আজ ১২ই এপ্রিল সকাল ৭ঘটিকায় বান্দরবান সাঙ্গু নদীতে চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যাদের নদীতে ফুলভাসানোর মধ্যে দিয়ে শুরু হলো পার্বত্য চট্টগ্রামের সর্ববৃহৎ সামাজিক উৎসব বিজু,সাইংগ্রাইং,বৈসু,বিষু,চাংক্রান পয়, ১২,১৩,১৪ ই এপ্রিল ২০২২ শুরু হয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর সাংগ্রাইং, বিজু, বৈসু, বিষু, বিহু,চাংক্রান পয়,উৎসব ঘিরে পুরো পার্বত্য অঞ্চল উৎসবের আনন্দে মাতোয়ারা।
যথাক্রমে এ তিন দিনের নাম, চাকমা ভাষায় ফুলবিজু,মুলবিজু ও গজ্জ্যাপজ্জ্যা। মার্মাদের সাংগ্রাইং পাইন ছোয়াই,সাংগ্রাইং আক্যাঃ, সাংগ্রাইং আপ্যাইঃ,ত্রিপুরাদের হারি বৈসু,বৈসুমা ও বিসিকাতাল উৎসব পালন করে থাকে।
চাকমাদের ফুলবিজু হলো চৈত্র মাসের শেষ দিনের আগের দিন। দিনটিতে ভোরে ঘুম থেকে উঠে দলবেঁধে ফুল সংগ্রহ করে গ্রামের নারী পুরুষ বিশেষ করে কিশোর-কিশোরী,যুবক–যুবতি কলা পাতা উপর ফুল দিয়ে নদীতে ভাসিয়ে দেয়।প্রার্থনা করে রোগ মুক্তির,আপদ বিপদ যাতে দুর হয় এবং সকল প্রাণীর হিতসুখ মঙ্গল কামনায়। অনেকে নদীতে ডুব দিয়ে গোসল, প্রথম দিন থেকে কোনো প্রানী হত্যা করে না,কাউকে গালমন্দ করে না।বাড়ী-ঘরের কোণায় কোণায় মোমবাতি জ্বালিয়ে দেয়। যুবক যুবতীরা বিভিন্ন সাজে সজ্জিত হয়। বৌদ্ধ বিহারে ও সকল প্রাণীর জন্য মঙ্গল কামনা করে। কমবেশি সকলেই নতুন জামা কাপড় পড়ে। বয়স্কদের পায়ে ধরে প্রনাম করে এবং বয়স্ক লোকদের দুর থেকে পানি এনে গোসল করায়,আশির্বাদ কামনা করে।
মূল বিজু হলো চৈত্র মাসের শেষ দিন, প্রতিটি বাড়ীতে পাজন, মদ,কান্জি,জগরা কমবেশি তৈরী করে।শিশুরা গ্রামের ঘরে ঘরে গিয়ে হাঁস মুরগীদের ধান,চাউল মেশানো খাবার দেয়। নতুন পোষাক পরিধান করে বড়দের পায়ে ধরে প্রনাম করে।নতুন জামাই,নতুন বৌ শ্বাশুড় বাড়ী, পিত্রালয়ে বেড়াতে যায়। এটাকে বলে-” বিজু বেরান্নে”।সারাদিন প্রতিটি বাড়ীতে খাবার তৈরি করে,মেহমানদের পরিবেশন করে। মূল আকর্ষন হলো পাজন তরকারী। শত প্রকার সবজি,মাছ দিয়ে তৈরী করে পাজন তরকারী।অনেকে বিভিন্ন ধরনের মাংসও রান্না করে। ছোট ছোট শিশুরা গান বাজনা করে। বড়রা তাঁদের বকশিস দেয়,গরীবদেরকে সহায়তা করে।অনেকে সারারাত ঘুরে বেড়ায় এ বাড়ী থেকে ঐ বাড়ী,এ গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে।
গজ্জ্যাপজ্জ্যা দিন হলো -বৈশাখ মাসের প্রথম দিন। এ দিনে কেউ একটা সবুজ পাতা ও ছিড়ে না। বৌদ্ধ বিহারে গিয়ে সমবেত প্রার্থনা করে, সকলে অতীত ভুলে গিয়ে মায়া মমতায় ভরা নতুন জীবনের স্বপ্ন বুনে।কমবেশি বাড়ীতে আত্মীয়দের নেমন্তন্ন দেয়।অনেকে বাংলা নতুন বছরে মুরুব্বী আত্মীয় স্বজনকে নিমন্ত্রণ করে বাড়ীতে ভাত খাওয়াই।
মারমাদের মূল আকর্ষণ হলো মৈত্রীয় পানি বর্ষণ খেলা, মূলত এই খেলায় যুবক-যুবতীরাই অংশ গ্রহণ করে থাকেন। পাড়ায় -পাড়ায় দলগত ভাবে সারা রাত ব্যাপী পিঠা তৈরী করে,সকালে পরিবেশন করা হয়।ত্রিপুরাদের নারী-পুরুষ দল বেঁধে ঐতিহ্যবাহী গড়াইয়া নৃত্য পরিবেশন।বিগত দুই বছর করোনার কারনে কোন উৎসব পালন করা যায়নি।
যুগ যুগ ধরে নিজেদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে নানা রকমের খাবার-দাবার, খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করে উৎসবটি পালন করা হয়। এই উৎসবটি পাহাড়ে এক এক জনগোষ্ঠীর কাছে আলাদা আলাদা নামে পরিচিত। যেমন- বিজু, বিহু, বিষু, বৈসু, চাংক্রান, সাংগ্রাই এবং সাংলান।