নিজস্ব প্রতিবেদকঃ রোয়াংছড়ি -রুমা-থানচি উপজেলায় নিরাপত্তা জনিত কারণে পর্যটন স্পষ্ট গুলো বন্ধ রাখা হয়েছে। দীর্ঘ একমাস পর ৭’নভেবর বৃহস্পতিবার নীলগিরি সহ অন্য সব পর্যটনে পর্যটকদের জন্য জারি করা ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা সরিয়ে দেয়া হয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে পর্যায়ক্রমে রোয়াংছড়ি -রুমা-থানচি উপজেলায়ও পর্যটন স্পটসমুহ খুলে দেওয়া হবে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন।
বুধবার (৬নভেম্বর) সকালে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার বিষয়ক প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়োজন করেন বান্দরবান পার্বত্য জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন। এইসময় সাংবাদিকদের এই কথা জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার থেকে বান্দরবান সদর,নীলগিরি -লামা-আলিকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার পর্যটন স্পটসমুহে পর্যটকরা নির্বিগ্নে ভ্রমণ করতে পারবেন।
বিফ্রিংকালে জেলা প্রশাসক সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন,গত বছর ও এবছর শুরুর দিকে পাহাড়ে নতুন ভাবে গজে ওঠা সশস্ত্র কুকি-চীন সন্ত্রাসীদের নানান কর্মকাণ্ড ও রুমা-থানচি উপজেলায় ব্যাংক ডাকাতির ঘটনাকে কেন্দ্র করে সন্ত্রাসীদের দমনে যৌথবাহিনীর অভিযান পরিচালনা কালীন পর্যটকদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে পর্যটন স্পটগুলো ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
দেশের ভ্রমণপীপাষু পর্যটক ও পর্যটনশিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজন ব্যবসায়ীদের কথা মাথায় রেখে আগামীকাল ৭ই নভেম্বর থেকে জেলায় ৭টি উপজেলার মধ্যে রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচি উপজেলা ব্যতীত বাকি ৪টি উপজেলায় সকল পর্যটন স্পটগুলো ভ্রমণের নিষেধাজ্ঞা তুলে দেওয়া হলো।
এক প্রশ্নের জবাবে জেলা প্রশাসক শাহ মুজাহিদ উদ্দিন আরো বলেন,পর্যটন স্পট গুলোতে যথাযথ নিরাপত্তার জোরদারের জন্য জেলার পুলিশ প্রসাশন ও ট্যুরিস্ট পুলিশের টিম সজাগ থাকবে। এবং পর্যটন স্পটগুলোতে যেন বর্জ্যব্যবস্থাপনাসহ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বজায় রাখার জন্য জেলা প্রশাসন থেকে নিয়মিত তদারকি করা হবে।
যদি কোন পর্যটনস্পট, হোটেল-মোটেল ও কটেজে পরিবেশ ধ্বংসের প্রমাণ পেলে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও হুশিয়ার করেন জেলা প্রশাসক।
প্রশাসন সুত্রে জানা যায় , ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসের দিকে জেলার দূর্গম এলাকা গুলোতে সশস্ত্র সংগঠন গুলোর আনাগোনা বৃদ্ধি পাওয়ায় ২০২২ সালের ১৭ অক্টোবর রুমা – রোয়াংছড়িতে দেশি বিদেশি পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে স্থানীয় প্রশাসন। এই নিষেধাজ্ঞা কয়েক দফায় বাড়িয়ে রুমা-রোয়াংছড়ি- আলীকদম ও থানচি উপজেলায়ও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। পরে আলীকদম উপজেলা হতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হলেও রুমা-রোয়াংছড়ি ও থানচি উপজেলায় বহাল ছিল। ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও চলতি বছর ৩ ও ৪ এপ্রিল রুমা ও থানচিতে তিনটি ব্যাংকে ডাকাতি করে সশস্ত্র সংগঠন কেএনএফ। তারপর ৬এপ্রিল থেকে সন্ত্রাস দমনে যৌথবাহিনী অভিযান শুরু করে। চলমান অভিযানে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাসহ নিহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন।
এছাড়া প্রায় দুই বছরের বেশি সময় ধরে পর্যটকদের নিরাপত্তা জনিত কারণে জেলার রোয়াংছড়ি -রুমা ও থানচি তিন উপজেলা ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ থাকায় বান্দরবান ভ্রমণ প্রত্যাশীরা বান্দরবান ভ্রমণে বিমূখ হয়ে পড়েছেন। ফলে আশানুরূপ পর্যটক না পাওয়ায় জেলার পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যাবসায়ীরা প্রতিনিয়ত আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। তার মধ্যে আবারো অনিবার্য কারণ দেখিয়ে পর্যটকগণকে গত ৮ অক্টোবর ২০২৪ হতে ৩১ অক্টোবর ২০২৪ পর্যন্ত বান্দরবান পার্বত্য জেলায় ভ্রমণ থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ জানিয়েছিল জেলা প্রশাসন।
উল্লেখ্য, গত ৩০ অক্টোবর বান্দরবান জেলা হোটেল রিসোর্ট-ওনার্স এসোসিয়েশনসহ পর্যটন সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সাথে মতবিনিময় সভায় ৭থেকে ১০দিনের মধ্যে বান্দরবানের পর্যটন স্পটসমুহ পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন।
প্রেসব্রিফিংয়ে আরো উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার শহিদুল্লাহ কাওছার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (মানব সম্পদ ও উন্নয়ন) এসএম মনজুরুল হক,বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, ডিজিএফআই, বিজিবি”র উর্ধ্বতন কমর্কর্তা, সাংবাদিকসহ পর্যটন সংশ্লিষ্ট নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
(আরো পড়ুন)
থানচিতে ভিডব্লিউবি কার্যক্রমের নতুন চক্রের উপকাভোগী বাছাই সংক্রান্ত অবহিতকরণ সভা অনুষ্ঠিত