বান্দরবানের রাজনৈতিক পরিচয়ে সক্রিয় হয়ে উঠেছে অবৈধ পাহাড় কাটা চক্র। এমনি একজন যুবদলের নেতা পরিচয় দেওয়া নাজিম উদ্দীনের নেতৃত্ব গড়ে উঠেছে অবৈধ পাহাড় কাটা চক্র। ইতিমধ্যে পাহাড় কাটার দায়ে একাধিক মামলা হলেও আইনকে বৃদ্ধা আঙ্গুল দেখিয়ে চলছে নাজিম চক্রের মাটি ও বালুর ব্যবসা। বান্দরবান জেলা সদরে বালাঘাটা স্বর্ণ মন্দির এলাকায় নির্মাণাধীন ১৩২/৩৩ কেভি গ্রিডের বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রের জমি ভরাটের দায়িত্ব নিয়ে, বান্দরবান এবং পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে রাতদিন প্রকাশ্যে অবৈধভাবে পাহাড় কেটে ও নদীর বালি উত্তোলন করে কোটি টাকার বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রের জমি ভরাট করছেন মো.নাজিম উদ্দিন।
স্থানীয় সূত্র থেকে জানাযায়, এই সকল অবৈধ কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভাবে স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের, নেতাকর্মীরা জড়িত রয়েছেন। জেলা পর্যায়ের কয়েক জন নেতার সহযোগিতায় কয়েকমাস আগে ১৩২/৩৩ কেভি গ্রিডের বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রের জমি ভরাটের প্রায় ২ কোটি টাকার কাজ নেন নাজিম। কাজ নেওয়ার পর থেকে পেশিশক্তি ও রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধ ভাবে পাহাড় কাটা ও বালি উত্তোলনে বেপরোয়া হয়ে উঠেন নাজিম উদ্দিন ও তার সহযোগীরা।
বান্দরবান জেলা সদরের কুহালং ইউনিয়নের বাকিছড়া, ভরাখালী,থোয়াইঙা পাড়া ও ১নং সদর ইউনিয়নের লেমুঝিরি আগা পাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রকাশ্যে অবৈধভাবে পাহাড় কেটে ও সাঙ্গু নদী থেকে বালি উত্তোলন করে শতশত ট্রাক মাটি ও বালি ১৩২/৩৩ কেভি গ্রিডের বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রের জমি ভরাট করছে।
বান্দরবান জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরসহ পুলিশ প্রশাসন কৃতক বিভিন্ন অভিযানে একাধিক জরিমানা ও মামলা করা হয় নাজিম উদ্দিন ও তার সহযোগীদের নামে। স্থানীয় সাংবাদিকরা বাধা দিলে তাদের গায়ে হাত তোলার অভিযোগে গ্রেফতার ও করা হয় নাজিম সিন্ডিকেটের কয়েকজন-কে এবং জব্দ করা হয় এক্সকাভেটর ডাম্পট্রাক।
স্থানীয় ও জাতীয় বিভিন্ন সংবাদপত্র, অনলাইন নিউজ পোর্টালের নাজিম গং এর বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার বিষয়টি নজরে আসে বান্দরবান পরিবেশ অধিদপ্তর ও উপজেলা প্রশাসনের। পরিবেশ অধিদপ্তর ও উপজেলা প্রশাসন দফায় দফায় অভিযান চালিয়ে মামলা দিয়েও ঠেকাতে পারেনি নাজিমের অবৈধ কর্মকাণ্ড।
নতুন ভাবে বান্দরবান জেলার পার্শ্ববর্তী চন্দনাইশ উপজেলার ধোপাছড়ি ইউপির ১ নং ওয়ার্ড সদস্য ও ধোপাছড়ি ইউনিয়ন বিএনপি’র সাবেক আহ্বায়ক মজিবুল হক খোকাসহ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, নাজিম খোকা মেম্বারের সাথে মিলে ধোপাছড়ি সেমি বড়ুয়া পাড়া এলাকার সাঙ্গু নদীর শুকিয়ে যাওয়া চর কেটে ট্রাকে ট্রাকে মাটি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এর ফলে বর্ষার মৌসুমে খুব সহজেই সাঙ্গু নদীর পানি সমতলে চলে আসবে। নদীর মোড় হতে এভাবে বালি উত্তোলন করা হলে ভবিষ্যতে নদী ভাঙনে কবলে পড়বে এবং তলিয়ে যাবে এলাকার বেশ কিছু অংশ। বড় বড় মাটির গাড়ি চলাচলের কারণে এলাকার রাস্তার দুরবস্থা দেখা দিয়েছে। মানুষ স্বাভাবিক ভাবে হাটা চলা করতেও পারছেন না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। স্থানীয়রা বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। সাঙ্গু নদীর উপর নির্মিত ব্রীজের পাশ ঘেঁষে বালু উত্তোলন করছেন নাজিম,খোকা মেম্বার ও সবুজের নেতৃত্বে। ধোপাছড়ি সেমি বড়ুয়া পাড়ার সাঙ্গু নদীর চর থেকে বালু উত্তোলন করে বালাঘাটা স্বর্ণ মন্দির সংলগ্ন নির্মাণাধীন ১৩২/৩৩ কেভি গ্রিডের বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রের জমি ভরাট করছেন।
নাম প্রকাশন না করার শর্তে স্হানীয় একজন বাসিন্দা জানান, নদীর চর থেকে বালু উত্তোলন করে পরিবহনের কারণে ধোপছড়ি হতে বান্দরবানের পর্যন্ত যেই সংযোগ সড়কটি রয়েছে সেটির বিভিন্ন অংশের পিচ উঠে গিয়েছে দিন দিন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে সড়কটি। খোকা মেম্বারের ভয়ে কেউ বাঁধা দেওয়ার সাহস করছে না।
সরজমিনে গিয়ে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, ২০২৪ সালে ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ সরকার কৃতক আয়োজিত চন্দনাইশ উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি’র দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ করায় ধোপাছড়ি ইউনিয়ন বিএনপির পদ হতে অব্যাহতি দেয়া হয় মজিবুল হক খোকা (মেম্বার)-কে, প্রশ্ন থেকে যায় ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর কার ছত্রছায়ায় অবৈধ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন মোজাম্মেল হক খোকা (মেম্বার) !
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে আরো জানাযায়, ৫ আগষ্টের পর বিএনপি’র নাম ব্যাবহার করে ধোপাছড়ি ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের সদস্য খোকা মেম্বার সাঙ্গু নদীসহ বিভিন্ন খাল হতে বালি উত্তোলনের সাথে সরাসরি জড়িত। রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে কেউ মুখ খুলছেন না তার বিরুদ্ধে। স্থানীয়রা আরো জানান চন্দনাইশ থানার অফিসার ইনচার্জ-কে এই বিষয়ে অবগত করার ৪ দিন পেরিয়ে গেলেও কোনধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি চন্দনাইশ থানা পুলিশ।
ধোপাছড়ি-সেমি ডলুপাড়া সংযোগ সড়ক ঘুরে দেখা যায়, দীর্ঘদিন যাবৎ এক নাগাড়ে বড় মাটি বোঝায় ট্রাক চলাচলের কারণে রাস্তার বিভিন্ন অংশের পিচ উঠে গিয়েছে, পুরো রাস্তা জুড়ে কাদামাটির কারণে বিপাকে পড়ছেন স্থানীয়রা। স্থানীয়দের চলাফেরায় ঘটছে ব্যাঘাত।
এই বিষয়ে ধোপাছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের ১ নং ওয়ার্ড সদস্য খোকা মেম্বারের সাথে মোটোফোনে যোগাযোগ করলে, তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেন এবং জানান সবুজ ও নাজিমের সাথে তার কোনধরনের ব্যবসায়িক সম্পর্কও নেই এবং বালি উত্তোলনের সাথে তিনি জড়িত না।
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে অভিযুক্ত যুবদল নেতা নাজিম উদ্দিনের সাথে মোটফোনে যোগাযোগ করলে, অসুস্থতার বাহানা দিয়ে বিষয়টি অস্বিকার করে নাজিম জানান, আমার মোজাম্মেল হক খোকা (মেম্বার) এর সাথে কোনো ব্যবসায়িক সম্পর্ক নেই কে বা কারা মাটি কাটছে বালি তুলছে আমি এইসব কিছু জানিনা। আমি অসুস্থ অবস্থায় বাসায় অবস্থান করছি।
কিন্তু রোববার ২৪ আগষ্ট ১৩২/৩৩ কেভি গ্রিডের বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রের জমি সংলগ্ন পশ্চিম বালাঘাটার এলাকাবাসী এদের কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ হয়ে। এই সিন্ডিকেটের মুখো-মুখি হয়। পরবর্তীতে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা খবর পেয়ে ঘটনা স্থলে ছুটে যান। গণমাধ্যম কর্মীদের উপস্থিতিতে বান্দরবান থানা পুলিশ-কে খবর দিলে তারা আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে গণস্বাক্ষর গ্রহণ করে চলে যান।
এর আগে পাহাড় কণ্ঠ ডটকম এর কাছে অভিযোগ অস্বিকার করলেও ২৪ আগষ্ট স্থানীয়রা যখন মাটি বোঝাইকারী গাড়ির মুখমুখি হয় তখন ঘটনা স্থলে উপস্থিত ছিলেন নাজিম সিন্ডিকেটের মূল হোতা যুবদল নেতা মো. নাজিম উদ্দিন। এসময় সাংবাদিকদের হুমকি স্বরূপ নাজিম বলেন মাটি আসছে চন্দনাইশ থেকে যা আপনদের আয়ত্তে পড়েনা।
আরো পড়ুন→মোবাইল চার্জ দিতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে গৃহবধূর মৃত্যু