পেকুয়া প্রতিনিধিঃ কক্সবাজারের পেকুয়ায় পুলিশ এসল্ট মামলা ও মগনামা ইউপির চেয়ারম্যান শরাফত উল্লাহ চৌং ওয়াসিমের ছোট ভাই জুনায়েদ ইশরাক চৌং বাবুর পৃথক দুটি মামলায় দৈনিক কক্সবাজার ও দৈনিক সাঙ্গু পত্রিকার পেকুয়া প্রতিনিধি সাংবাদিক মুহাম্মদ হাসেমের পরিবারের ৫ জনকে আসামী করা হয়েছে। আসামীদের তালিকায় পেকুয়ার কর্মরত ওই সংবাদ কর্মীর স্কুল ও কলেজের অধ্যয়নরত ২ ছেলে, স্ত্রী,অসুস্থ ভাই ও ভগ্নিপতিকে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। একই পরিবারের নিরাপরাধ ৫ জনকে মিথ্যাভাবে জড়ানোর এ খবর পেকুয়াসহ সর্বত্রে চাউর হয়। মামলার আসামী তালিকায় সংবাদ কর্মী পরিবারকে জড়ানোর প্রতিবাদে সর্বত্রে নিন্দার ঝড় উঠে। একপেশে ওই মামলাকে শত শত মানুষ বর্বরতা হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তারা অবিলম্বে মিথ্যা ও হয়রানিমুলক দায় থেকে মুক্তি দিতে প্রশাসন ও সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে জানিয়েছেন অনুরোধ।
সুত্র জানায়, গত ২৪ আগষ্ট মগনামায় দুটি পৃথক ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। ওই ঘটনায় পেকুয়া থানায় পৃথক দুটি মামলা রুজু হয়েছে। দুটি মামলায় প্রায় ১৩২ জন আসামী করা হয়েছে। ওই মামলায় পেকুয়ার কর্মরত গণমাধ্যম কর্মী মুহাম্মদ হাসেমের বড় ছেলে আরিফুল ইসলাম ও মেঝ ছেলে মো: আরমান, স্ত্রী নাসিমা আক্তার, ছোট ভাই মুহাম্মদ সাদেক, ভগ্নিপতি সাইফুল ইসলামসহ ৫ জনকে আসামী করা হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, মুহাম্মদ হাসেমের বড় ছেলে আরিফুল ইসলাম চট্টগ্রাম সরকারী মডেল স্কুল এন্ড কলেজের বাণিজ্য বিভাগের মেধাবী ছাত্র। এবারের এইচ,এস,সি পরীক্ষার্থী। অপর ছেলে মুহাম্মদ আরমান চট্টগ্রাম দিলোয়ারা জাহান স্কুল এন্ড কলেজের ১০ম শ্রেনীর ছাত্র। তারা ২ বছর ধরে পড়ালেখার সুবাধে চট্টগ্রাম শহরে থাকে। এ দিকে সাংবাদিক পরিবারের ৫ সদস্যকে মামলায় জড়ানোর এ ঘটনায় পেকুয়ায় নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় দেখা দিয়েছে। ওই মামলাকে প্রত্যাখ্যানসহ এর তীব্র নিন্দা জানিয়ে পেকুয়ার ক্ষমতাসীন দল আ’লীগের তৃণমূল পর্যায় থেকে সর্বোচ্চ প্রতিবাদ দেখা দিয়েছে। এ ছাড়াও ব্যবসায়ী সুশীল সমাজ, ছাত্রসমাজ, শিক্ষক, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মীরাও এ ঘটনায় প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। মামলার প্রতিবাদে কলেজ গেইট চৌমুহনীতে দফায় দফায় মানববন্ধন ও মিছিল হয়েছে। সাংবাদিক সমাজ ইতিমধ্যে কর্মসূচী ঘোষনা দিয়েছে। বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম (বিএমএসএফ) পেকুয়া থেকে মানববন্ধন কর্মসূচীর ঘোষনা এসেছে। সোমবার (৬ সেপ্টেম্বর) তারা কলেজ গেইট চৌমুহনীতে কর্মসূচী পালন করবেন। কক্সবাজার জেলা থেকে সংগঠনের সভাপতি, সাধারন সম্পাদক এর নেতৃত্বে সিনিয়র সাংবাদিকরা পেকুয়ায় ওই দিন উপস্থিত থাকবেন। এ ছাড়া গত ২৭ আগষ্ট বিকেলে পেকুয়া চৌমুহনী প্রাঙ্গনে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়ার দাবীতে মানববন্ধনসহ সড়কে বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়েছে। ওই দিন মিছিল থেকে তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়। গত বুধবার সাংবাদিক পরিবারকে মামলায় জড়ানোর প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচী পালিত হয়েছে। ওই দিন বিকেলে পেকুয়ার কর্মরত সাংবাদিকরা সড়কে মানববন্ধন কর্মসূচী শেষ করে। প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মুহাম্মদ হাসেমের পরিবারকে মামলায় জড়ানোর এ খবরে নিন্দার ঝড় হয়েছে। উপজেলা যুবলীগ সাধারন সম্পাদক মুহাম্মদ বারেক তার ফেইসবুক স্ট্যাটাসে বলেন, এটি নিপীড়ন। আমরা এ জুলুম নিপীড়ন থামাতে আহবান করছি। উজানটিয়া ইউনিয়ন আ’লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক নাছির উদ্দিন জানান, হাসেম ভাই একজন প্রতিবাদী লিখক। তিনি লিখতে গিয়ে আজকে তার পরিবারকে নিপীড়ন চালানো হচ্ছে। আমরা এ ঘটনায় চরম ব্যথিত। স্কুল ও কলেজ ছাত্রদের কি দোষ ছিল। যুবলীগ পেকুয়ার সহসভাপতি জিয়াবুল হক জিকু ফেইসবুকে লিখেছেন, এটি চরম লজ্জাজনক বিষয়। স্কুল ছাত্ররা কেন মামলার আসামী হয়। পেকুয়ার কর্মরত সাংবাদিক রিয়াজ উদ্দিন লিখেছেন, স্কুল ও কলেজ পড়–য়া ছাত্রদের বাঁচাতে আপনারা আইনী সহায়তার জন্য এগিয়ে আসুন। সাংবাদিক নাজিম উদ্দিন লিখেছেন, সাংবাদিক হাসেমের ২ ছেলে মেধাবী ছাত্র। এরা পেকুয়াসহ কক্সবাজার জেলাবাসীর গর্বের ধন। কৃষকলীগ নেতা আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, আমরা হতাশ ও স্তম্ভিত। একটি পরিবারের ৫ জনকে আসামী করা এটি নিকৃষ্টতম জুলুম। সাংবাদিক রেজাউল করিম লিখেছেন, তিনি সাংবাদিক বলে তার ২ ছেলে আসামী। স্ত্রী আসামী, ভাই আসামী, ভগ্নিপতি আসামী। ইউনিয়ন আ’লীগ সভাপতি খাইরুল এনাম লিখেছেন, আমি মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পুলিশের আইজিপি, এসপি মহোদয়কে আহবান করছি আপনারা নেতা-কর্মীদের উদ্ধার করুন। কক্সবাজারের সিনিয়র সাংবাদিক দৈনিক কালের কন্ঠের দেশ সেরা প্রতিনিধি তোফায়েল আহমদ লিখেছেন, হাসেম মাবুদ কাকার ছেলে। মাবুদ কাকার ছেলেরা, নাতি পুতিরাতো বর্তমান সময়ে আসামী হবেন। মাবুদ কাকা বঙ্গবন্ধু পাগল ছিলেন। বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর থেকে তিনি পায়ে জুতো দেননি। এ মানুষটির নাতি পুতিরা আজকে আসামী হচ্ছে। অদ্ভূদ কারবার। মির্জা বাহাদুর লিখেছেন, দু:সময়ের কর্মীরা আজকে বিপন্ন। সাংবাদিক সাংবাদিক শহিদুল ইসলাম হিরু লিখেছেন, নিপীড়ন বন্ধ করুন। মানুষ এ ভাবে হতে পারেনা। সাংবাদিক সাইফুল ইসলাম বাবুল লিখেছেন, ওরা ছাত্র। এরাতো বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখে। সে অধিকারটুকু আজ ভূলুন্ঠিত কেন। কৃষকলীগ নেতা আলমগীর লিখেছেন, আমার চোখ দিয়ে জল পড়ে। হাসেম ভাই সমাজ ও রাস্ট্রের জন্য প্রতিবাদ করে। তাই আজকে তার শিশুরা মামলার আসামী। কক্সবাজার জেলা আ’লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক ড. আশরাফুল ইসলাম সজীব লিখেছেন, সাংবাদিক হাসেম প্রতিবাদী। তার ছেলেরা বাবার কারনে মামলার আসামী হয়েছে। আমি দু:খ প্রকাশ করছি। মো: রিদুয়ান লিখেছেন, প্রিয় বন্ধু একজন ভাল ছেলে। কিন্তু বর্তমানে সে একজন মিথ্যা মামলার আসামী। মেধাবীদের জীবন এ ভাবে অচল করে দেয়া নিষ্টুরতার সর্বোচ্চ পর্যায়। কলেজ ছাত্র হাসিব লিখেছেন, প্রিয় বন্ধু আরিফুল ইসলামের বাড়ি ও আমার বাড়ি এক জায়গায়। ৮ম শ্রেনী পর্যন্ত একই সাথে পড়েছি। বর্তমানে সে ইন্টার ফাইনাল পরীক্ষার্থী। অত্যন্ত একজন ভাল ছেলে। কৃষকলীগের যুগ্ম আহবায়ক সাবেক ছাত্রনেতা শহিদুল ইসলাম শাহেদ লিখেছেন, রাজনৈতিক শক্তির বিপর্যয় আমরা মেনে নিতে পারিনা।
ছাত্রনেতা আমিরুল খোরশেদ লিখেছেন, সাংবাদিক হাসেমের পরিবারকে নি:স্ব করতে এ মামলা। ২ ছেলে স্কুল ও কলেজে পড়ে। স্ত্রী, ভাই, ভগ্নিপতিকে কেন আসামী করা হয়। আমরা বিষয়টি গভীর পর্যবেক্ষণ করছি। উপজেলা যুবলীগ নেতা হোসাইন মো: বাদশাহ লিখেছেন, এটি মানবিক বিপর্যয়। মানুষের উপর এ ধরনের জুলুম খুবই অন্যায়। আমরা চোখের পানি ধরে রাখতে পারছিনা।
নাজিম উদ্দিন
পেকুয়া প্রতিনিধি
০১৮২০-০০৮৫১৫
০৪-০৯-২০২১