নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বান্দরবানের রুমায় অপহৃত সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার নেজাম উদ্দিনকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর ও সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে,সংবাদ সন্মেলনে করেন,র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের(র্যাবের) আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
শুক্রবার, (৫এপ্রিল) সকাল ১১টায় পার্বত্য জেলা পরিষদ সন্মেলন কক্ষে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন(র্যাব) এর পক্ষ থেকে সংবাদ সন্মেলনে,র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান,গত মঙ্গলবার(২ এপ্রিল)৯টার দিকে বান্দরবানের রুমা সোনালী ব্যাংকে শতাধিক অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত কুকি-চীন সদস্যরা তাদের নিজস্ব পোশাক পরে সোনালী ব্যাংকের উত্তর দিক (বেথেল পাড়া)থেকে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে বিদ্যুৎ না থাকার সুযোগে অতর্কিত হামলা করে মারধর করে অস্ত্রেরমুখে পুলিশ,আনসার ও অন্যান্য লোকজনদেরকে জিম্মি করে ফেলে।এসময় সোনালী ব্যাংকের ডিউটিরত গার্ড কনস্টেবলসহ সর্বমোট ১০ জনকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ২টি এসএমজি ও ৬০ রাউন্ড গুলি, ৮টি চায়না রাইফেল ও ৩২০ রাউন্ড গুলি, আনসার সদস্যদের ৪টি শর্টগান ও ৩৫ রাউন্ড কার্তুজ লুট করে। এসময় সোনালী ব্যাংকের ভল্ট ভেঙ্গে টাকা লুটের চেষ্টা এবং টাকা না পেয়ে সোনালীব্যাংকের ম্যানেজার মোঃ নেজাম উদ্দীনকে অপহরণ করে নিয়ে যায়।
তিনি বলেন,এ ঘটনাটি জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ব্যাপক ভাবে প্রচার ও প্রকাশিত হলে দেশজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি ও জনমনে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠে। আর এ ঘটনাটি জানার সাথে সাথেই বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে র্যাবের একাধিক আভিযানিক দল। অপহৃত ব্যাংক ম্যানেজার ও অস্ত্র-গোলাবারুদ উদ্ধারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি ও তথ্য সংগ্রহসহ র্যাবের আভিযানিক কার্যক্রম শুরু করে।এরই ধারাবাহিকতায়,র্যাবের আভিযানিকদল একপর্যায়ে অপহৃত ব্যাংক ম্যানেজারের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ম্যানেজারের অবস্থান সনাক্ত করতে সক্ষম হয়। পরবর্তীতে সন্ত্রাসীদের সাথে কৌশলে বিভিন্ন চাপ প্রয়োগের ফলে সন্ত্রাসীরা একপর্যায়ে ম্যানেজারকে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করতে সম্মত হয়। ব্যাংক ম্যানেজারকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করার সময় যেন পরিবারের অন্য সদস্যরা অপহরণের শিকার না হয় সে লক্ষ্যে র্যাব সু-কৌশলে হস্তান্তর কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে র্যাবের একদল চৌকস সাদা পোষাকধারী সদস্য রুমা থানাধীন বেথেল পাড়া এবং বড়ুয়া পাড়ার আশেপাশে অবস্থান নেয়।পরে বৃহস্পতিবার(৪এপ্রিল) সন্ধ্যায় সন্ত্রাসীরা ম্যানেজারকে পরিবারে কাছে সম্পূর্ণ অক্ষত অবস্থায় ফিরিয়ে দেয়।পরে র্যাব সদস্যরা ম্যানেজার মোঃ নেজাম উদ্দিন এবং তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরসহ নিরাপত্তা দিয়ে র্যাব-১৫ এর বান্দরবান ক্যাম্পে নিয়ে আসে। র্যাবের কাছে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ব্যাংক ম্যানেজার মোঃ নেজাম উদ্দিন সন্ত্রাসীদের অর্তকিত হামলা এবং হামলার পরে তার সাথে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেয়।
ব্যাংক ম্যানেজার র্যাবকে জানায়,মঙ্গলবার(২এপ্রিল) রাতে রুমা সোনালী ব্যাংকে অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত শতাধিক সশস্ত্র কুকি-চীন সদস্যদের প্রত্যেকেই সোনালী ব্যাংক ডাকাতির উদ্দেশ্যে পূর্বপরিকল্পিত ভাবে সোনালী ব্যাংক এবং আশপাশ এলাকায় ভীতি সঞ্চার করে তাকে খুঁজতে থাকে।লোকের মাধ্যমে জানতে পেরে তাকে পার্শ্ববর্তী মসজিদে এশার নামাজ পড়ার সময় সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা মসজিদে প্রবেশ করে নামাজরত প্রত্যেক মুসল্লিকে জিম্মি করে প্রত্যেকের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন তাদের আয়ত্ত্বে নিয়ে নেয়।পরে তাকে অপহরণ করে নিয়ে যায়।এর আগে তিনি সন্ত্রাসীদের কৃষি কর্মকর্তা পরিচয় দিলে লোকদের জিজ্ঞাসা করে পরিচয় নিশ্চিত হয় কুকিচিন।এ সময় সন্ত্রাসীদের সবাই এক ধরণের সামরিক পোষাক পরা ছিল এবং প্রত্যেকের মুখমন্ডল কালো কাপড় দিয়ে ঢাকা ছিল এবং ব্যাংকের চারপাশে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা ঘিরে রেখেছিল।
ম্যানেজার র্যাবকে আরো জানায়,ম্যানেজারের কাছে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা জানতে চায়, ঘটনার দিন ব্যাংকে কত
টাকা নিয়ে আসা হয়েছে এবং ব্যাংকের ভল্টে মোট কত টাকা রক্ষিত আছে। সন্ত্রাসীরা অস্ত্রের মুখে ম্যানেজারের নিকট ব্যাংকের ভল্টের চাবি চাইলে তখন ম্যানেজার তাদেরকে কৌশলে ভল্টের চাবি দিতে অস্বীকৃতি জানায়। সন্ত্রাসীরা ভল্ট ভাঙ্গতে চেষ্টা করে এবং পরে ম্যানেজারের কাছ থেকে আরো জানতে পারে যে,ভল্টে আঘাত করলে সেন্সরের মাধ্যমে তাৎক্ষনিক ব্যাপারটি সোনালী ব্যাংকের হেড অফিস জেনে যাবে।
তখন তারা ব্যাংকে ম্যানেজারকে অপহরণ করে নিয়ে যায় এবং পাহাড়ী এলাকায় পৌঁছানো মাত্রই তার চোখবেঁধে ফেলে। টানা দুই থেকে আড়াই ঘন্টা কোন এক অপরিচিত পাহাড়ের ঝিরি পথে হাটিয়ে নিয়ে যায়।এই সময় তার সাথে ১০/১২ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসী ছিল।
র্যাব জানায়, অপহরণের পর সন্ত্রাসীরা ম্যানেজারকে তার পরিবারের সাথে যোগাযোগের সুযোগ দেয় এবং কোন প্রশাসনিক বা আইনি সহায়তা যাতে না নেয় তার পরিবারকে সেজন্য সতর্ক করে।পরিবারের সাথে যোগাযোগ হওয়ায় ঐ সূত্র ধরে র্যাব তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় তার অবস্থান সনাক্ত করে এবং র্যাবের মধ্যস্থতায় সোনালীব্যাংকের বান্দরবানের রুমা শাখার ম্যানেজার নেজাম উদ্দীনকে বান্দরবানের রুমা বাজার ও বেথেল পাড়ামধ্যবর্তী কোন এক স্থান থেকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।
এ ব্যাপারে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানায় র্যাব। এছাড়া সশস্ত্র সন্ত্রাসী কর্তৃক পুলিশ ও আনসার সদস্যদের নিয়ে যাওয়া অস্ত্র-গোলাবারুদ উদ্ধারের লক্ষ্যে র্যাবের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
প্রসঙ্গত, একের পর এক কেএনএফ এর সশস্ত্র হামলার কারনে পার্বত্য বান্দরবান জেলায় বসবাসরত মানুষের মাঝে চরম ভয় ও আতংক বিরাজ করছে ব্যবসা বাণিজ্যে অচলবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।