বান্দরবান জেলার রুমা উপজেলায় পাইন্দু ইউনিয়নে আলেচু পাড়ার বাসিন্দা পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া এক ছাত্রীকে পাইন্দু পাড়ার ৫ যুবক কৃতক ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় মেম্বার, হেডম্যান ও পাড়ার প্রধানসহ (কারবারী) পাড়ার গণমাণ্য ব্যক্তিবর্গ নিয়ে গত মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) বেলা এগারোটার দিকে ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার জন্য সামাজিক আইনের রীতিনীতির দোহাই দিয়ে বৈঠকের মাধ্যমে ধর্ষিত পরিবারকে চিকিৎসা খরচ বাবদ ১০ হাজার টাকা ও জরিমানা ৫০ হাজার টাকা দিয়ে মীমাংসা করে দেয়া হয়। আইনের দৃষ্টিতে যা সম্পূর্ণ অবৈধ ও শাস্তি যোগ্য অপরাধ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পাইন্দু পাড়া প্রধান কারবারী থোয়াইসা মারমার বাসায় বিচার সালিশের সভাপতিত্বে ছিলেন পাইন্দু ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের মেম্বার ও নিষিদ্ধ ঘোষিত পাইন্দু ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গংবাসে মার্মা ও ৩৫০নং পাইন্দু মৌজার হেডম্যান মংচউ মার্মা। আরো জানাযায় ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত ৫ যুবক সালিশের বিচারকদের আত্মীয় হওয়ায় সামাজিক বিচারের নামে অল্প টাকা জরিমানা দেখিয়ে সমাধান করা হয়েছে। এতে ধর্ষিত মা-বাবা ও স্থানীয় লোকজন এ ঘটনার চরম ক্ষোভ ও অসন্তুষ্টতা প্রকাশ করেছে।
পাইন্দু ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের মেম্বার ও নিষিদ্ধ ঘোষিত পাইন্দু ইউনিয়ন আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গংবাসে মার্মা এর ভাষ্যমতে, সামাজিক সালিশি বিচারে ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী জানায়, চলতি মাসের প্রথমে এই ছাত্রীকে ধর্ষণ করে পাইন্দু হেডম্যান পাড়ার বাসিন্দা রাংমেশে মার্মার ছেলে ক্যহ্লাওয়াং মার্মা। বিষয়টি তার মাধ্যমে তার বন্ধু জানতে পারে। পরবর্তীতে সুযোগ বুঝে ক্যওয়াংসাই মার্মা, ক্যসাইওয়াং মার্মা, চহাই মার্মা ও উহাইসিং মার্মা ভুক্তভুগী ছাত্রীকে ভয় দেখিয়ে পর্যায়ক্রমে একে একে ধর্ষণ করে। পরে ভুক্তভোগী বিষয়টি তার পরিবারকে জানায়। এতে সবার মধ্যে এই ঘটনা জানাজানি হয়। তারপর কারবারী থোয়াইসা মারমা’র ঘরে ধর্ষণ সংক্রান্ত সামাজিক সালিশি বিচার করা হয়। অভিযুক্ত ধর্ষণকারী ৫ জনকে মোট ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় ও চিকিৎসার খরচ বাবদ ১০ হাজার টাকা জরিমানা দেওয়া হয়। এসময় ভুক্তভোগী অভিভাবক ও পাড়াবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে তারা এ সামাজিক সালিশি বিচারে মিলিত হয়েছিলেন।
এ বিষয়ে ভুক্তভুগী ছাত্রীর বাবার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ভয়ে কিছু বলছে না। তবে স্থানীয়রা সহযোগিতা করলে সত্যে ঘটনা তুলে ধরতে রাজি আছি বলে জানিয়েছেন।
এই বিষয়ে রুমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ সোহরাওয়ার্দী বলেন, বিষয়টি আমরা ফেসবুকে পেয়েছি, আমি এই বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছি, আমরা এ বিষয়টি নিয়ে কাজ করতেছি। ধর্ষিত মা বাবা ও আত্মীয় স্বজনরা থানায় মামলা করলে আসামীদের ধরার ব্যবস্থা নিব।
রুমা থানা সূত্রে জানাযায় ঘটনার পর পর অভিযানে ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত ৩ জন-কে আটক করেছে পুলিশ আটককৃতরা হলেন, পাইন্দু ইউনিয়নের পাইন্দু পাড়া বাসিন্দা থুয়াইনুচিং মারমার ছেলে উহাইসিং মারমা, আহ্লামং মারমার ছেলে ক্যসাইওয়াং মারমা ও একই এলাকার রাং মেসে মারমার ছেলে ক্যহ্লাওয়াং মারমা। থানা সূত্রে আরো জানাযায় ঘটনায় পলাতক বাকি দুই আসামি চহাই মার্মা ও ক্যওয়াংসাই মার্মা-কে গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। খুব শীগ্রই বাকি আসামিদের গ্রেফতার করে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা দায়ের এর মাধ্যমে আদালতে পেরন করা হবে।
স্থানীয়দের দাবি এই ধরনের ঘটনাকে পশ্রয় না দিয়ে আসামিদের ধূর্ত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হোক, এবং ধর্ষণের মত ঘটনা যারা ধামা চাপা দিতে চেয়েছে সেই হেডম্যান কারবারি এবং নিষিদ্ধ আওয়ামীলিগ নেতাকেও আইনের আওতায় আনা হোক।
আরো পড়ুন→আলীকদমে সেনা জোন কাপ ফুটবল প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন সদর ইউনিয়ন দল