বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা। আষাঢ়ী পূর্ণিমা থেকে তিন মাস বর্ষাব্রত পালনের পর আসে প্রবারণা পূর্ণিমা । প্রবারণা হলো আত্মশুদ্ধির অনুষ্ঠান, অশুভকে বর্জন করে সত্য ও সুন্দরকে বরণের অনুষ্ঠান মহা ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে। এই পূর্ণিমা তিথিতে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা নিজ কৃত অপরাধ বা পাপ স্বীকার করে পরিশুদ্ধ হয়। পাশাপাশি বৌদ্ধ ধর্মালম্বীরা ৩ মাসে উপবাস পর পূর্ণিমা দিনে সব কিছু ত্যাগ করে আনন্দে ভেসে উঠে।
এইদিকে প্রবারণা পূর্ণিমা উৎসবের উদযাপনকে ঘিরে বান্দরবানে শহর,গ্রাম ও পাড়া মহল্লায় পুরোদমে চলছে ফানুস ও রথ বানানো তৈরী কাজ। ব্যস্ত সময় পার করছেন ফানুস ও রথ বানানো শিল্পীরা। প্রবারণা উৎসবকে সামনে রেখেই প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে ফানুস ও রথ তৈরী কাজ।
জেলা শহর ঘুরে দেখা যায়, বান্দরবান সদর, বালাঘাটা,কালাঘাটা,রেইছা,সুয়ালক,জামছড়ি, রোয়াংছড়িসহ পাহাড় জুড়ে নতুন নতুন জামা-কাপড় কেনা থেকে শুরু করেই পিঠা তৈরি আয়োজন,ফানুস বানানোসহ ব্যস্ততা সময় পাড় করছেন এই সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীর। তবে জেলা সদরে বরাবরের মতই অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ থাকছে মহামঙ্গল রথযাত্রা এবং ফানুস উড়ানো উৎসব ।
রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি মারমা অধ্যুষিত পল্লীতে শুধুমাত্র ধর্মীয় অনুষ্ঠানমালার পালন করে থাকে। রাজ হংসীরর আদলে গড়া রথ তৈরি করা হচ্ছে বাঁশ বেত আর হরেক রকমের কাগজ দিয়ে। শিল্পিরা শেষ সময়ের রং তুলির আঁচড় দিচ্ছেন রথে ।আর অনুষ্ঠানের মাত্রাকে আরো বাড়িয়ে দিতে তৈরি করা হচ্ছে রং বেরং এর কাল্পনিক ভূত । পাহাড়ের বিহারগুলোতে যুবক যুবতীরা ভগবান বুদ্ধের উদ্দেশ্য তৈরি করছে নানা রং এর ফানুস ।তাছাড়া পাহাড়ের বিহারগুলোতে বিশেষ করে উড়তি বয়সি যুবকরা ভগবান বুদ্ধের পূজা উদ্দেশ্যে তৈরি করছে নানা রংঙের এর ফানুসবাতি । আর সেই ফানুস ও রথ প্রবারণা পূর্ণিমাকে সামনে রেখে প্রস্তুতি সম্পন্ন হতেই চলেছে।
প্রবারণা উদযাপন পরিষদ তথ্য মতে,পার্বত্য এলাকায় বান্দরবানে পাহাড়ে বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের ২০ অক্টোবর বুধবার সকাল থেকে শুরু হতে যাচ্ছে মারমা সম্পদ্রায়ের অন্যতম উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমা বা ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে।প্রবারণাকে কেন্দ্র করে আদিবাসী পল্লীগুলোতে চলছে উৎসবের মাতম । নানা রং এ সাজানো হয়েছে পাহাড়ের বিহারগুলো ।
এবার পাহাড়ের পালিত হবে তিন দিন ব্যাপী মাহাঃ ওয়াগ্যেওয়ে পোয়েঃ( প্রবারণা পূর্ণিমা) । প্রবারণা উদযাপনে প্রথম দিনেই শুরু হবে মহামঙ্গলময় শুভ রথযাত্রা। সন্ধ্যায় ৭ ঘটিকায় সময় ময়ুর পঙ্খীতে রথে গৌতম বুদ্ধকে বসিয়ে বান্দরবান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিন করা হবে। এর পাশাপাশি রং বেরং এর কাল্পনিক ভূত নৃত্য নেশায় ঘুরবে পুরো শহর জুড়ে। গেল বছর করোনা সংক্রামণে হার বেশি কারণে ধর্মীয় অনুষ্ঠানমালার সীমিত পরিসরে হয়েছে। তাছাড়া সব ধরণে জনসমাগম হয় এসব অনুষ্ঠামালা বর্জন করেছে। এবারে দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক বিরাজ করার ঘটা করে পুরোদমে উৎসবটি আয়োজন করতে যাচ্ছে। তবে সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযারি স্বাস্থ্যবিধি মেনে উৎসব পালন করতে যাচ্ছে এমনটিই জানিয়েছেন উৎসব উদযাপন পরিষদ।
মংসিং থোয়াই মারমা জানান, গেল বছরে করোনা কারণে প্রবারণা পূর্ণিমা উদযাপন করতে পারিনি। কিন্তু এই বছরে করোনা হতে রোগ মুক্তি চেয়ে পালন হবে মহা ওয়াগ্যেয়ে পোয়ে( প্রবারণা পূর্ণিমা)। এই প্রবারণা পূর্ণিমায় বৌদ্ধ কাছে মন খুলে প্রার্থনা চাইব যাতে করোনা যেন দূর হয় ও দেশের যেন সুখ শান্তিময় ফিরে আসুক।
ফানুস তৈরী কারিগর মংটিং ও সিনুমং মারমা জানান, এইবারে ফানুস তৈরী করা হয়েছে প্রায় এক হাজার উপরে। বানানো ফানুসের মধ্যে হাতী ফানুস, নৌকা ফানুস, প্যারাসুট ফানুস ও গোল ফানুস তৈরী করা হয়েছে। যা সম্পুর্ণভাবে তৈরী করতে সময় লেগেছে ১৫ দিনের মত। আমরা বন্ধুমহল মিলে ফানুস তৈরী করেছি। এই ফানুসগুলো ২০ ও ২১ তারিখে বিভিন্ন স্থান হতে চুলা মনি উদ্দেশে আকাশে উড়িয়ে দেওয়া হবে।
রথ কারিগর ক্যএসিং মারমা জানান, রথ তৈরীতে প্রায় মাসখানেক মত সময় লেগেছে। আজ সব কিছু কাগজ লাগানো শেষ হলে আগামিকাল রঙ তুলি দিলে পূর্ণিমা দিন আগেই রথটি পুরোপুরি সম্পন্ন করতে পারবো আশা করছি। এই রথ ২০শে অক্টোবর প্রবারণা প্রথম দিনে বিহারেউদ্দেশে নিয়ে যাওয়ার হবে। সন্ধ্যায় দিকে পুরো বান্দরবান শহর ঘুরে মঙ্গলময় রথ শোভযাত্রা প্রবারণা উৎসব ইতি টানা হবে মধ্য দিয়ে শেষে মধ্যরাতে সাংঙ্গু নদীতে পানিতে ভাসিয়ে বির্সজন দেওয়া হবে।
বান্দরবান সদর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি শহিদুল ইসলাম বলেন, বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ৩ দিন ব্যাপী প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। পাশাপাশি অনুষ্টানে দিনে শুরুতেই আইনে পোশাক ও সাদা পোশাকে সব স্থানে পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে। যাতে সুশৃঙ্খলা ভাবে অনুষ্ঠানে সমাপ্তি হয়।