বাংলাদেশ-ভারতের ঐতিহাসিক বন্ধুত্বের স্মারক মৈত্রী দিবস ২০২৫ উপলক্ষে ঢাকায় ভারতীয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে শুক্রবার এক বর্ণিল অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশন। এটি ছিল মৈত্রী দিবসের ৫৪তম বর্ষপূর্তি।
মৈত্রী দিবস স্মরণ করে ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বরের সেই ঐতিহাসিক দিনকে, যখন ভারত বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল—যা ছিল মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের দশ দিন আগে। ভারতের এই বিশেষ পদক্ষেপ বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রামকে আরও গতি দেয় এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে স্বীকৃতি পেতে বড় ভূমিকা রাখে।

অনুষ্ঠানে ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা বলেন, “মৈত্রী দিবস ভারত ও বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অমলিন মাইলফলক।” তিনি বলেন, ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে স্থিতিশীল, ইতিবাচক, গঠনমূলক, ভবিষ্যতমুখী এবং পারস্পরিক কল্যাণমূলক সম্পর্ক বজায় রাখতে অঙ্গীকারবদ্ধ—যা হবে সমতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার ভিত্তিতে, এবং যার মূল অংশীদার হবে দুই দেশের জনগণ।
তিনি আরও বলেন, “উভয় দেশ অতীতের যৌথ ত্যাগকে প্রেরণা হিসেবে নিয়ে, নতুন আকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতে ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাবে—এই প্রত্যাশা করি।”

অনুষ্ঠানে আয়োজন করা হয় এক মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার, যেখানে দুই দেশের দীর্ঘ দিনের সাংস্কৃতিক বন্ধন ফুটে ওঠে। প্রথম পরিবেশনা ছিল ‘৭১ ইন সাইলেন্স’, যা সান্দারাম প্রোডাকশনের প্রতিবন্ধীবান্ধব থিয়েটার-পরিবেশনা। রমেশ মায়াপন পরিচালিত এই পরিবেশনাটি শারীরিক গল্প বলার কৌশলে মুক্তিযুদ্ধের সূচনা থেকে মানবিক ক্ষয়ক্ষতির গল্প তুলে ধরে।
এরপর শ্রিষ্টি কালচারাল সেন্টার—খ্যাতনামা নৃত্যপরিচালক আনিসুল ইসলাম হিরো–এর কোরিওগ্রাফিতে—নাচের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ভারতের ঐতিহাসিক সাংস্কৃতিক বন্ধন উপস্থাপন করে।
অনুষ্ঠানের শেষ অংশে জনপ্রিয় বাংলাদেশি ব্যান্ড শিরোনামহীন-এর প্রাণবন্ত পরিবেশনা দর্শকদের মুগ্ধ করে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধি এবং দেশের বিভিন্ন অঙ্গনের বিশিষ্টজনেরা।
ইতিহাস স্মরণের বাইরে গিয়ে মৈত্রী দিবস আজ দুই প্রতিবেশী দেশের সম্মিলিত ইতিহাস, মূল্যবোধ ও পারস্পরিক সহমর্মিতার প্রতীক হিসেবে দাঁড়িয়েছে। এই দিবসের উদযাপন যৌথ ত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা এবং ভবিষ্যতে আরও দৃঢ় অংশীদারত্ব গড়ে তোলার অঙ্গীকারকে পুনর্ব্যক্ত করে।