পেকুয়া(কক্সবাজার)প্রতিনিধি:কক্সবাজারের পেকুয়ায় পুলিশের দায়ের করা মামলায় আসামি করা হয়েছে নারীসহ ৩৩জনকে। অজ্ঞাত আসামি করা হয় আরো ৮০/৯০ জনকে। মামলায় বাদ যায়নি স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। আসামি হয়েছে স্কুলের শিক্ষকও। বুধবার (২৫ আগস্ট) পেকুয়া থানার উপ পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) খায়ের বাদি হয়ে মামলটি দায়ের করেন। যার নং-১২/২১।
এদিকে পুলিশের দায়ের করা মামলায় নিরহ লোকজনকে আসামি করায় মানুষের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের দাবী পুলিশ আওয়ামীলীগ নিধনে নেমেছে। মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে সকলেই আওয়ামীলীগ ও সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মী। এ মামলায় রেহায় পাইনি তাদের স্ত্রী সন্তানরাও। এনিয়ে ফুঁসে ওঠেছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা।
জানাগেছে,পুলিশের উপর হামলা ও সরকারি কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগ তুলে মামলাটি রুজু হয়। মামলায় প্রধান আসামি করা হয় উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মমতাজুল ইালামকে। মমতাজ মগনামা ইউনিয়নের মুহুরীপাড়া এলাকার মৃত.ছদর উদ্দিনের ছেলে।
মমতাজুল ইসলাম বলেন, আমাদের চিংড়িঘের থেকে চেয়ারম্যানের ক্যাডাররা মাছ লুট করে নিয়ে যায়। কয়েকদিন আগে আমার ওপর হামলা হয়েছে। মামলা নেয়নি পুলিশ। রাজনৈতিক সহযোগিতার জন্য আমি এক সপ্তাহ ধরে ঢাকায় আছি। গতকাল এমপি মাহবুব আলম হানিফ ভাইয়ের সাথে আমার স্বাক্ষাত হয়েছে। অথচ ঢাকায় থেকেও আমি মামলার ১নং আসামি। এসব বিএনপি নেতা ওয়াসিম চেয়ারম্যানের কাজ। নাজেম উদ্দিন মামলার তিন নাম্বার আসামি। পুলিশ ঘটনার দিন তাকে আটক করে আদালতে সোপর্দ করে। বুধবার আদালত তার জামিন মঞ্জুর করেন। তিনি মগনামা ইউনিয়ন আ’লীগের সহ-সভাপতি।
৬নং আসামি সোলতান মুহাম্মদ রিয়াজ মগনামা ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি সোলতান মুহাম্মদ রিপনের ছোট ভাই। রিয়াজ কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী। তিনি জানায়,আমি চট্টগ্রাম শহরে আছি। চেয়ারম্যান ওয়াসিমের ইন্ধনে আমাকে আসামি করা হয়েছে। বড় ভাই রিপনকে জয়নাল হত্যা মামলায় আসামি করে ঘর ছাড়া করেছে ওয়াসিম। আসামি করা হয়েছে আনসার সদস্যকেও।
মামলার ৭নং আসামি মোজাম্মেল। তিনি আনসার সদস্য। মগনামা ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারন সম্পাদক মকছুদের ছোট ভাই। মোজাম্মেল বলেন,আমি আনসার সদস্য। ঘটনারদিন ওয়াসিম চেয়ারম্যানের হুকুমে তার ক্যাডাররা আমার বাড়িতে তান্ডব চালায়। পিটিয়ে আমার দুই বোনকে আহত করে। বড় ভাই মকছুদকে জয়নাল হত্যা মামলায় আসামি করে। হয়রানির উদ্দ্যেশে চেয়ারম্যান পুলিশকে মোটাংকের ম্যানেজ করে আমাদের পরিবারের ওপর বার বার নির্যাতন চালাচ্ছে।
আশেক বিন জলিল মগনামা আদর্শ শিক্ষা নিকেতনের অধ্যক্ষ। তিনি ইউনিয়ন আ’লীগের প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক। মামলায় তাকে ৮নং আসামি করা হয়েছে। তিনি বলেন,পুলিশ আ’লীগ নিধনে নেমেছে। ওয়াসিম চেয়ারম্যানের টাকার কাছে বিক্রি হয়ে গেছে পুলিশ। রাতে চেয়ারম্যানের লোকজন স্কুলের আসবাবপত্র, সিসি ক্যামেরা,ল্যাপটপসহ মুল্যবান মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে।মামলার সকল আসামি আ’লীগ করে।
আরমান চট্টগ্রাম শহরের দিলোয়ারা জাহান স্কুল এন্ড কলেজের দশম শ্রেনীর ছাত্র। বড় ভাই আরিফ চট্টগ্রাম নাসিরাবাদ সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজের এইচএসসি বাণিজ্য বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। মামলায় দুইজনকে ১৩ ও ১৪ নং আসামি করা হয়েছে।
তাদের পিতা সাংবাদিক মুহাম্মদ হাসেম বলেন, দুই ছেলে,স্ত্রী,ছোট ভাই ও ভগ্নিপতিসহ আমার পরিবারের পাঁচ সদস্যকে আসামি করা হয়েছে। ছেলেরা চট্টগ্রাম থেকেও আসামি হয়েছে। অসুস্থ স্ত্রী ভাইকেও রেহায় দেয়নি পুলিশ। আসলে এটি নিষ্টুরতা। আমি কারো ক্ষতি করিনি। আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। সাম্প্রতিক সময়ে মগনামার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে লেখালেখি করায় পুলিশ ক্ষুব্ধ হয়ে ও ওয়াসিম চেয়ারম্যানের টাকায় আমার পরিবারের ওপর ষ্ট্রীম রোলার চালাচ্ছে।
জানাগেছে সাংবাদিক হাসেম পেকুয়া উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তার পুরো পরিবার আওয়ামী সমর্থিত। তার স্ত্রী নাসিমা আক্তারকে ৩৩ নং আসামি করা হয়। এছাড়া আসামি করা হয় মগনামা ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মো.রোকন উদ্দিনের স্ত্রী জুয়েদা বেগমকে। তিনি এ মামলার ৩১ নং আসামি।
জানাগেছে,মঙ্গলবার সকালে চিংড়িঘের থেকে মাছ লুটের ঘটনায় ইউপি চেয়ারম্যান শরাফত উল্লাহ চৌধুরী ওয়াসিমের ছোট ভাই এনায়েত উল্লাহ তার মামাতো ভাই আরাফাতকে পিটিয়ে আহত করে। তারা মোটর সাইকেল নিয়ে বাড়ি থেকে কর্মস্থলে যাচ্ছিল। মগনামা বাজার পাড়ায় পথ রোধ করে ৭/৮জনের লোকজন তাদের উপর আক্রমন চালায়। পুলিশ অভিযুক্তদের ধরতে টুঙ্গীপাড়া নামে খ্যাত মুহুরীপাড়া গ্রামে অভিযানে যায়। গ্রামবাসির অভিযোগ পুলিশের সাথে চেয়ারম্যানের অনুসারী ক্যাডাররাও যোগ দেয়। এ সময় মুহরীপাড়া ষ্টেশনে গ্রামবাসির সাথে চেয়ারম্যান অনুসারীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। ছোঁড়া হয় ইটপাটকেল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন আনতে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোঁড়ে পুলিশ। এসময় অস্ত্রধারীরা পুলিশের উপস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু সরকারের গভর্নর ও সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা এড জহিরুল ইসলামের পৈতিক বাড়িতে গুলি ছোঁড়ে।
স্থানীয় আব্দুল কুদ্দুস,জালাল উদ্দিন,বাদশাহ,ইউসুফ,মনিরসহ অনেকে জানান,পুলিশের ধর পাকড়ের ভয়ে মানুষ এলাকাশুন্য। এ সুযোগে মঙ্গলবার গভীররাতে ওয়াসিম চেয়ারম্যানের অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা ১০/১২টি বসতবাড়ি ও স্কুলে লুটপাট ও তান্ডব চালায়।