বান্দরবান জেলায় অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী এবং সকলের প্রিয়। বান্দরবান জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সফল সভাপতি ও বাংলাদেশ তঞ্চঙ্গ্যা কল্যাণ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি পরিচ্ছন্ন ও বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ, সকল সম্প্রদায় ও সকল রাজনৈতিক দলের সমানভাবে শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন।
আজ বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৬ ঘটিকায় চট্টগ্রামের ইমপেরিয়াল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
পারিবারিক তথ্য মতে, হেপাটাইটিজ-বি আক্রান্ত হয়ে কয়েকদিন ধরে চিকিৎসাধীন ছিলেন। গতকাল রাতে হঠাৎ তাঁর রক্তচাপ কমে যায়। চিকিৎসকরা দ্রুত নিবিড় পর্যবেক্ষেণ ইউনিটে (আইসিইউ) নিয়ে যান। সকালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
প্রসন্ন কান্তি তঞ্চঙ্গ্যার জন্ম ১৯৫৩ সালের ১৬ নভেম্বর রাঙামাটি বিলাইছড়ি উপজেলার ফারুয়া ইউনিয়নের তিনকোনিয়া এলাকায়। তাঁরা চার ভাই, চার বোন। বাবা সাতকমল তঞ্চঙ্গ্যা ও মাতার নাম ফুলেশ্বরী তঞ্চঙ্গ্যা। কাপ্তাই বাঁধে বসতভিটা,জায়গাজমি হারিয়ে উদবাস্তু হয়ে তাঁদের পরিবার চলে আসে বান্দরবান সদর উপজেলার রেইচা এলাকায়। সেখানে তাঁর বাবা সাতকমল তঞ্চঙ্গ্যা পাড়া গড়ে তুলেন। ফারুয়াতে সাতকমল ছিলেন হেডম্যান। রেইচা পাড়াটি বাবার নাম প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রসন্ন কান্তি তঞ্চঙ্গ্যা বান্দরবানসহ তিন পার্বত্য জেলায় একজন সকলের পরিচিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তরুণ বয়সে জনসংহতি সমিতিতে যোগ দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি ক্যাপ্টেন দুর্জয় নামে পরিচিত ছিলেন। পরে অস্ত্র সমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন তিনি। ১৯৮৯ সালে বান্দরবান পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদে তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায় থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সদস্য নির্বাচিত হন প্রসন্ন কান্তি তঞ্চঙ্গ্যা।
এরপর ১৯৯১ সালে জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এবং ১৯৯৮ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত টানা জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে যুক্ত থাকার সময়ে আততায়ির গুলিতে জীবনে রক্ষা পেলেও চিরতরে পঙ্গুত্ব বরণ করেন। পঙ্গু অবস্থায় তিনি দীর্ঘ ১৭ বছর বান্দরবান জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৪ সালে দলীয় আন্তঃদলীয় কোন্দলের কারণে তিনি সংসদ নির্বাচনে দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থী হন আওয়ামীলীগ ত্যাগ করতে বাধ্য হন।
২০১৪ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বান্দরবান-৩০০ আসনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিলেও পরবর্তীতে সক্রিয় রাজনীতি থেকে দূরে সরে যান। তবে তিনি বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় কার্যক্রমে যুক্ত ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ তঞ্চঙ্গ্যা কল্যাণ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন।
প্রসন্ন কান্তি তঞ্চঙ্গ্যা তিন ছেলের জনক। বড় ছেলে মিকন তঞ্চঙ্গ্যা (উপসচিব) বর্তমানে দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশের দুতাবাসে কর্মরত। মেজ ছেলে ব্যবসায়ী এবং ছোট ছেলে একজন বৌদ্ধ ভিক্ষু। তার বড় ছেলে দেশে ফেরার পর রেইচা সাতকমল পাড়ায় শ্বশানে তার দাহক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, তিন ছেলে, দুই পুত্রবধুসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
তাঁর মরদেহ আজ প্রথমে বান্দরবান জেলা শহরের নিউগুলশান এলাকার বাসভবণে নিয়ে আসা হবে। শুভাকাঙ্খীদের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে গ্রামের বাড়ি সাতকমলপাড়ায় নেওয়া হবে। সেখানে আগামিকাল শুক্রবার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া হবে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা।
রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তার প্রস্থান পুরো জেলার জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
আরো পড়ুন→নিউইয়র্কে এনসিপি নেতাদের ওপর হামলার প্রতিবাদে বান্দরবানে বিক্ষোভ