পেকুয়া(কক্সবাজার )প্রতিনিধিঃ কয়েক সপ্তাহ পার হলো। এখনো তারা জানেনা তাদের পিতা আর তাদের মাঝে ফিরে আসবেনা। পিতা নেই সেকথা এখনো তারা বিশ্বাস করেনা। বিশ্বাস না হওয়া স্বাভাবিক। সে বয়স এখনো তাদের হয়নি। ঈদের নতুন জামা কিনে দিতে তাদের মার্কেটে আনা হবেনা। প্রতিবছর ঈদের নতুন জামা কিনে দিতে বায়না ধরত তারা। অন্য সবার মত ঈদ সেলামি দিতে আর বায়না ধরবেনা। বুকে তুলে নিবেনা অন্যদের মতো তাদের। তবে অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকবে বাবার জন্য। যাকে দেখে তাকে শুধু বার বার জিজ্ঞেস করে আমার বাবার কি হয়েছে। এতদিন হলো বাবা কেন বাড়িতে আসেনা। বুকে জড়িয়ে ধরে কেন আমাদেরকে নিয়ে ঘুমায় না। কতদিন হলো ঘুম পাড়ায় দেয়না। এতকিছু জিজ্ঞেস করলেও কোন সুদুত্তোর দিতে পারেনা তারা।একবার মায়ের কাছে, আরেক বার দাদি চাচাদের কাছে শুধু বাবার কথা জিজ্ঞেস করে। শান্তনা দেয়ার ভাষাও কারো কাছে নেই। শুধু মিথ্যা শান্তনা দিয়ে শত কষ্ট বুকে চেপে ধরে অঝুর নয়নে চোখের জল ফেলে। এছাড়া তাদের আর কি বা করার আছে।
কথাগুলি বলছিলাম নিহত জয়নাল আবেদীন দুই অবুঝ শিশু আয়ান (৫) ও জামিলার (৩) কথা। গত ২মে রাতে কক্সবাজারের পেকুয়ার মগনামায় ফুলতলা ষ্টেশনে একদল মুখোশপরা অস্ত্রধারী জয়নাল আবেদীনকে (৩৮) গুলি করে ও কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে। ঘাতকরা তাকে বাঁচতে দিলনা। জয়নালের অকাল এ মৃত্যু কেউ মেনে নিতে পারছেনা।জয়নাল হত্যাকান্ডে তার ছোট ভাই আমিরুজ্জামা বাদি হয়ে পেকুয়া থানায় ৩২জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন।
এছাড়া মামলায় আরো ১০জনকে অজ্ঞাত আসামি করে। ঘটনার রাতেই স্থানীয়রা ৫জনকে আটক করে পুলিশে দিয়েছে। ওই ৫জনকে মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে পুলিশ তাদের আদালতে সোপর্দ করে। ঘটনা এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও পুলিশ এখনো ঘাতকদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়নি। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে আসামিদের ধরতে পুলিশের একাধিক টীম নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের গ্রেপ্তার করা হবে। সাধারন মানুষেরও একটাই দাবী দ্রুত সময়ে আসামিদের গ্রেপ্তার করা হোক।ঘটনার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি হোক। একইভাবে নিরাপরাধ কোন ব্যক্তি যেন হয়রানি না হয়।
জয়নাল আবেদীন পরপারে চলে গেছে। অথচ জয়নালের হত্যাকান্ড নিয়ে এখন রশি টানাটানি শুরু হয়েছে। মামলায় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগ ও সহযোগি সংগঠনের একাধিক নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত না থেকেও হয়রানির করতে উদ্দ্যেশ্য প্রনোদিত হয়ে তাদেরকে আসামি করা হয়েছে বলে দাবী তুলছেন আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা। একইভাবে দাবী করছেন মামলার এসব আসামিরা। সকলের একটাই দাবী ঘটনার সাথে জড়িত থাকলেই তাদের শাস্তি পেতেই হবে। অপরাধী অপরাধীই। তাদের কোন দল থাকতে পারেনা। দলের নাম ভাঙ্গিয়ে যেন পার না পায়। আর প্রতিহিংসা পরায়ন হয়ে হত্যাকান্ডকে পুঁজি করে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীসহ কোন নিরাপরাধ ব্যক্তিকে যেন হয়রানি করা না হয়।
মামলা থেকে যেন তাদের অব্যহতি দেয়া হয়। বাড়ি ভাংচুর,অগ্নিসংযোগ, লুটপাট বন্ধ করা হোক এটা প্রশাসনের প্রতি সাধারন জনগনের জোরালো দাবী। জয়নাল হত্যার সর্বোচ্চ শাস্তি দাবী করছেন তার মাতা নুরুন্নেছা ও স্ত্রী জুলেখা বেগম। সাংবাদিকদের দেয়া এক সাক্ষাতকারে তারা এ দাবী করেছেন। এসময় তার দু’শিশুও পিতার ছবি বুকে জড়িয়ে ধরে পিতা হত্যার বিচার চায়।