা যায়নি।

এটা তো গেল বিদেশের কথা এবার আসি দেশে চিত্রে, গত ২৬ জুন ‘মাইল্ড স্ট্রোকের’ কারণে হাসপাতলে মারা যান চট্টগ্রাম নগরীর লালখান বাজার এলাকায় বাসিন্দা মদন কান্তি সুশীল মুন্না।

মৃত্যু মুন্নাকে তার গ্রামের শ্মশানে দাহ করতে দেয়নি প্রতিবেশিরা। বরং শ্মশানের চারপাশে বেড়া দিয়ে হুমকি দিয়েছে, যদি গ্রামে শ্মশানে দাহ করা হয় তাহলে তাদের ঘরে আগুন দিবে। সন্তানরা পিতার লাশ নিজেদের জায়গাতে দাহ করতে চাইলেও আপত্তি প্রতিবেশিদের। পরে মানাহিলের সদস্যদের সহযোগিতায় কাট্টলী মহাশ্মশানে তার দাহ সম্পন্ন করে স্বজনরা।

মদন কান্তি সুশীল মুন্নার ছেলে অসীম কুমার সুশীল জানিয়েছিলেন ‘আমার আব্বুর করোনার কোন উপসর্গ ছিল না। তিনি মূলত স্ট্রোক করে মারা গেছেন। আমার সবচেয়ে বড় কষ্ট হলো পৈত্রিক ভিটায় আমি আমার পিতাকে দাহ করতে পারিনি।

গত ২২ জুন বরিশাল নগরীর মহাশ্মশানে করোনা সন্দেহে মারা যাওয়া এক ব্যক্তির মরদেহ শ্মশানের ভেতরেই ঢুকতে দেননি কমিটির সাধারণ সম্পাদক তমাল মালাকার। পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে সৎকার করা হয়। স্বজনদের অভিযোগ, তাদের সাথে কি যে দুর্ব্যবহার করছে, তা না দেখলে বিশ্বাস করতে পারবেন না।’

এবার আসি মুসলমান পাড়ায়, ৯ জুন রংপুরের পীরগাছায় জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট নিয়ে মারা গেছেন সিএনজি চালক নুরুন্নবী মিয়া। মৃত্যুর পর তার লাশ সামাজিক করব স্থানে দাফন করতে দেয়নি প্রতিবেশিরা। পরে ভোর রাতে গোপনে নিহতের লাশ পারিবারিক কবর স্থানে দাফন করা হয়।

গত ৫ জুলাই করোনায় মারা গেছেন ঝিনাইদহের শৈলকুপার মধ্যপাড়া গ্রামের গোলাম সরোয়ার মোর্শেদ। রাতেই বাড়িতে একটি এ্যাম্বুলেন্সে আনা হয় তার লাশ। গ্রামবাসিদের বিরোধিতায় জোটেনি খাঁটিয়া, এ্যাম্বুলেন্সেই পড়ানো হয় জানাযা। কাটতে দেয়নি বাঁশ-খুঁটি, ‘সবাই বলছে পাপের ফল’। এটা কত খানি র্নিমমতা ?

ঢাকার একটি পোশাক শিল্পে কাজ করতেন মাহমুদা বেগম মৌসুমি। হঠাৎ তার শরীর খারাপ হলে গত ২১ মে বিকালে পরিচিত এক ট্রাকচালকের ট্রাকে করে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেয় সে। কিন্তু, ওইদিন রাতেই ঢাকার আব্দুল্লাহপুর আসার পর তার মৃত্যু হয় বলে জানায় ট্রাকচালক। মেয়েটি মারা গেছে নাকি সে অন্য কোনও ঘটনার শিকার হয়েছে তা সঠিক করে বলতে পারি তার পিতা। মেয়েটির বাড়ি বাড়ি লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী ইউনিয়নের উফারমারা গুচ্ছগ্রামে।

মেয়েটির লাশ দাফন নিয়ে তুলকালাম কাণ্ড ঘটেছে লালমনিরহাটে। মেয়েটির পিতা জানান, মৃত্যুর খবর স্থানীয় বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ নেওয়াজ নিশাতকে জানালে তিনি উল্টো ধমক দেন তাকে। সহযোগিতা না করে শাসিয়ে বলেন, ‘‘লাশ তো দূরের কথা, লাশের সাথে তুই যাবি না। তোকেও ওখানে পেট্রোল দিয়ে পুড়বো। আর যে অ্যাম্বুলেন্স যাবে, সে অ্যাম্বুলেন্স, আর ড্রাইভারসহ সবগুলাকে এক সাথে পেট্রোল দিয়ে পুড়বো।’ উপায় না পেয়ে আমি ওখানেই কান্দাকান্দি (কান্না) শুরু করি।’’

এই সুযোগে সহযোগিতার নাম করে ওই ব্যক্তির কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়ে সরকারি ব্যাগে ভরে মরদেহটি নদীতে ভাসিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায় এক অ্যাম্বুলেন্স চালক। পরে সে মরদেহ নদী থেকে উদ্ধার করে কবরস্থানে দাফন করেছে পুলিশ। চেয়ারম্যান অবশ্যই অভিযোগটি অস্বীকার করেন।

খোদ রাজধানীতে বাধা দেওয়া হচ্ছে করোনা আক্রান্ত মানুষের লাশ দাফন করতে। সমপ্রতি, খিলগাঁও ও রামপুরা থাকা এলাকার সর্বস্তরের জনগণের ব্যানারে লেখা হয়েছে, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির মেয়র মহোদয় এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রতি আকুল আবেদন। সাধারণ জনগণের জীবনের নিরাপত্তার স্বার্থে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মৃত ব্যক্তিদের লাশ খিলগাঁও তালতলা কবরস্থানের পরিবর্তে ঢাকার বাহিরে বা অন্য কোনো নিরাপদ স্থানে দাফন করার ব্যবস্তা গ্রহণের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।’ এই যদি হয় রাজধানীর চিত্র তাহলে অন্য জায়গার চিত্র কেমন সেটা ভাবনার বিষয়।

রাজশাহী, বগুড়া,ফরিদপুর, লালমনিরহাট সহ বিভিন্ন জেলায় অমানবিক ঘটনা ঘটেছে। গোপালগঞ্জে তো এক স্বাস্থ্যকর্মীকে করোনা সন্দেহে তালপাতার ঝুপড়ি ঘরে রাখা হয়েছিল। এছাড়া দেশের বিভিন্ন জায়গাতে লাশ দাফন বা দাহ করা নিয়ে ঘটেছে তুলকালাম।

করোনার আমাদের কি শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছে সে খুজতে হয়তো আমাদের অনেক সময় লেগে যাবে। কিন্তু করোনার কাছ থেকে আমারা কি শিক্ষা নিলাম সেটা নিতান্তই আমাদের নিজেদের ব্যাপার। এই মহামারী করোনা আমাদের যেমন অর্থনৈতিক ভাবে বিপর্যয়ের মুখে ফেলেছে তেমনি নৈতিক অবক্ষয় ঘটেছে। আমাদেরকে সামাজিক মুল্যেবোধও লোভ পেয়েছে অনেক খানি।

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরির আর নিউজ

আজকের নামাজের সময়সুচী

  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ৪:১৩ পূর্বাহ্ণ
  • ১২:০০ অপরাহ্ণ
  • ১৬:৩১ অপরাহ্ণ
  • ১৮:২৮ অপরাহ্ণ
  • ১৯:৪৭ অপরাহ্ণ
  • ৫:২৮ পূর্বাহ্ণ
© All rights reserved ©paharkantho.com-২০১৭-২০২১
themesba-lates1749691102
error: Content is protected !!