রুমা প্রতিনিধিঃ আজ সোমবার (১৪ অক্টোবর) উপজেলা পরিষদ সন্মেলন কক্ষে প্রবারণা ও কঠিন চিবর দান উপলক্ষে প্রস্তুতিমূলক সভায় নিরাপত্তার সর্বাত্তক আশ্বাসের পরও কঠিন চীবর দান উদযাপন না করা সহ সীমিত আকারে প্রবারণা পূর্ণিমা উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বান্দরবানের রুমা উপজেলার প্রবারণা পূর্ণিমা উদযাপন কমিটি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার জনাব মোহাম্মদ আতিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থিত ছিলেন রুমা সেনা জোনের প্রতিনিধি, রুমা বিজিবি ৯ এর প্রতিনিধি, রুমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং উপজেলার বিভিন্ন বিহারের বিহারাধ্যক্ষ ও প্রতিনিধি, বৌদ্ধ ধর্মীয় বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি, পাড়া প্রধান এবং গণমাধ্যমকর্মী বৃন্দ। প্রস্তুতিমূলক সভায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার সহ উপস্থিত অন্যান্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিনিধিরা আশ্বস্ত করেন যে, প্রতি বছর নির্বিঘ্নে যেভাবে প্রবারণা এবং কঠিন চিবর দান উদযাপন করা হয় এবছরও একই ভাবে কোন প্রকার নিরাপত্তায় শঙ্কিত না হয়েই উযাপনের জন্য প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে সব ধরণের সহযোগীতা প্রদান করা হবে।
প্রবারণা পূর্ণিমায় ফানুস উড়ানো বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম অনুষঙ্গ হলেও এবার ফানুষ ছাড়াই আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। সম্প্রতি পাহাড়ের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিবেচনায় অত্যন্ত সীমিত ও অনাড়ম্বর প্রবারণা উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রুমা প্রবারণা পূর্ণিমা উদযাপন কমিটি। বিহার কেন্দ্রিক (ছোয়াইং) অন্নদান, বিশেষ প্রার্থনা এবং মাহারথ টানা ছাড়া থাকছে না কোন সাড়ম্বর আয়োজন।
বর্ণিল ফানুস উড়ানো, হাজার প্রদীপ প্রজ্জলন, আতশবাজির ঝলকানি, প্রতিটি বিহারে সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া অনুষ্ঠান, মারমা ঐতিহ্যবাহী নাটক (পাংখুং) মঞ্চায়ন, পিঠাপুলির আয়োজন সহ আরো বেশ কিছু প্রবারণার অনুষঙ্গ বাদ দিয়েই এবার উদযাপিত হবে। বুধবার (১৬ অক্টোবর) থেকে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমা উদযাপন শুরু হবে।
প্রবারণাকে ঘিরে প্রতিবছর সাঙ্গু নদীর কোলঘেষে গড়ে ওঠা রুমার ছোট বাজার লোকে লোকারণ্য হয়ে থাকে, সরগরম হয়ে উঠে মারমাদের পাশাপাশি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী বড়ুয়া, চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যা পাড়াগুলো।
বান্দরবানের রুমা উপজেলার শতাধিক বৌদ্ধ বিহারে প্রবারণাকে সামনে রেখে চলছে প্রস্তুতি। বৌদ্ধরা প্রবারণা উৎসব অত্যন্ত সাড়ম্বরে পালন করে থাকে। ঘরে ঘরে আয়োজন করে নানা প্রকার উপাদেয় ভোজের, তৈরি করা হয় বিভিন্ন প্রকার পিঠা-পুলি। সকালে আবালবৃদ্ধবনিতা নতুন বস্ত্র পরিধান করে অন্ন ভোজ্য, প্রদীপ, ফুল ইত্যাদি সহ স্থানীয় বিহারে উপগত হয়ে বুদ্ধ পূজা এবং উপাসক-উপাসিকা, ভিক্ষু-শ্রামণদের আহার্যাদি দান করে থাকে। পঞ্চশীল ও অষ্টশীল গ্রহণসহ ধর্মীয় আচারাদী পালন করে। বিকালে ধর্মীয় আলোচনা অনুষ্ঠিত হয় এবং সন্ধ্যায় অত্যন্ত উৎসবমুখর পরিবেশে ওড়ানো হয় আকাশ প্রদীপ বা ফানুস বাতি। তবে এবারের প্রবারণা আয়োজন সীমিত করার সিদ্ধান্তে বিহারে কিছু ধর্মীয় আচারাদির বাইরে তেমন কিছুর দেখা মিলবে না।
প্রবারণা উৎসবে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ উপভোগ করতে পারেন, এটি পরিণত হয় অসাম্প্রদায়িক সার্বজনীন উৎসবে। এ উৎসব বৌদ্ধ সংঘের মধ্যে পারস্পরিক মৈত্রী, সম্প্রীতি ও শৃঙ্খলা বৃদ্ধি ছাড়াও জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার মধ্যে বন্ধুত্ব ও অসাম্প্রদায়িক ভাবধারা সুদৃঢ় করে।
প্রবারণা উৎসব শেষে মাসব্যাপী দিন তারিখ ভেদে প্রতিটি বিহারে কঠিন চিবর দানোৎসব শুরু হওয়ার কথা থাকলেও এবছর তা পালিত না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি রয়েছে।