আজ (১৫ সেপ্টেম্বর) বিকেল ০৩.০০ ঘটিকায় রাজধানী ঢাকার বাংলা মোটর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে বিপ্লবী মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৮৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আলচনা সভায় আয়জন করে বিপ্লবী মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৮৬ম জন্মবার্ষিকী উদযাপন কমিটি।
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী জাকির হোসেনের সভাপতিত্বে পিসিপি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক শান্তিময় চাকমার সঞ্চালনায়। সভায় বক্তব্য রাখেন লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ, সাংবাদিক এহসান মাহমুদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সদস্য দীপায়ন খীসা, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের অর্থ সম্পাদক মেইনথিন প্রমীলা ও বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিল এর কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অং শোয়ে সিং মারমা। আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের তথ্য প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক হিরণ মিত্র চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় স্টাফ সদস্য অনন্ত বিকাশ ধামাই, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি শান্তিদেবী তঞ্চঙ্গ্যা, পিসিপি, ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি জগদীশ চাকমা ও বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অনন্ত তঞ্চঙ্গ্যা।
সভায় পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি কেন্দ্রীয় সদস্য দীপায়ন খীসা বলেন, “কাপ্তাই বাঁধ না করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়েই ছাত্র এম এন লারমার প্রতিবাদী জীবন শুরু হয়। ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের পর যে বৈষম্যহীন, অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশের কথা বলা হচ্ছে, এম এন লারমা ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন কালেই এই বিষয়গুলো নিয়ে জোরালো বক্তব্য দিয়েছিলেন। এই রাষ্ট্রকে যদি সকল জনগণের জন্য গড়ে তুলতে হয়, তাহলে এম এন লারমার জীবন ও সংগ্রামকেও আত্মস্থ করতে হবে।”
পাভেল পার্থ বলেন, এম এন লারমা ছোটকাল থেকে কঠিন বাস্তবতার মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠেছিলেন। ১৯৫৫-১৯৬৫ সালের মধ্যে তৈরি হওয়া বাইনারি বিভাজন পরবর্তীতে বাংলাদেশে সরকার কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বাইনারি মনস্তত্ত্বকে এখনো এই দেশে টিকিয়ে রাখা হয়েছে। এম এন লারমাই প্রথম আত্মপরিচয়ের রাজনীতিকে বৈজ্ঞানিকভাবে চিহ্নিত করেছিলেন।
মেইনথিন প্রমিলা তার বক্তব্যে বলেন, এম এন লারমারা তাদের সময়কালে শিক্ষাকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন। তিনি নানা গুণে গুণান্বিত ছিলেন। তিনি সবসময় উপেক্ষিত ও অবহেলিতদের কথা বলে গেছেন। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষই তাকে অবহেলিত ও উপেক্ষিত করে রেখেছে। এম এন লারমার জন্মবার্ষিকীতে তাঁকে আমরা গভীরভাবে শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। আমাদের সকলের দায়িত্ব তাঁর দেখিয়ে যাওয়া আদর্শকে ধারণ করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।
এহসান মাহমুদ বলেন, এম এন লারমাকে বিচ্ছিন্নতাবাদী তকমা দেওয়া ও বাঙালির হেজিমনির বয়ানটা এখানে প্রতিফলিত হচ্ছে। কেননা, এই অনুষ্ঠানটি শুধু আদিবাসীদের নয়, এটি বাংলাদেশের সকল নাগরিকের হওয়া উচিত।
এহসান মাহমুদ আরও বলেন, এম এন লারমা তৎকালীন সময়ে ঠিক ছিলেন যে, একজন বাঙালি যেভাবে একজন বম, চাকমা হতে পারবে না, ঠিক একইভাবে এজন বম, চাকমা কখনো বাঙালি হতে পারবে না। আপনারা আদিবাসীরা সংখ্যায় কম হলেও আপনাদের জয় হবে। কারণ আপনারা ঠিক পথে হাঁটছেন।
অং শৈসিং মারমা বলেন, শুধু পাহাড়ে নয় পুরো বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এম এন লারমা প্রাসঙ্গিক। স্বাধীনতার এত বছর পরও আদিবাসী, মেহনতি মানুষ ও সংখ্যালগু মানুষরা এখনও অবহেলিত। এমএন লারমা সংবিধান প্রণয়নকালে বাংলাদেশের আদিবাসী-মেহনতি সহ সকল মানুষের অধিকারের কথা দৃঢ কন্ঠে বলেছিলেন।
সমাপনী বক্তব্যে জাকির হোসেন বলেন, এম এন লারমা জাতীয় নেতা। কিন্তু যারা আদিবাসীদের বাইরে আছেন তারা তাঁকে জাতীয় হিসেবে মেনে নিতে পারেন না। ”বাঙালি হয়ে যাও”- কথাটার পিছনে বাঙালি মুসলমানদের জাত্যভিমানের ব্যাপারটি রয়েছে। এম এন লারমা বাংলাদেশের মধ্যে থেকে নিজেদের অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য আন্দোলন শুরু করেছিলেন। সেই আন্দোলনের প্রেক্ষিতে পরবর্তীতে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি নামে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের সরকার সেই চু্ক্তিকে যথাযথ ও পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়ন না করে আদিবাসীদের সাথে বেইমানী করেছে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে মহান নেতা এম এন লারমাকে সম্মান জানিয়ে কবিতা পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রেই চাকমা ও লাল নিকিম বম। কবিতা আবৃত্তির পরে এম এন লারমার জীবন বৃত্তান্ত পাঠ করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশন, ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রিয়া চাকমা।
উক্ত আলোচনা সভায় সংহতি প্রকাশ করেছে আদিবাসী ছাত্র ও যুব সংগঠনসমূহ।