কিছুদিন যাবত দেশের আনাচে কানাচে প্রতিদিন অহরহ ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এইসব ধর্ষণের ঘটনার মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে গত ৫ মার্চ রাতে মাগুরায় বোনের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে বনের স্বামী শশুর ও দেবর এর হাতে ধর্ষণ ও নিপীড়নের শিকার হওয়া ৯ বছরের শিশু আছিয়ার ঘটনা। পরবর্তীতে (১৩ মার্চ) ঢাকার সামরিক হাসপাতালে আছিয়ার মৃত্যু হয়। এই মর্মান্তিক ঘটনায় ফুঁসে উঠে সারাবাংলাদেশ।
ধর্ষণের মত নিকৃষ্ট অপরাধে পিছিয়ে নেই বান্দরবান পার্বত্য জেলাও। পার্বত্য জেলা বান্দরবানে ৬ দিনে ঘটেছে ৩টি ধর্ষনের ঘটনা।
রবিবার (১৬ মার্চ) সকাল ১১ টায় লামা উপজেলার ইসলামপুরের সন্দীপ পাড়া নামক এলাকায় এক বৃদ্ধ প্রতিবন্ধী মহিলাকে বাসায় একা পেয়ে পাশের জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করা হয়। পরেরদিন ঘটনা জানাজানি হলে এই ঘটনায় সিদ্দিকুর রহমান (৫৫) নামের একজনকে আটক করে পুলিশ। আসামি সিদ্দিকুর রহমান সন্দীপ পাড়ার মৃত লুৎফুর রহমানের ছেলে এবং আজিজনগর চাম্বি মফিজ বাজারের একটি হোটেলের নাস্তার কারিগর হিসেবে কাজ করে বলে জানাযায়। বিষয়টি নিশ্চিত করে লামা থানা পুলিশ জানায় তার বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা প্রক্রিয়াধীন।
লামায় ভারসাম্যহীন বৃদ্ধ নারীকে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া আসামি সিদ্দিকুর রহমান (৫৫)
এর আগে ১৪ মার্চ জেলার আলীকদম উপজেলায় আলীকদম থানাধীন ০৩ নং নয়াপাড়া ইউনিয়নের ০২ নং ওয়ার্ডের মংচা পাড়াস্থ বাড়ীর নিকটবর্তী মাতামুহুরী নদী থেকে গোসল করে ফেরার পথে মুখ চেপে ধরে পার্শ্ববর্তী তামাক ক্ষেতের ভিতর নিয়ে গিয়ে অষ্টম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষন করে ৪ যুবক এসময় মোবাইলে ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করে রাখে তারা। পরে এই ঘটনায় অভিযুক্ত ৪ জনকে আটক করে পুলিশ। আটককৃতরা উপজেলার ২ নং ওয়ার্ড, ৩নং নয়াপাড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা, মো করিম (১৯), মো রাসেল (২১), আব্দুল মুবিন (২০) ও মো ইকবাল (২৪)। ধর্ষণের ঘটনা প্রকাশ করলে ভিকটিমকে উক্ত ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে বলে জানা যায়। (১৯ মার্চ) বুধবার বিষয়টি নিশ্চিত করে বান্দরবান জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) আবদুল করিম একটি বিবৃতিতে গণমাধ্যমকে জানান, ভিকটিম আলীকদম থানায় ধর্ষণ এর অভিযোগ দায়ের করলে বান্দরবান পার্বত্য জেলার পুলিশ সুপার জনাব মোঃ শহিদুল্লাহ কাওছার পিপিএম (বার) মহোদয়ের নির্দেশনায় আলীকদম থানার অফিসার ইনচার্জের নেতৃত্বে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত ৪ জন কে গ্রেফতার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। ধর্ষণের ভিডিও ধারণকৃত মোবাইলটি উদ্ধার করা হয়েছে।
আলীকদমে স্কুলছাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া চার আসামি।
এই ঘটনার চারদিন আগে (১১ মার্চ) মঙ্গলবার জেলার আরেক উপজেলা লামায় স্বামীর সহয়তায় স্বামীর বন্ধু কৃতক গৃহবধু ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। উপজেলার মিরিঞ্জায় অবস্থিত মিরিঞ্জা ভ্যালি নামক রিসোর্টে এই ঘটনা ঘটে। জানাযায়, ধর্ষণের শিকার নারীর স্বামী মিরিঞ্জা ভ্যালি রিসোর্ট অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের নৈশপ্রহরী রুবেল। তার দ্বিতীয় স্ত্রী (ভুক্তভুগী) কে নিয়ে (৯ মার্চ) শনিবার রাতে রিসর্টে যান। পরে মঙ্গলবার রাতে তার সহায়তায় তার পাঁচ বন্ধু তার স্ত্রীকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। ভুক্তভোগী গৃহবধূ উক্তস্থান থেকে পালিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা গ্রহণ করেন। পরেরদিন থানায় গিয়ে পুলিশের কাছে পুরো ঘটনার বর্ণনা দেন তিনি।বুধবার এ ঘটনায় চার জনকে এজাহারনামীয় ও দুজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে লামা থানায় মামলা দায়ের করেন গৃহবধূ। এই ঘটনায় দুইজন কে গ্রেফতার করা গেলেও বাকিরা পলাতক। গ্রেফতারকৃত ভুক্তভুগীর স্বামী রুবেল (৩২) তার বন্ধু সাগর (৩০) কে জেলার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে পাঁচ দিনের রিমান্ড চাইলে তিন দিনের মঞ্জুর করেন বিচারক। বাকি আসামিরা হলো লামা পৌরসভার মধুঝিরি এলাকার দানু মিয়ার ছেলে জহির (৪০) ও লাইনঝিরি এলাকার কবিরের ছেলে মামুন (২৮)। এছাড়া মামলায় অজ্ঞাতনামা দুজনকে আসামি করা হয়। লামা থানা পুলিশ ঘটনাটির সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, বাকি আসামিদের ধরতে অভিযান চলমান রয়েছে খুব শীগ্রই তাদের গ্রেফতার করা হবে।
লামায় স্বামীর সাহায্যে স্বামীর বন্ধু কৃতক গৃহবধু ধর্ষণ মামলায় গ্রেফতার হওয়া রুবেল(৩২) ও সাগর (৩০)
ঘটনার কিছুদিন আগে (১০মার্চ) জেলার রোয়াংছড়ি উপজেলায় নির্মাণ শ্রমিক কৃতক খেয়াং সম্প্রদায়ের ১৬ বছর বয়সী এক মানসিক প্রতিবন্ধী কিশোরীকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে উঠে। জানাযায়, (১০ মার্চ) সোমবার বিকেলে রোয়াংছড়ি-রুমা সংযোগ সড়ক কাজে নিয়জিত জামাল হোসেন নামে এক শ্রমিক ভুক্তভুগীকে রাস্তা থেকে টেনে নিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করলে ভুক্তভুগী কিশোরী চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে, তার চিৎকার শুনে এলাকাবাসী এগিয়ে আসলে পালিয়ে যায় শ্রমিক জামাল। পরবর্তীতে বাকি নির্মাণশ্রমিকদের সহয়তায় জামালকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেয় এলাকাবাসী। আরো জানা যায় ভয়ে ভুক্তভুগীর পরিবার মামলা করতে না চাওয়ায় বুধবার (১২ মার্চ) পাড়ার কার্বারিসহ (পাড়াপ্রধান) কয়েকজন ব্যক্তি কিশোরীকে ধর্ষণের চেষ্টার ঘটনার সামাজিকভাবে বিচার করে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করে ছেড়ে দেওয়া হয়। বিষয়টি চাঞ্চল্য সৃষ্টি করলে নারী অধিকার নেত্রী ডনাইপ্রু নেলীর সাহায্য অভিযুক্ত শ্রমিক জামাল হোসেনকে (২৬) আসামি করে আজ (১৩ মার্চ) বৃহস্পতিবার কিশোরীর ভাই রোয়াংছড়ি থানায় এই মামলা করেন। মামলা দায়েরের পর ওই কিশোরী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জবানবন্দি দেয়।
রোয়াংছড়িতে খেয়াং সম্প্রদায়ের ১৬ বছর বয়সী এক মানসিক প্রতিবন্ধী কিশোরীকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া জামাল হোসেন (২৬)
এই বিষয়ে, রোয়াংছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.মঞ্জুর হোসেন জানান,পরিবারের সদস্যরা মামলা করতে রাজি না হওয়ায় জামাল হোসেন (২৬) কে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। জামাল হোসেনের বিরুদ্ধে বান্দরবান সদর থানায় ধর্ষণসহ আরও তিনটি মামলা রয়েছে। একটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও আছে। জামাল হোসেনের বাড়ি পটুয়াখালীর দশমিনায় হলেও দীর্ঘদিন ধরে বান্দরবান জেলা শহরের ওয়াপদা ব্রিজ এলাকায় বসবাস করে সে।
আরো পড়ুন→নাইক্ষ্যংছড়ি বিজিবির ধারাবাহিক অভিযানে ১৯ লক্ষ টাকার বার্মিজ গরু ও সুপারি জব্দ