বান্দরবান লামা উপজেলায় পাহাড়ীদের জুম চাষের বাগান পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় আমরা উদ্বিগ্ন।
সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমেদ স্বাক্ষরিত ২৯এপ্রিল দেশের ২৮ জন বিশিষ্ট নাগরিক যৌথ বিবৃতিতে উল্লেখ করে বলেন সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে জানা গেছে,বান্দরবান লামা উপজেলার লাংকম ম্রো পাড়ায় একটি রাবার কোম্পানী গত ২৭ এপ্রিল, ২০২২ মঙ্গলবার পাহাড়ীদের প্রায় একশ একর জুমের বাগান আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। ধান, আম, কলা, আনারসসহ পুরো বাগান পুড়ে গেছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এ ঘটনায় আজ পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি এবং প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
এর আগে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিঃ স্থানীয় ভুমিদস্যুদের সহায়তায় বান্দরবানের লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের লাংকম ম্রো কারবারি পাড়া, জয়চন্দ্র ত্রিপুরা কারবারি পাড়া এবং রেংয়েন ম্রো কারবারি পাড়ার পাহাড়ীদের প্রায় ৩০০ একর জুম ভূমি দখল করেছে। এর প্রতিবাদ করলে বিভিন্ন সময় পাহাড়ীদের বিরুদ্ধে এই কোম্পানি মিথ্যা মামলা করেছে।
সমতলের আদিবাসীদের ভূমির মালিকানা দেশের প্রচলিত আইনে নির্ধারণ করা হলেও তিন পার্বত্য জেলায় আদিবাসীদের ভূমি মালিকানা সামাজিক । ‘সার্বজনীন সম্পদ-সম্পত্তি মালিকানা অধিকার’ নীতিই হলো তাদের ভূমি মালিকানার ভিত্তি। ফলে এই মালিকানা বংশ পরম্পরায় মৌখিক। তিনটি সার্কেলের আওতায় পার্বত্য পাড়ার হেডম্যান এবং কারবারিরা এর ব্যবস্থাপনা করে থাকেন। কিন্তু গত ৩০ বছরে এই পার্বত্য পাড়ার নিয়ন্ত্রণাধীন ভূমির পরিমাণ শতকরা ৫১ ভাগ কমে গেছে। আরেক কথায় বলা যায়, পাহাড়িদের সামাজিক মালিকানার অর্ধেকেরও বেশি ভূমি ও ভূসম্পদ হাতছাড়া হয়ে গেছে।
বান্দরবানের লামা উপজেলার লাংকম ম্রো পাড়ায় জুমের বাগান আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় প্রশাসনের দৃশ্যমান পদক্ষেপ না থাকার বিষয়টি আমাদের গভীরভাবে হতাশ করেছে; আমরা উদ্বিগ্ন। বাগান পুড়ে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত আদিবাসী পরিবারগুলোর শিগগিরই খাদ্য সংকটে পরার আশংকা রয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ন্যায় বিচারের লক্ষ্যে কোনো প্রকার ব্যবস্থা কিংবা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাশে থেকে তাদের আশ্বস্তও করা হয়নি, যা আমাদের বিক্ষুব্ধ করেছে।
এমতাবস্থায় আমরা অনতিবিলম্বে বান্দরবানের লামা উপজেলার লাংকম ম্রে পাড়ায় একটি রাবার কোম্পানী কতৃক গত ২৭ এপ্রিল, ২০২২ মঙ্গলবার আদিবাসীদের প্রায় একশ একর জুমের বাগান আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় আইনানুগ প্রতিকারের লক্ষ্যে ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত সম্পন্ন করা, দায়ীদের অবিলম্বে গ্রেফতার, ক্ষতিগ্রস্তদের নিরাপত্তা ও উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ এবং পাড়াগুলোতে ম্রো জনগোষ্ঠীর মানুষের দখলসত্ব নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অত্র যৌথ বিবৃতি প্রদান করছেন দেশের বিশিষ্ট জনেরা।
বিবৃতি প্রদানকারীরা হলেন:ঐক্য ন্যাপ এর সভাপতি, পঙ্কজ ভট্টাচার্য,তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেকউপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল,
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে. চৌধুরী,সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনস ভাপতিমন্ডলীর সদস্য,রামেন্দু মজুমদার,ট্রাস্টি, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ডা.সারওয়ার আলী,সভাপতি, মহিলা পরিষদ ডা.ফওজিয়া মোসলেম, সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদ বিরোধী মঞ্চ এর সদস্য সচিব,ড. নুর মোহাম্মদ তালুকদার, বাংলাদেশ কৃষক সমিতির সভাপতি,এস.এম.এ সবুর, উন্নয়ন কর্মি খুশী কবির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর অধ্যাপক, এম. এম. আকাশ, অধ্যাপক,রোবায়েত ফেরদৌস
গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক, অ্যাডভোকেট জাহিদুল বারী, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন সাধারণ সম্পাদক,সালেহ আহমেদ, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট এর অ্যাডভোকেট পারভেজ হাসেম,জাতীয় আদিবাসী পরিষদ,কেন্দ্রীয় কমিটি সভাপতি,রবীন্দ্রনাথ সরেন,জাতীয় শ্রমিক জোটকার্যকরী সভাপতি আবদুল ওয়াহেদ,ইমারত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়ন বাংলাদেশ(ইনসাব)সাধারণ সম্পাদক, আব্দুর রাজ্জাক,সংস্কৃতি কর্মিড. সেলু বাসিত, সমাজকর্মি রাজিয়া সামাদ ডালিয়া, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা.লেনিন চৌধুরী, সংস্কৃতি কর্মি এ কে আজাদ,সংস্কৃতি কর্মি,অলক দাস গুপ্ত, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম এর তথ্য ও প্রচার সম্পাদক,দীপায়ন খীসা,গণজাগরণ মঞ্চ সংগঠক, অ্যাডভোকেট জীবনানন্দ জয়ন্ত, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বিভুতী ভূষণ মাহাতো
বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী,সভাপতি,কাজী আব্দুল মোতালেব জুয়েল,বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (বিসিএল)সভাপতি, গৌতম শীল,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর শিক্ষার্থী, দনওয়াই ম্রো প্রমূখ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন।