রুমা প্রতিনিধিঃ বান্দরবানের রুমা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা দপ্তরে সহকারী শিক্ষা অফিসারের দুটি পদ দীর্ঘ এক বছর ধরে শূন্য পড়ে থাকায় তদারকি, মনিটরিং ও শিক্ষার মান নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। অভিভাবকরা অভিযোগ করছেন—গণমাধ্যমে অনিয়ম প্রকাশিত হলেও উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আশিষ চিরান জানান, উপজেলা পর্যায়ে সরাসরি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা নেই। অভিযোগ গেলেও তা উপজেলা থেকে জেলা শিক্ষা অফিস হয়ে পার্বত্য জেলা পরিষদ পর্যন্ত পৌঁছাতে হয়। এই দীর্ঘ প্রশাসনিক প্রক্রিয়ার কারণেই দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ সম্ভব হয় না। তিনি আরও জানান, অনেক শিক্ষক জেলা পরিষদের বিভিন্ন প্রভাব ব্যবহার করে শাস্তিমূলক ফাইল আটকে রাখেন।
উপজেলা শিক্ষা অফিসারের বছরে ন্যূনতম ৫টি এবং সহকারী শিক্ষা অফিসারের ১০টি বিদ্যালয় পরিদর্শনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু দুইটি পদ শূন্য থাকায় অধিকাংশ বিদ্যালয় নিয়মিত পরিদর্শনের বাইরে থাকছে। ফলে শিক্ষকরা নিয়মিত পাঠদান করছেন কি না—তা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় অভিভাবক ও শিক্ষানুরাগীদের ভাষ্য, রুমা উপজেলার বিভিন্ন পাড়া–মহল্লায় প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা দিন দিন দুর্বল হয়ে পড়ছে।দীর্ঘদিনের অস্থিরতা, সামাজিক সমস্যা এবং শিক্ষার অনুকূল পরিবেশের অভাবও এ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করছে।
বহিরাগত শিক্ষক নিয়োগে অসন্তোষ
স্থানীয়দের অভিযোগ, শিক্ষক নিয়োগে স্থানীয় বাসিন্দাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে না। বহিরাগত শিক্ষকরা দায়িত্ববোধ, উপস্থিতি ও জবাবদিহিতায় পিছিয়ে পড়ায় শিক্ষার মান কমছে। তাদের দাবি—নিজ এলাকার মানুষ শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেলে দায়িত্ববোধ বাড়ে এবং বিদ্যালয়ের উপস্থিতি নিশ্চিত হয়।
দুর্গম এলাকায় পাঠদান ব্যাহত
বিশেষ করে বম সম্প্রদায়ের দুর্গম পাড়ার কয়েকটি বিদ্যালয়ে নিয়মিত পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। এতে এসব এলাকার শিক্ষার মান উল্লেখযোগ্যভাবে নেমে গেছে। জাতীয়করণকৃত বিদ্যালয়গুলোর অবস্থাও ভালো নয়—গুণগত শিক্ষা, ক্লাস নেওয়ার ধারাবাহিকতা ও সার্বিক শিক্ষাদানের মান নিয়ে প্রশ্ন বাড়ছে।
অবসরপ্রাপ্ত এক শিক্ষক বলেন, “জেলা পরিষদ স্থানীয়দের বাদ দিয়ে বহিরাগত শিক্ষক নিয়োগ করে বড় ভুল করেছে।”
রুমা উপজেলা সমাজ প্রতিনিধি পিপলু মারমা বলেন, নিয়মিত মনিটরিং জোরদার করা জরুরি এবং নিয়োগে স্থানীয়দের অগ্রাধিকার দিলে পাহাড়ি এলাকার বিদ্যালয়গুলো আরও সক্রিয় হবে।
অভিভাবক ও সংশ্লিষ্টদের মতে—সহকারী শিক্ষা অফিসারের পদগুলো দ্রুত পূরণ শিক্ষক শৃঙ্খলা ব্যবস্থায় প্রশাসনিক প্রক্রিয়া সহজীকরণ নিয়মিত মনিটরিং জোরদার হলে রুমা উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা পুনরুজ্জীবিত হতে পারে।
তাদের দাবি—“পদশূন্যতা অব্যাহত থাকলে শিক্ষার মান আরও সংকটে পড়বে।”
আরো পড়ুন→রাঙ্গামাটি শিক্ষক নিয়োগে বিভ্রান্তি নিয়ে আঞ্চলিক পরিষদের বিবৃতি