বান্দরবান শহর ও আশপাশের এলাকা ফানুস-প্রদীপের আলোয় আলোকিত ছিল গত তিনদিন। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব মাহা ওয়াগ্যোয়াই পোয়েঃ (প্রবারণা পূর্ণিমা) এ আড়ম্বরপূর্ণভাবে উদযাপিত হয়েছে বান্দরবানে।
প্রতিবছরের মতো তিন দিনব্যাপী এই উৎসব শুরু হয় ৫ অক্টোবর (রোববার) থেকে। প্রথম দিন ভোরবেলায় বান্দরবান শহরসহ আশপাশের বৌদ্ধ বিহারগুলোতে ভক্তদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে এলাকা। সকাল থেকে চলে আলুয়া দান, পঞ্চশীল গ্রহণ, ধর্মদেশনা ও প্রার্থনা অনুষ্ঠান, যেখানে ভক্তরা ভিক্ষুদের দান দিয়ে পরিবারের শান্তি ও মঙ্গল কামনা করেন।
সন্ধ্যায় শহরের উজ্জ্বলা মহাবিহার, রাজবিহার, বালাঘাটা বিহার ও মেঘলা বিহারসহ বিভিন্ন স্থানে আলোকসজ্জা হয়। বিহারে বিহারে প্রদীপ জ্বালানো হয়। রাত নামতেই আকাশে উড়ে যায় শত শত ফানুস, যা প্রবারণা পূর্ণিমার অন্যতম আকর্ষণ ও প্রতীক। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী তরুণ-তরুণীরা দল বেঁধে এই ফানুস উড়ানোর অনুষ্ঠানে অংশ নেন। ফানুস উড়ানোকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে যাত্রার প্রতীক হিসেবে দেখা হয়।

উৎসবের দ্বিতীয় দিন, ৬ অক্টোবর (সোমবার), সন্ধ্যায় বান্দরবানের পুরাতন রাজবাড়ীর মাঠ থেকে মূয়রপঙ্খীর মতো একটি বিশাল রথ টেনে রাজগুরু বৌদ্ধ বিহারে উৎসর্গ করা হয়। রথে থাকা বুদ্ধমূর্তিকে পূজারিরা মোমবাতি ও ধূপকাঠি দিয়ে প্রণাম জানান এবং সুখ ও শান্তি কামনায় দান করেন। পরে রথটি উজানীপাড়া বৌদ্ধ বিহার হয়ে আবার পুরাতন রাজবাড়ি মাঠে আনা হয়। রাতের বেলা পিঠা উৎসবের মাধ্যমে মারমা তরুণ-তরুণীরা আনন্দে মেতে ওঠে।

উৎসবের তৃতীয় দিন শিশু-কিশোররা অংশ নেয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে, যেখানে পরিবেশিত হয় গান, নাচ ও ধর্মীয় নাটিকা। এছাড়াও স্থানীয় পর্যায়ে ধর্মীয় আলোচনা, দান-পুণ্য ও নীরব প্রার্থনা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
বান্দরবানে তিন দিনব্যাপী চলা এই উৎসব শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে প্রশাসনও বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
স্থানীয় বৌদ্ধ ভিক্ষুদের মতে, “প্রবারণা হলো আত্মশুদ্ধি, সহনশীলতা ও আলোর পথে এগিয়ে যাওয়ার উৎসব।”
তিন দিনের এই উৎসব আজ ৭ অক্টোবর (মঙ্গলবার) রাতে সাঙ্গু নদীতে রথ বিসর্জনের মাধ্যমে সমাপ্ত হয়।

আলোকসজ্জা, প্রার্থনা ও ফানুসের আলোয় ঝলমলে বান্দরবান যেন শান্তি, ঐক্য এবং ধর্মীয় সৌহার্দ্যের এক অনুপম প্রতিচ্ছবি।
আরো পড়ুন→বান্দরবানে ৭ হাজার ঘনফুট অবৈধ বালুসহ ড্রেজার মেশিন জব্দ