লবণের দাম বৃদ্ধির গুজবে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অনেকেই বেশি বেশি লবণ কিনে পড়েছেন বিপাকে। তাদের এখন আফসোসের শেষ নেই। অ’তিরিক্ত লবণ কিনে কেউ কেউ দোকানে ফেরত দিতে এসে হতাশ হয়েছেন। কারণ, লবণের দাম তো বাড়েনি। রংপুরের পীরগাছার আফসার আলী দেশের এক জাতীয় দৈনিককে জানান, তিনি ৮০ টাকা কেজি দরে ১০ কেজি লবণ কিনেছিলেন। তখন নিজেকে তিনি সৌভাগ্যবান মনে করেছিলেন। এখন তিনি লজ্জায় মুখ লুকানোর জায়গা পাচ্ছেন না।
নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) বেশি দামে লবণ বিক্রি করছিলেন আবদুর রাজ্জাক নামের এক দোকানি। হৃদয় মিয়া নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্মক’র্তাদের জানান। পরে ভ্রাম্যমাণ আ’দালত রাজ্জাককে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। জরিমানার ২৫ শতাংশ অর্থ তথ্যদাতাকে দেওয়া হয়। লবণের গুজব বিষয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে জানা গেছে, গতকাল (২০ নভেম্বর) একেবারে উল্টো চিত্র ছিল। আগের দিন যে ক্রেতা দৌড়াদৌড়ি করে বেশি দামে লবণ কিনেছিল সেই ব্যক্তিই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় আফসোস করছে। এখন সেই লবণ তারা কী’ করবে তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছে। যাত্রাবাড়ীর কুতুবখালী এলাকার এক মুদি দোকানি বলেন, ‘এলাকার এক লোক গতকাল দুপুরে আট কেজি লবণ বিক্রি করতে নিয়ে আসে। তিনি সেই লবণের দাম বলেছেন ২০ টাকা কেজি। পরে সেই লোক লবণ নিয়ে ফিরে যায়।
লবণের দাম বেড়ে যাবে, পাওয়া যাবে না এমন গুজবের সূত্রপাত সোমবার (১৮ নভেম্বর) রাতে। এরপর গুজবে ভর করে লবণের দাম বেড়ে যায় লাফিয়ে লাফিয়ে। ঢাকাসহ সারা দেশে লবণ কেনার হিড়িক পড়ে যায়। চাহিদার তুলনায় বেশি বেশি কিনছিল ক্রেতারা। সিলেটের বিয়ানীবাজার থেকে যে ব্যক্তি প্রথমে ফেসবুকে লবণ নিয়ে গুজব ছড়িয়েছিলেন তাঁকেও চিহ্নিত করেছেন গোয়েন্দারা। যেকোনো সময় ওই ব্যক্তিকে গ্রে’প্তার করা হবে বলে জানা গেছে।
লবণ নিয়ে গুজবে সারাদেশে লঙ্কাকাণ্ড শুরু হয়েছে। গুজব ছড়িয়ে কৃত্রিম সঙ্কটের মুখে লবণের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট। তবে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, দেশে লবণের কোন সঙ্কট নেই। দেশে এখন ৬ লাখ মে. টন ভোজ্যলবণ মজুদ রয়েছে আর প্রয়োজন মাত্র ১ লাখ টনের। তিনি দাবি করেন, সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে গুজব ছড়িয়ে লবণের দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা চলছে। কিন্তু গুজব রটনাকারীদের ক্ষমা নেই। যারা এ অপচেষ্টায় জড়িত তাদের কঠোর ও কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।
এছাড়া বাংলাদেশ লবণ মিল মালিক সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়, আগামী তিন মাস চলার মতো ভোজ্যলবণ তাদের কাছে মজুদ রয়েছে। এছাড়া এখন লবণের মৌসুম শুরু হয়েছে। তাই লবণ সঙ্কটের আশঙ্কা নেই। তবে গুজব ছড়িয়ে লবণের দাম বাড়ানোর পেছনে জামায়াত শিবির ও বিএনপি সমর্থক ব্যবসায়ীরা সরাসরি জড়িত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে তারা এ ধরনের কারসাজির আশ্রয় নিয়েছে বলে জানিয়েছেন জনকণ্ঠের স্থানীয় পর্যায়ের সংবাদদাতারা। এছাড়া ঢাকায়ও বিএনপি-জামায়াতপন্থী সমর্থক ব্যবসায়ীরা এ বিষয়ে সক্রিয় রয়েছে বলে জানা গেছে।