নাইক্ষ্যংছড়ি প্রতিনিধিঃ বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত এলাকায় ভয়াবহ এক ঘটনার শিকার হয়েছে একটি বন্যহাতি।
স্থলমাইনের বিস্ফোরণে হাতিটির ডান পায়ের গোড়ালির বড় একটি অংশ উড়ে গেছে।
ধারণা করা হচ্ছে, রাখাইন বিদ্রোহীরা সীমান্ত এলাকায় পেতে রাখা মাইনেই হাতিটি আহত হয়েছে। বর্তমানে এটি উপজেলার চাকঢালার চেরারমাঠ এলাকার ঐট্টাইল্যাঝিরিতে অবস্থান করছিল।
নাইক্ষ্যংছড়ি বন রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হক সরকার জানান, স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পাওয়ার পরপরই তিনিসহ নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বিবিসি এফ সভাপতি জুবাইরুল হক ও সেক্রেটারি মাষ্টার জাকের হোসাইনসহ বিবিসি এফ এর অন্যান্য সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছান এবং আহত হাতির চিকিৎসা দেওয়ার জন্য সার্বিক সহযোগীতা করেন।
সেখানে গিয়ে দেখা যায়, হাতিটি গভীর ক্ষতের যন্ত্রণায় নড়াচড়া করতে পারছে না। পায়ের গোড়ালির মাংস ও হাড়ের বড় অংশ উড়ে গেছে।
তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, খাদ্যের সন্ধানে হাতিটি মিয়ানমারের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেছিল। সেখানে পেতে রাখা স্থলমাইনে পা দেওয়ার পর ভয়াবহ বিস্ফোরণে তার পা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে আহত অবস্থায় এটি বাংলাদেশ সীমান্তে চলে আসে।
ঘটনার খবর উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হলে
গতকাল ১২ আগস্ট মঙ্গলবার সকালে কক্সবাজারের দোলাহাজারা সাফারি পার্কের পশু চিকিৎসক ডা.জুরকার নাইন চিকিৎসা দল নিয়ে নাইক্ষ্যংছড়িতে আসেন।
তবে চিকিৎসা শুরুর আগে হাতিটিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। দীর্ঘ সময় অনুসন্ধানের পর হামিদিয়া পাড়া নদীর তীরে হাতিটিকে পাওয়া যায়।
পরে সেটিকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয় এবং ক্ষতস্থানে ওষুধ প্রয়োগ করা হয়।
ডা. জুরকার নাইন জানান, “হাতিটির আঘাত মারাত্মক হলেও আপাতত সংক্রমণ ঠেকাতে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তার পায়ের ক্ষত শুকাতে সময় লাগবে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রাখা হবে।”
স্থানীয়রা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী এলাকায় সংঘর্ষ বেড়ে গেছে। রাখাইন বিদ্রোহীরা ও মিয়ানমারের সেনারা একে অপরের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক পুঁতে রাখছে। এতে শুধু মানুষ নয়, সীমান্তের বন্যপ্রাণীরাও বড় ঝুঁকিতে রয়েছে।
নাইক্ষ্যংছড়ির এক গ্রামবাসী বলেন, “আমরা আগে শুনেছি, মাইন বিস্ফোরণে মানুষ মারা গেছে। এখন আবার বন্যহাতিও আহত হলো। এভাবে চলতে থাকলে মানুষ ও পশুপাখি—দুজনের জীবনই হুমকিতে পড়বে।”
প্রাণীপ্রেমী ও পরিবেশবিদরা বলছেন, সীমান্তে বন্যপ্রাণীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং মাইন অপসারণে আন্তর্জাতিক উদ্যোগ প্রয়োজন। একইসঙ্গে আহত হাতিটির দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করাও জরুরি।
নাইক্ষ্যংছড়ির স্থানীয় প্রশাসন ও বন বিভাগ এ বিষয়ে সতর্ক অবস্থানে আছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
আরো পড়ুন→