পেকুয়া প্রতিনিধিঃপেকুয়ায় মেম্বার প্রার্থীকে গ্রেপ্তার করল পুলিশ। সোমবার (১ নভেম্বর) দিবাগত গভীর রাতে পেকুয়া থানা পুলিশ তাকে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তির নাম দিদারুল ইসলাম (৫৭)। তিনি পেশায় একজন পল্লী চিকিৎসক। আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে উপজেলার সদর ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ড থেকে তিনি সদস্য পদে নির্বাচন করতে এবার প্রার্থী হয়েছেন। তার বাড়ি উপজেলার সদর ইউনিয়নের উত্তর মেহেরনামা আবদুল হামিদ সিকদারপাড়ায়।
স্থানীয় সুত্র জানায়, ওই দিন রাতে পেকুয়া থানা পুলিশ দিদারুল ইসলামকে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে। পেকুয়া থানায় রুজুকৃত পুলিশ বাদী মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পরের দিন মঙ্গলবার ২ নভেম্বর ওই মামলায় তাকে পুলিশ আদালতে সোপর্দ করে। আদালত তার জামিন না মঞ্জুর করে তাকে জেল হাজতে প্রেরণের আদেশ দেন। সুত্র জানান, ১২ অক্টোবর পেকুয়ায় সদর ইউনিয়নের বিশ্বাসপাড়ায় পূজা মন্ডপে ভাংচুর ও নাশকতা করা হয়েছে। ওই ঘটনায় পেকুয়া থানার এস,আই খায়ের উদ্দিন ভূইয়া বাদী হয়ে পুলিশ এসল্ট মামলা রুজু করে। ১৭ জন এজাহারনামীয় আসামীসহ পাঁচশত জনকে অজ্ঞাত আসামী করা হয়। ওই মামলায় ওই দিন রাতে পল্লী চিকিৎসক ও সম্ভাব্য মেম্বার প্রার্থী দিদারুল ইসলামকে অজ্ঞাত আসামী হিসেবে গ্রেপ্তার করে। প্রাপ্ত সুত্র জানা গেছে, দিদারুল ইসলাম সদর ইউপির ৬ নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য। গত ইউপি নির্বাচনেও তিনি প্রতিদ্বন্ধী ছিলেন। তবে ওই ওয়ার্ড থেকে ইসমাইল সিকদার মেম্বার নির্বাচিত হন।চলতি মাসের ২৮ নভেম্বর পেকুয়ায় ইউপি নির্বাচনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এবারও সদরের ৬ নং ওয়ার্ড থেকে দিদারুল ইসলাম মেম্বার পদে ভোট করতে মনোনয়ন পত্র দাখিল করেন। অভিযোগ সুত্রে তার নির্বাচনী ওয়ার্ডের জনগন ও ভোটাররা জানিয়েছেন, দিদারুল ইসলামকে ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তভাবে ফাঁসানো হয়েছে। প্রতিপক্ষকে প্রতিদ্বন্দিতা থেকে সরাতে একটি প্রভাবশালী চক্র পুলিশকে দিয়ে তাকে ফাঁসানো হয়েছে। এ দিকে সাবেক ইউপি সদস্য দিদারুল ইসলামকে গ্রেপ্তারের এ খবরে পেকুয়ায় নিন্দা ও প্রতিবাদ দেখা দিয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকেও ওই ঘটনায় তীব্র মতানৈক্য ও নিন্দার ঝড় সৃষ্টি হয়েছে। খোদ ক্ষমতাসীন দল আ’লীগ থেকেও ওই ঘটনায় নিন্দা জানানো হয়েছে। ক্ষমতাসীন দল পেকুয়ার সাধারন সম্পাদক আবুল কাশেম তার ফেইসবুক স্ট্যাটাস থেকে ওই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান। আবুল কাশেম জানান, দিদারুল ইসলাম গরীবের পল্লী চিকিৎসক। তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার। তাকে নির্দলীয় দাবী করলেও আবুল কাশেম বলেন, তার বড় ভাই এডভোকেট হাফেজ ছিলেন আ’লীগের দু:সময়ের কান্ডারী। তার অপর ভাই সানাউল্লাহ বাহাদুর ছাত্রলীগ ও পরবর্তীতে রাজপথ কাঁপানো যুবলীগ নেতা ছিলেন। জোট সরকারের সময় আমি যেমন নির্যাতিত হয়েছি তারাও হয়েছিল। আমি সুষ্টু ও নিরপেক্ষ তদন্ত চাই। সরকার ও পুলিশের ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ করতে এটি বড় ধরনের চক্রান্ত।
উপজেলা আ’লীগের সাবেক কমিটির নেতা নাছির উদ্দিন বাদশাহ তার ফেইসবুক থেকে ওই গ্রেপ্তার নিয়ে তীব্র নিন্দা জানান। এ ছাড়াও ক্ষমতাসীন দলের আরও একাধিক নেতা ও সুশীল সমাজে থেকেও ওই ঘটনার প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। উপজেলা যুবলীগ নেতা মো: মহিউদ্দিন জানান, দিদার মেম্বারকে অবিচার করা হয়েছে। তিনি নিরাপরাধ। গরীবের পল্লী চিকিৎসক। জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমি তার ভোটের প্রস্তাবকারী। আমাকেও মামলায় জড়ানোর হুমকি ধমকি দেয়া হচ্ছে। বাছাই পর্ব থেকে তার মনোনয়ন বাতিলের চক্রান্ত চলছে। দিদারুল ইসলামের স্ত্রী সাবেকগুলদি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা জিগারু আক্তার বানু জানান, ভোট থেকে সরাতে আমার স্বামীর উপর জুলুম। আমি ওই ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত দাবী করছি।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আহবান করছি আমার স্বামীকে বাঁচান। আমরা কোন অপরাধ করেনি। মেয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সের ছাত্রী মারুফা তছলিমা জানান, আমার বাবা নিরীহ লোক। তাকে নিয়ে বড় ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত হয়েছে। এখন আমরা চরম নিরাপত্তায় শংকিত রয়েছি। আরেক মেয়ে চট্টগ্রাম কলেজের অনার্সের ছাত্রী জন্নাতুন নাঈমা জানান, প্রচলিত আইনের বরখেলাপ হয়েছে। রাষ্ট্র পক্ষকে আহবান করছি আমরা বাবাকে নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন হয়ে গেছি। তদন্ত করে বিষয়টি উদঘাটন করুন। কেন করা হয়েছে। এর গভীরে যেতে হবে। ছোট ভাই সানাউল্লাহ বাহাদুর জানান, আমার বড় ভাই জনপ্রিয় বলে তার কপাল পুঁড়ানো হয়েছে। জোট সরকারের সময় নির্যাতিত হয়েছিলাম। এখন এর চেয়ে আরও বড় নির্যাতন। ছোট ভাইয়ের স্ত্রী তছলিমা বেগম জানান, বড় ভাইকে ঘুম থেকে পুলিশ এসে নিয়ে গেছে। তিনি সার্বক্ষনিক বারবাকিয়া বাজারে ফার্মেসীতে থাকেন। কিন্তু নির্বাচনের আগে এ কান্ড কেন। পেকুয়া থানার ওসি (তদন্ত) কানন সরকার জানান, অজ্ঞাত আসামী হিসেবে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কোর্টে সোপর্দ করা হয়। বিজ্ঞ আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করেন।