পেকুয়া(কক্সবাজার)প্রতিনিধিঃবাঁচার স্বপ্ন ছিল অনেক কিন্তু বাঁচতে পারেনি।অবশেষে নিয়তির কাছে পরাজয় মেনে নিয়ে পরপারে চলে গেলেন দিন মজুর ছৈয়দ আলম।কক্সবাজারের পেকুয়ায় গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে দ্বগ্ধ আহত দিনমজুর ছৈয়দ আলম (৩৫) ঢাকা শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ণ ও প্লাস্টিক সার্জারী ইনস্টিটিউট হাসপাতালে মারা গেছেন। তিনি উখিয়া উপজেলার বালুখালী এলাকার মৃত মোহাম্মদ হোছনের ছেলে। সোমবার (১২ জুলাই) সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
জানা যায়, গত ২ জুলাই দুপুর ১২টার দিকে পেকুয়া বাজারের পশ্চিম পাশে রুহুল আমিনের পার্টস ও গ্যারেজ দোকানে একটি অটোরিক্সার গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে ছৈয়দ আলমসহ ৮ জন অগ্নিদৃবগ্ধ হয়।
এ সময় তাকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। পরে তার অবস্থার বেগতিক দেখে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে চমেক হাসপাতালে রেফার্ড করে। জানাগেছে, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হলেও টাকার অভাবে তিনি মেডিকেলে চিকিৎসা নিতে পারেনি। ভাড়া বাসায় দ্বগ্ধ শরীর নিয়ে একজন পল্লী চিকিৎসক দ্ধারা কবিরাজী চিকিৎসা নেন। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় গত ৫জুলাই চমেক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে অবনতি হলে পরের দিন তাকে ঢাকায় রেফার্ড করেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৯ দিন পর তার মৃত্যু হয়।
সুত্র জানায়, রুহুল আমিনের একটি সিএনজি পার্টস ও গ্যারেজ দোকান রয়েছে। ওই গ্যারেজে জয়নাল নামের এক ব্যক্তি তার সিএনজি মেরামত করতে নিয়ে আসে। মিস্ত্রী সিএনজি মেরামতের সময় হঠাৎ গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়। এতে গ্যারেজ মালিক রুহুল আমিনসহ ৮জন আহত হয়।
স্থানীয় এলাকাবাসি ও ছাত্রলীগ নেতা ফারুক আজাদ জানান, নিহত ছৈয়দ আলম ৫/৬ বছর আগে থেকে ভোলাইয়াঘোনা এলাকায় নুর মুহাম্মদের বাড়িতে বাসা ভাড়া থাকতেন। সে একজন দিনমজুর। কিছু দিন আমার পার্টসের দোকানেও থাকতেন। নিহত ছৈয়দ আলম এখানকার সমাজের লোক হিসেবে পরিচিত হয়েছে বিধায় তাকে এখানেই দাফন করা হবে।
ছৈয়দ আলমের স্ত্রী সানজিদা বেগম জানায়, আমরা ভাড়া বাসায় থাকতাম। তিন শিশু সন্তানকে নিয়ে আমি করব। আমার তো আর কেউ রইলনা। এতিম বাচ্চাদের নিয়ে আমি কোথায় যাব। আল্লাহ আমারে কেন নিয়ে গেলিনা।
জানাগেছে, ছৈয়দ আলমের আত্মীয়স্বজন বলতে কেউ নেই। স্ত্রী সানজিদা বেগমের একই অবস্থা। মৃত্যুর আগেও ছৈয়দ আলম এতিম ছিল। মা, বাবা, ভাই-বোন বলতে কেউ নেই। ছৈয়দ আলমের নয়ন (৮) হাসান (৬) ও হুমায়ন কবির (৩) বছরের তিন শিশু সন্তান রয়েছে। এদিকে গত দশ দিন আগে এ প্রতিবেদকের সাথে ছৈয়দ আলমের কথা হয়। এ সময় তার স্ত্রী সানজিদা বেগম স্বামীর দ্বগ্ধ জায়গায় কেঁদে কেঁদে ওষুধ লাগাচ্ছেন। পাশে নির্বাক দৃষ্টিতে তার তিন শিশু সন্তান পাশে বসে আছে। বিদায়ের বেলায় ছৈয়দ আলম বলেন আমাকে রেখে কোথায় যাচ্ছেন। আমি যদি মরে যাই। আমি বাচঁতে চাই। নিয়তির কাছে পরাজয় বরন করে চলে গেলে না ফেরার দেশে।