রুমা প্রতিনিধিঃ বান্দরবানের রুমা উপজেলার ৩ নং রেমাইক্রী প্রাংসা ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডে অবস্থিত দুলাচান পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক উপস্থিতি ও পাঠদানে ভয়াবহ অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়দের দাবি—শিক্ষকরা পালাক্রমে স্কুলে উপস্থিত থাকলেও নিয়মিত পাঠদান বন্ধের পর্যায়ে পৌঁছেছে।
জানা গেছে, ইউএনডিপি পরিচালিত জাতীয়করণপ্রাপ্ত এই বিদ্যালয়ে মোট ৬ জন শিক্ষক কর্মরত থাকা সত্ত্বেও মাসে সর্বোচ্চ ২ জন শিক্ষক স্কুলে উপস্থিত হন। এতে প্রতিদিনের পাঠদান নেমে এসেছে মাত্র ১ ঘণ্টায়, যা বিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষা কার্যক্রমকে প্রায় অকার্যকর করে তুলেছে।
প্রতিদিন ক্লাস হয় মাত্র ১ ঘণ্টা” যা ছাত্রছাত্রীদের জন্য বড়ই ক্ষতিকর। একাধিক পাড়াবাসী অভিযোগ করে বলেন “আমাদের পাড়ার স্কুলে প্রায়ই নতুন নতুন মুখ দেখা যায়। ভাবতাম সরকার নতুন শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছে। পরে বুঝলাম, শিক্ষকরা মাস শেষে বাড়িতে বসেই বেতন তোলেন। মাসে ৭ দিনও আসেন না, আর এলেও ক্লাস হয় মাত্র ১ ঘণ্টা।”
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয় বন্ধ—শিশুরা জঙ্গলে পাখি শিকারে ব্যস্ত এবং একজন শিক্ষকও বিদ্যালয়ে উপস্থিত নেই।
গতকাল ১৮ নভেম্বর সকালে সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়—দুলাচান পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি সম্পূর্ণ বন্ধ। বিদ্যালয়ের ফটকে তালা ঝুলছে, চারদিকে ঘোর নিস্তব্ধতা। পড়ালেখার সময়ের ওই সকালে বই-খাতা হাতে শিক্ষার্থীদের যেখানে ক্লাসে থাকার কথা, সেখানে দেখা গেল তারা পাশের জঙ্গলে ঘুরে বেড়াচ্ছে, কেউবা হাতে কান্টা নিয়ে পাখি শিকারে মেতে আছে। এই দৃশ্য বিদ্যালয়ের চরম অব্যবস্থাপনা এবং শিক্ষার্থীদের শিক্ষা থেকে ক্রমে বিচ্ছিন্ন হওয়ার বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে তুলে ধরে।
বিদ্যালয়ের শিক্ষক বামেচিং মারমা জানান— “দৈনিকভাবে স্কুলে যাওয়া–আসা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই ছয়জন শিক্ষক পালাক্রমে পাঠদান করি। মাস শেষে একসঙ্গে হাজিরা খাতায় পুরো মাসের স্বাক্ষর করে দেই শিক্ষা অফিসারও বিষয়টি জানেন।”
হাজিরা খাতায় এক মাসের স্বাক্ষর একসাথে
হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর প্রসঙ্গে তিনি বলেন—“আমরা মাস শেষে একসঙ্গে হাজিরা খাতায় দৈনিক উপস্থিতির স্বাক্ষর দিই।” তিনি আরও স্বীকার করেন, এভাবে উপস্থিতি দেখানো সরকারি নথিতে মিথ্যা তথ্য প্রদান, যা আইনগতভাবে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধেও অভিযোগ
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মংপাও ম্রোর বিষয়ে পাড়াবাসীদের অভিযোগ— তিনি নিজ পাড়ায় অবস্থান করলেও নিয়মিত স্কুলে পাঠদান করেন না। বরং অধিকাংশ সময় ব্যয় করেন জুমচাষ ও বাগানের কাজে।

শিক্ষক শিক্ষার্থী অনুপস্থিত, ফাঁকা ক্লাসরুম।
স্থানীয়দের অভিযোগ—“সরকার তাকে স্কুলে পাঠদানের জন্য বেতন দেয়, কিন্তু তিনি অধিক সময় কৃষিকাজে ব্যয় করেন। এতে আমাদের শিশুর ভবিষ্যৎ অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছে।”
এই বিষয়ে জানতে, “উপজেলা শিক্ষা অফিসারের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেও তাকে পাওয়া যায়নি।” ফলে বিদ্যালয়ের অনিয়ম সম্পর্কে তার মতামত জানা সম্ভব হয়নি।
পাড়াবাসীরা দ্রুত তদন্ত কমিটি গঠন এবং প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন, যাতে শিক্ষার্থীরা নিয়মিত ও মানসম্মত শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পায়।
আরো পড়ুন→নাইক্ষ্যংছড়িতে ধানের শীষের প্রার্থী সাচিং প্রু জেরীর নির্বাচনী প্রচারণা