রুমা প্রতিনিধিঃ বান্দরবানের রুমা উপজেলা সদর ইউনিয়নের বগালেকগামী সড়কের পাশে অবস্থিত প্রংফুংমগ পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় দীর্ঘদিন ধরে ভয়াবহ শিক্ষক সংকটে ভুগছে। বিদ্যালয়ে তিনজন শিক্ষক পদায়ন থাকলেও বর্তমানে মাত্র একজন শিক্ষকই একাই পুরো বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে এলাকার শতাধিক শিক্ষার্থী মারাত্মকভাবে শিক্ষা বঞ্চনার শিকার হচ্ছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ শিক্ষকরা নিয়মিত বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকেন না, কিন্তু মাসে মাসে ঠিকই তুলে নেন সরকারি বেতন, বিদ্যালয়টি সড়কের একেবারে পাশে হলেও অধিকাংশ শিক্ষক নিয়মিত বিদ্যালয়ে উপস্থিত হন না। দায়িত্ব পালনেও চরম অবহেলা ও অনিয়ম লক্ষ্য করা যায়। মাসের পর মাস শহরে অবস্থান করে অনেকে ‘মৌখিক ছুটি’র অজুহাতে অনুপস্থিত থাকেন। ফলে পাহাড়ি জনপদের শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম প্রায় অচল হয়ে পড়েছে।
আজ (বুধবার) ৫ নভেম্বর সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়— বিদ্যালয়ে কেবল ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক উপস্থিত থেকে একাই সব শ্রেণির পাঠদান চালাচ্ছেন।
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক প্রবণ কান্তি দেব বলেন,“আজ বিদ্যালয়ে শুধু আমি রয়েছি, অন্য দুইজন শিক্ষক আসেননি।” ছুটি সংক্রান্ত বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সুনির্দিষ্ট কোনো জবাব দিতে পারেননি তিনি।
এই বিষয়ে বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফয়সাল বিন মোস্তাফিজ জানান, তিনি “প্রধান শিক্ষক হতে মৌখিক ছুটির অনুমতি নিয়ে” গত চার দিন ধরে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত রয়েছেন। তবে লিখিত ছুটি ছাড়া অনুপস্থিত থাকা শৃঙ্খলাভঙ্গ—এই প্রশ্নে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
অন্য সহকারী শিক্ষক মো. মহিউদ্দীনের মোবাইল ফোন একাধিকবার চেষ্টা করেও বন্ধ পাওয়া গেছে, ফলে তাঁর বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
স্থানীয় অভিভাবকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমাদের ছেলে-মেয়েরা প্রতিদিন স্কুলে গিয়ে খালি ক্লাসরুম দেখে ফিরে আসে। সরকার এত উদ্যোগ নিচ্ছে, কিন্তু শিক্ষক না থাকলে শিক্ষার উন্নয়ন হবে কীভাবে?”
পঞ্চম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী জানায়,“আমাদের স্কুলে কোনো দিন তিনজন শিক্ষক একসঙ্গে ক্লাস নেননি। প্রায় সব ক্লাসই একজন স্যার একাই করান।”
উপজেলা শিক্ষা অফিসার আশিষ চিরান বলেন,“সরকারি ছুটি ব্যতীত কিংবা ছুটির আবেদন ছাড়া কেউ কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকলে বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
অভিভাবক ও স্থানীয় জনগণ বলেন, “এভাবে যদি শিক্ষা কার্যক্রম চলতে থাকে, তবে পাহাড়ি অঞ্চলের শিশুরা শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিতই থেকে যাবে।”
তাঁরা শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রতি আহ্বান জানান– অবিলম্বে শিক্ষক সংকট নিরসন।
আরো পড়ুন→বান্দরবান বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মহাপিন্ডদান অনুষ্ঠান সম্পন্ন