রুমা প্রতিনিধিঃ বান্দরবানের রুমায় কেসপাঈ পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চারজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রায় এক বছর ধরে অনুপস্থিতির অভিযোগ উঠেছে। এই চারজনের মধ্যে তিনজন বান্দরবান সদর ও চট্টগ্রামে থাকেন এবং ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক থাকেন রুমা সদরের থানা পাড়ায়। অভিযোগ জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রুমা উপজেলায় স্থানীয়ভাবে ইউএনডিপি স্কুল হিসেবে পরিচিত ২৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ২০১৭ সালে ২০ ফেব্রুয়ারি জাতীয়করণ করা হয়। তার মধ্যে কেসপাঈ পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগ পান সাইপা খুমী ও জনথুমা ত্রিপুরা। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সাইপা খুমী বলেছেন, চলতি বছরে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ কর্তৃক জানুয়ারি মাসে প্রদীপ দাশ, আশরাফুল ইসলাম ও দেব জ্যোতি দাশ নামে এই তিনজন যোগদান করেন বিদ্যালয়ে । এতে ৩৬ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষকের সংখ্যা দাঁড়ায় পাঁচজনে।
বান্দরবান সদরে শিক্ষক প্রশিক্ষণে রয়েছেন উল্লেখ করে মুঠোফোনে শিক্ষক সাইপা খুমী বলেন, বান্দরবান থেকে আসা নতুন প্রদীপ দাশ, আশরাফুল ইসলাম ও দেব জ্যোতি দাশ নামের তিনজন শিক্ষক যোগদানের সময় এসেছিলেন বিদ্যালয়ে। যোগদানের পর বারবার বলার পরও উপস্থিত না হওয়ায় সবাই মিলে ভাড়া (বর্গা) শিক্ষক হিসেবে একজন ছেলেকে জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত রাখা হয়েছে। এ অবস্থায় নিয়োজিত শিক্ষকেরা সর্বশেষ কখন বিদ্যালয়ে গিয়েছিলেন, তা এই চারজন শিক্ষকের কেও বলতে পারেননি। জানতে চাইলে, গত ১লা জুলাই মাসে প্রশিক্ষণে আসার সময় শিক্ষক জনথুমা ত্রিপুরাকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দিয়ে এসেছেন উল্লেখ করে সাইপা খুমী বলেন, এখন বিদ্যালয়ে কাকে বর্গা শিক্ষক রাখা হয়েছে বা তারা চারজন শিক্ষক নিয়মিত উপস্থিত নাকি অনুপস্থিত তার কিছুই বলতে পারছেন না তিনি।
বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জনথুমা ত্রিপুরা পাহাড় কন্ঠকে বলেছেন, তার সহকর্মী প্রদীপ দাশ, আশরাফুল ইসলাম ও দেব জ্যোতি দাশকে মোবাইলে প্রায় সময় কল করে বিদ্যালয়ে আসার জন্য বলা হয়েছে, তারা আসেনি। নিজেকে একজন নারী উল্লেখ করে তিনি আরো জানান, এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কারণে বান্দরবান থেকে সহকর্মী তিন শিক্ষক না আসায় তারা চারজনই জুলাই মাস থেকে আজ পর্যন্ত (১৭ সেপ্টেম্বর) বিদ্যালয়ে যেতে পারেননি বলে স্বীকার করেন তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জনথুমা ত্রিপুরা পাহাড়কণ্ঠ’কে বলেন, নিরাপত্তার বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আশীষ চিরান পাহাড়কণ্ঠ’কে বলেছেন , সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তার এইসব বিদ্যালয় দেখার দায়িত্ব। পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দেবে। তা যাচাই বাছাই করে তিনি না পারলে বিষয়টি জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে পাঠাবেন, এটাই নিয়ম।
উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা আশীষ কুমার ধর পাহাড়কণ্ঠ’কে বলেছেন, ঢাকা থেকে ফিরে সরেজমিনে তদন্ত করে অনুপস্থিত থাকা শিক্ষকদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়া হবে।
শিক্ষক প্রদীপ দাশ বলেন, বিদ্যালয়টি দুর্গম এলাকা হওয়ার পাশাপাশি সেখানে থাকা খাওয়ার ভালো পরিবেশ নেই। শহরে ছোট থেকে বড় হয়েছি, এর ফলে সেখানকার পরিবেশের তারা খাপ খাওয়াতে পারছেন না। এসব বিষয়ই বিদ্যালয়ে দীর্ঘ সময় অনুপস্থিতির অন্যতম কারণ বলে উল্লেখ করেন তিনি।
আরেক শিক্ষক দেব জ্যোতি বলেন, ২০২৩ সালে ১লা ডিসেম্বর যোগদানের পর পরিস্থিতির কারণে বিদ্যালয়ে যেতে পারেননি। তবে ১৫ দিন আগে বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে লিখিত দরখাস্ত দিয়ে বেতন ভাতা হালাল করে উপভোগ করে আসছেন বলে জানান। যোগদানের প্রায় ১০ মাস পর বিরাজমান পরিস্থিতির অজুহাতে ১৫ দিন আগে লিখিত জানালে এর আগে সাড়ে নয় মাস বিদ্যালয়ে অনুপস্থিতি থেকে বেতন ভাতা উপভোগ কেমন করে হালাল করলেন এমন প্রশ্ন এড়িয়ে যান শিক্ষক দেব জ্যোতি। বান্দরবানে অবস্থান করার কথা উল্লেখ করে আগামী শনিবার রুমায় আসার কথা বললেও নির্দিষ্ট দিন তারিখ উল্লেখ করতে অস্বীকৃতি জানান দেব জ্যোতি। তিনি আরো জানান, বান্দরবান জেলা পরিষদ থেকে নিয়োগ দেওয়ার সময় তাদেরকে ছয় মাস পর ভালো একটা জায়গায় বদলি দেয়া হবে এই শর্তে তিনি কেসপাঈ পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় যোগদান করেছিলেন, তবে তার নিয়োগ পত্রে সেইভাবে কোথাও লেখা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি তা বলতে পারেননি।
এ বিদ্যালয়ে নিয়োজিত আরেকজন শিক্ষকের নাম মোহাম্মদ আসরাফুল ইসলাম। তার মুঠোফোনে বারবার কল দিলেও রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
অন্যদিকে স্থানীয় ইউপি মেম্বার লোএ খুমী বলেন, শিক্ষকদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা না গেলে এলাকার শিক্ষার্থীরা ঝড়ে পড়বে, শিশুদের ভবিষ্যৎ নষ্ট হবে, এমন শত শিক্ষক নিয়োগ দিলেও শিশুদের কোন উপকারে আসবেন।