নিজস্ব প্রতিবেদকঃ রোববার (২৪ নভেম্বর) ভোরে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে বান্দরবানের রুমা উপজেলার গহীন এলাকা কুত্তাঝিরিতে সেনাবাহিনী অভিযান পরিচালনার করে। এসময় সেনাবাহিনী কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট কেএনএ’র একটি গোপন আস্তানার সন্ধান পেয়ে তল্লাশি চালাতে গেলে কেএনএ’র একটি সশস্ত্র বাহিনী সেনাবাহিনীর উপর অতর্কিত গুলি বর্ষন করে সেনাবাহিনীও পাল্টা গুলি চালালে এতে কেএনএ’র তিন সদস্য নিহত হয় বলে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) সহকারী পরিচালক রাশেদুল আলম খান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
তিনি আরো জানান, সেনাবাহিনী ওই স্থানে তল্লাশি চালালে,কেএনএ সন্ত্রাসীদের ব্যবহৃত একটি চাইনিজ রাইফেল, দুটি একনলা বন্দুক, বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ, ইউনিফর্ম, বেতারযন্ত্র, ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন ও ওষুধসহ বেশ কিছু সরঞ্জামাদি উদ্ধার করে।
আজ সোমবার (২৫ নভেম্বর) সকালে অভিযানে নিহত তিন কেএনএ সদস্যের লাশ উদ্ধার করে রুমা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে পুলিশ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায় নিহত তিনজনের মধ্যে একজন বান্দরবান সদর উপজেলার সুয়ালক ইউনিয়নের সারন পাড়া বাসিন্দা পেন খুপ বম (৬৫) , বাকি দুইজন রুমা উপজেলার পাইন্দূ ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের হ্যাপিহিল পাড়ার ত্লোয়াংথন বম এর পুত্র মেসি ভানলাললিয়ান বম (২২) ও রোয়াংছড়ি উপজেলার সুয়ানলু পাড়া বাসিন্দা ভানসাং বম এর মেয়ে এলি ভানজির পার বম (১৮)। আরো জানা যায়, নিহত পেন খুপ বম (৬৫) কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)’র স্থানীয় কমিটির সহ-সভাপতি এবং নিহত মেসি ভানলাললিয়ান বম (২২) কেএনএফ এর সশস্ত্র শাখা কেএনএ (কুকি চিন ন্যাশনাল আর্মি)’র সক্রিয় সদস্য এবং নিহত এলি ভানজির পার বম (১৮) মেসি এর সহধর্মিনী।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে রুমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সোহরাওয়ার্দি পাহাড় কণ্ঠ কে জানান পাইন্দু ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের মুননুয়াম পাড়ার পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করে রুমা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রাখা হয়েছে। সেনাবাহিনীর তথ্য মতে নিহত তিনজন কেএনএ’র সদস্য, প্রাথমিক তদন্ত কার্যক্রম শেষে মরদেহ গুলো ময়নাতদন্তের জন্য বান্দরবান সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হবে।
রুমা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক ডা. রুবেল দাশ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তিনটি লাশ আনা হয়েছে নিশ্চিত করে জানান, নিহতদের মধ্যে একজনের বয়স আনুমানিক ৬০ বছর বাকি দুইজন আনুমানিক ২৫ বছরের কাছাকাছি। তার মধ্যে দুজন পুরুষ একজন নারী।তিনজনের শরীরেই গুলির চিহ্ন রয়েছে।
প্রসঙ্গতঃ কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) পার্বত্য চট্টগ্রামের এক নতুন সশস্ত্র সংগঠন,বম জাতিগোষ্ঠীর কিছু উগ্রবাদী ব্যক্তির হাত ধরে এই সংঘটনের জন্ম, এই সংঘটনটি পরিচালনা করেন নাথান বম নামের এক বম নেতা।
২০২০ সালে বম জনগোষ্ঠীর কিছু বিপথগামী যুবক কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) নামের এই উগ্রবাদী সংগঠন যোগ দিলে এটি আরো ভয়ঙ্কর হয়ে উঠে।
বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে সক্রিয় জাতিগত এই সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী সংগঠন,বান্দরবান ও রাঙামাটি জেলায় হত্যা,লুটপাট,মুক্তি পণ দাবিসহ একাধিক সন্ত্রাসী কার্যক্রমে লিপ্ত হয়ে। সর্বশেষ রুমা ও থানচি উপজেলায় তিন ব্যাংকর শাখায় ব্যাংক ডাকাতি করে পুলিশ ও আনসার বাহিনীর ১৪টি অস্ত্র লুট করে ।
তাদের সশস্ত্র কার্যক্রম বেড়ে যাওয়ায় কেএনএ নিমূর্লে ২০২২ সালের অক্টোবর মাস থেকে বান্দরবানে যৌথ বাহিনীর অভিযান শুরু হয়। অভিযানে এই পর্যন্ত কেএনএফের মোট ১২০ জন সদস্য ও সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে যৌথ বাহিনী। তাদের বিরুদ্ধে বান্দরবানের বিভিন্ন উপজেলায় বেশ কিছু মামলা হয়েছে।যৌথবাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানে আত্মগোপনে চলে যায়।
৫ই আগস্ট বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন সরকার পরিবর্তনের পর আবারো সক্রিয় হয়ে,সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাতে শুরু করে এই সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন ।
আরো পড়ুন >>>সেনাবাহিনীর সাথে বন্দুক যুদ্ধে কুকি-চিন এর তিন সদস্য নিহত:গোলাবারুদ উদ্ধার