বুধবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১:২৮ অপরাহ্ন
প্রধান সংবাদ :
এখন বাংলাদেশের আকর্ষণীয় পর্যটন গন্তব্য হিসেবে পরিচিত পার্বত্য চট্টগ্রাম: সুপ্রদীপ চাকমা ঢাকা বিশ্বিবদ্যালয়ে ভর্তিতে মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনি কোটা বাতিল বাবার আগে ছেলে হাঁটলে সেই দেশ ও জাতি শেষ হয়ে যায়-মির্জা আব্বাস বান্দরবানের নাইক্ষ‍্যংছড়ি ৪৪ নং সীমান্ত পিলার দিয়ে আবারও গুলির শব্দ দেশের অভ‍্যন্তরে ছয় সংস্কার কমিশন প্রধাদের সাথে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করার ইঙ্গিত  অন্তর্বতী সরকারের প্রতি -মির্জা ফখরুলের বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে জাতীয় সমবায় দিবস পালিত বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে জাতীয় যুব দিবস উপলক্ষে র‍্যালি ও ঋণের চেক বিতরণ পরিবেশ রক্ষায় আজ থেকে কাঁচাবাজারে  পলিথিন নিষিদ্ধ নভেম্বর থেকে পর্যটক আসতে পারবে রাঙ্গামাটিতে,বান্দরবানও উন্মুক্ত করার আশ্বাস জেলা প্রশাসকের

প্রধান উপদেষ্টার নিকট পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদের ১২ দফা দাবি

আরাফাত খাঁন
  • প্রকাশিতঃ শনিবার, ৫ অক্টোবর, ২০২৪
  • ২৩২ জন নিউজটি পড়েছেন

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ গত (০১অক্টোবর) মঙ্গলবার খাগড়াছড়ি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক আবুল হাসান মুহাম্মদ সোহেল রানা কে সপ্তম শ্রেনীর এক পাহাড়ী ছাত্রীকে ধর্ষনের অভিযোগে পিটিয়ে হত্যা করে পাহাড়ী উগ্রবাদী সন্ত্রাসীরা। এই হত্যার বিচারের দাবীতে ও পাহাড়ে চলমান সকল স্বরযন্ত্র বন্ধের দাবিতে (৫ অক্টোবর) শনিবার সকাল ১০ ঘটিকায় চট্রগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক হলে পার্বত্য চট্রগ্রাম ছাত্র পরিষদের আয়োজনে এক প্রতিবাদ সভা অনষ্ঠিত হয়। উক্ত প্রতিবাদ সভা থেকে প্রধান উপদেষ্টার নিকট পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ থেকে ১২ দফা দাবি রাখেন।

দাবি গুলো হলো:

১। খাগড়াছড়িতে ১৮ সেপ্টেম্বর মামুন হত্যাকারী সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনা, ১৯ সেপ্টেম্বর দীঘিনালায় শিক্ষার্থীদের মিছিলে প্রথমে হামলাকারী ও ফাকা গুলি করা ইউপিডিএফের সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনা, ২০ সেপ্টেম্বর রাঙামাটি শহরে সংঘাত ও বৈষম্য বিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারের আড়ালে সশস্ত্র সংগঠনগুলোর সন্ত্রাসী কর্তৃক প্রথমে বাঙালিদের দোকানপাটে হামলা, মসজিদে ভাংচুর, বাস, ট্রাক, সিএনজি ভাংচুর ও জ্বালিয়ে দেওয়া সহ খাগড়াছড়িতে ১ অক্টোবর মঙ্গলবার শিক্ষক সোহেল রানাকে হত্যাকারী সকল উপজাতি সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনতে হবে।

২। বাংলাদেশে কোন আদিবাসী নেই। ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিতে (CHT Agreement) এ পার্বত্যবাসীর পক্ষে জনসংহতি সমিতির চেয়ারম্যান সন্তু লারমা স্বাক্ষর করে ‘উপজাতি’ পরিচয়টি মেনে নিয়েছেন। উপজাতি হয়ে ২০০৭ সাল থেকে নতুন করে আদিবাসী স্বীকৃতি চাওয়ার পিছনে দেশভাগের ষড়যন্ত্র রয়েছে। ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে যারা আদিবাসী বলবে ও লিখবে তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে।

৩। পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থায়ী শান্তি, শৃঙ্খলা ও সকল সম্প্রদায়ের জনগণের নিরাপত্তার জন্য সেনাবাহিনীকে যথাযথ ক্ষমতা দিয়ে ও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীকে শক্তিশালী করে যৌথ অভিযানের মাধ্যমে সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী গুলোর হাত থেকে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করে ও চাঁদাবাজি বন্ধ করে সন্ত্রাস মুক্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম গড়তে বর্তমান সরকারকে কার্যকরী ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে।

৪। সাম্প্রদায়িক ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত সিএইচটি কমিশনের কার্যক্রম অবৈধ ঘোষণা করতে হবে।

৫। পার্বত্য এলাকায় বিদেশী দাতা সংস্থার অর্থায়নে কিছু বিশেষ গোষ্ঠীর দ্বারা পরিচালিত এনজিওদের রাষ্ট্রের স্বার্থ ও নিরাপত্তা বিরোধী কার্যকলাপে জড়িত থাকার কারণে তাদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষনা করতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামে এনজিও সংস্থা সমূহের রাষ্ট্রের স্বার্থের পরিপন্থি, বৈষম্যমূলক ও সাম্প্রদায়িক কর্মকান্ড বন্ধ করতে হবে।

৬। পার্বত্য অঞ্চলে সকল অবৈধ অস্ত্রধারী সশস্ত্র সন্ত্রাসী দলসমূহের তথাকথিত স্বাধীন (জুমল্যান্ড) রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার নামে বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যক্রম বন্ধে রাষ্ট্র এবং সরকার কর্তৃক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামে শত শত বছর ধরে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও বাঙালিদের সহাবস্থান ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সুদৃঢ় করে শান্তি ও উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার জন্য এবং গুম, খুন, চাঁদাবাজি বন্ধ করে স্থিতিশীল ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পার্বত্য চট্টগ্রাম প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

৭। ষড়যন্ত্রমূলক এবং একটি বিশেষ শ্রেণী গোষ্ঠীর পার্বত্য চট্টগ্রামের সরকারি খাস ভূমি দখল এবং বনজ সম্পদ ধ্বংসের পায়তারার অংশ হিসেবে চালু করা ভিলেজ কমন ফরেস্ট (ভিসিএফ) বা পাড়াবন প্রকল্প অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। বিভিন্ন প্রজাতির বাঁশ এবং এই অঞ্চলের বাস্তুসংস্থানের সাথে সংশ্লিষ্ট উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতি সংরক্ষনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সংরক্ষিত বন অঞ্চল এবং জীব বৈচিত্র ধ্বংসের সাথে সম্পৃক্ত সকল কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে। যথেচ্ছ ভাবে শামুক, ব্যাঙ, সাপ, বাঁশকোড়ল সংগ্রহ বন্ধ করতে হবে। জুম চাষের নামে শত শত একর বনভূমি এবং জীব বৈচিত্র পুড়িয়ে ধ্বংস করা রোধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। জুম নিয়ন্ত্রন বন বিভাগ, পাহাড়ি কৃষি গবেষনা কেন্দ্র, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কার্যক্রম বৃদ্ধি করা এবং জুম চাষের বিকল্প হিসেবে বহুমুখী, দীর্ঘমেয়াদী এবং পাহাড়ের উপযোগী কৃষি ব্যবস্থা চালু করতে হবে।

৮। সকল সরকারি চাকরি, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি, উপবৃত্তি ইত্যাদির ক্ষেত্রে বৈষম্য মূলক উপজাতি কোটার পরিবর্তে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত সকল জাতিগোষ্ঠীর জনসংখ্যার অনুপাতে অনগ্রসর কোটা চালু করে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও বাঙালিদের জন্য সমহারে কোটা নির্ধারণ করতে হবে।

৯। পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল প্রতিষ্ঠান ও সংস্থায় সর্বোচ্চ পদে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী হতে পদায়ন করা হয়ে আসছে। জাতীয় ও আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের সভাপতির পদসহ সকল সংসদ সদস্য, মন্ত্রী, উপ-মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীর পদসমূহ শুধুমাত্র ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য নির্ধারিত। উন্নয়ন বোর্ড এর চেয়ারম্যানের পদটি পাহাড়ি-বাঙালি উভয়ের জন্য নির্ধারিত থাকলেও এই পদেও সবসময় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী হতে পদায়ন করা হয়ে আসছে। সমতা ও ন্যায় বিচারের স্বার্থে চলতি টার্মে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে একজন বাঙালি নিয়োগ দেয়ার জন্য জোরদাবি জানাচ্ছি।

১০। পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত সকল নাগরিকদের একই ধরনের আয়করের আওতায় আনা এবং ব্যাংক ঋণের ক্ষেত্রে সকল সম্প্রদায়ের জন্য একনীতি প্রণয়ন করতে হবে। চাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য, ঠিকাদারি প্রভৃতি ক্ষেত্রে ১৯৮৪ সালের আয়কর অধ্যাদেশে পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতিদের জন্য বিশেষ ধারাটি বাতিল করতে হবে অথবা অনগ্রসর হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত সকলের জন্য একই বিধিমালা জারী করতে হবে।

১১। পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল ক্ষেত্রে পাহাড়ি-বাঙালি এবং পাহাড়িদের মধ্যে সকল ক্ষূদ্র নৃ-গোষ্ঠী সমূহের মধ্যে জনসংখ্যা অনুপাতে জন প্রতিনিধিত্ব এবং চাকরির নিয়োগ প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে।

১২। পার্বত্য চট্টগ্রামে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী সংগঠনের নেতৃত্বে ও ষড়যন্ত্রকারী প্রায় সকলেই চাকমা জনগোষ্ঠীর, তাই এই বিষয়ে রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরী।

এসময় উক্ত প্রতিবাদ সভায় প্রধান অথিতি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্রগ্রাম নাগরীক পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী মুজিবর রহমান, প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্রগ্রাম নাগরীক পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ও স্থায়ী কমিটির সদস্য শেখ আহমেদ রাজু, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্রগ্রাম নাগরীক পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব আলমগীর কবির, আরো উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্রগ্রাম ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি আসিফ ইকবাল,সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল মাহমুদ,চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি গিয়াস উদ্দিন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইমন, রাবিপ্রবি সভাপতি আলম, পার্বত্য চট্রগ্রাম ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা সভাপতি সুমন আহম্মেদ, পার্বত্য চট্রগ্রাম ছাত্র পরিষদের রাঙামাটি জেলা সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম, বান্দরবান জেলা সাধারণ সম্পাদক হাবিব আল মাহমুদ।

উল্লেখ্য, খাগড়াছড়ি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক আবুল হাসান মুহাম্মদ সোহেল রানার বিরুদ্ধে ২০২১ সালে এক পাহাড়ি ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। ধর্ষনের অভিযোগে ছাত্রীর পিতা বাদী হয়ে খাগড়াছড়ি সদর থানায় মামলা করে মামলার প্রেক্ষিতে ২০২১ সালের ৩ মার্চ সোহেল রানাকে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তীতে সেই ছাত্রী আদালতে ধর্ষনের অভিযোগ অস্বিকার করলে আদালত সোহেল রানাকে খালাস দেন। পরে কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় চাকরিতে বহাল হন। কিন্তু, তাতে বাঁধা দিচ্ছিলেন সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন ইউপিডিএফ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তাকে অন্যত্র বদলি করা হয়। পরে ১অক্টোবর মঙ্গলবার তিনি রিলিজ অর্ডার নিতে বিদ্যালয়ে গেলে সপ্তম শ্রেনীর এক শিক্ষার্থীকে কক্ষে আটকে রেখে ধর্ষনের অভিযোগ এনে তাকে পিটিয়ে হত্যা করেন পাহাড়ী সন্ত্রাসীরা।

 পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি, সম্প্রীতি, সমতা ও ন্যায্যতা আনায়নে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার নিকট প্রতিবাদ সভা থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদের

নেতৃবৃন্দ ১২ দফা দাবি জানান।

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরির আর নিউজ
© All rights reserved ©paharkantho.com-২০১৭-২০২১
themesba-lates1749691102
error: Content is protected !!