থানচি প্রতিনিধিঃ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, জনবৈচিত্র্য এবং বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ আমাদের বন্ধনের জেলা বান্দরবান। পাহাড়ি দুর্গম এলাকা হওয়া সত্ত্বেও বান্দরবান প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এবং পর্যটন শিল্প বিকাশের অসীম সম্ভাবনা নিয়ে এটি বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জেলা হিসেবে বিবেচিত। সদর দপ্তর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের ৬৯ পদাতিক ব্রিগেড ও বান্দরবান রিজিয়ন শান্তি, সম্প্রীতি ও উন্নয়ন বজায় রাখার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
১৬ ইস্ট বেঙ্গলের অধীনে রুমা উপজেলার সুংসুং পাড়া সাবজোনের দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলের বাসিন্দারা মূলত প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল। আধুনিক শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা থেকে অনেকাংশেই বঞ্চিত এই অঞ্চলের মানুষ। ৫ দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তাদের বন্ধু হিসেবে যেকোনো দুর্যোগে পাশে থেকেছে। বান্দরবান জেলায় বিভিন্ন জাতি, বর্ণ ও ধর্মের মানুষের বসবাস, যার মধ্যে বম সম্প্রদায় অন্যতম প্রধান জনগোষ্ঠী।
রবিবার দুপুরে সুংসুং পাড়া সাবজোনের অন্তর্গত দার্জিলিং পাড়ায় বম সম্প্রদায়ের বিশেষ নবান্ন উৎসব উপলক্ষে অধিনায়ক, ১৬ ইস্ট বেঙ্গলের নেতৃত্বে মানবিক সহায়তা প্রদান ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন লেঃ কর্নেল সৈয়দ আতিকুল করিম, পিএসসি, অধিনায়ক দি ম্যাজেস্টিক টাইগার্স। এছাড়াও সুংসুং পাড়া সাবজোনের ক্যাম্প অধিনায়ক, মেজর মুহাম্মদ আরাফাত রোকনী, দার্জিলিং পাড়া, সুংসাং পাড়া, রুমানা পাড়া ও জাদিপাই পাড়ার বম সম্প্রদায়ের সদস্য বৃন্দ, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, ধর্মযাজক, শিক্ষক ও পাড়ার সদস্যগণসহ দেড় শতাধিক মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণ করেন।
মতবিনিময় কালে প্রধান অতিথি বলেন, এই এলাকা বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু যার মধ্যে রয়েছে জিংসিয়াম সাইতার ঝর্ণা, জাদিপাই ঝর্ণা, ডাবল ফলস, কেওক্রাডং পাহাড়, ত্রিদেশীয় সীমানা ফলক সহ আরো অনেক দর্শনীয় স্থান। এই পর্যটন কেন্দ্রগুলো পাড়াবাসীর অন্যতম প্রধান জীবিকা নির্বাহের উৎস। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এবং জনগণ পাড়ায় ফেরত এলে পর্যটন শিল্পের পুনর্বিকাশের মাধ্যমে সবাই আর্থিকভাবে সচ্ছল হতে পারবে।
প্রধান অতিথি পাড়ায় অনুপস্থিত বম জনগোষ্ঠীর প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেন এবং ফেরত আসা জনগোষ্ঠীর চাকুরীর ব্যবস্থা, আর্থিক সহযোগিতা এবং প্রয়োজনীয় খাবারের রসদ সরবরাহ ইত্যাদি ব্যাপারে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতা ব্যক্ত করেন। তিনি আরো বলেন, স্থানীয় জনগণের জীবনযাত্রার মান ও সার্বিক উন্নয়নের জন্য শিক্ষাই একমাত্র মানদন্ড। পাড়ার সন্তান এবং যুবসমাজের মান-সম্মত শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য সকল প্রকার প্রয়োজনে ১৬ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট পাশে থাকবে বলে তিনি আশ্বস্ত করেন। এছাড়াও এই এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভূমিকা, এলাকায় সন্ত্রাস দমন এবং পর্যটক আসা সাপেক্ষে টুরিস্ট গাইড এর ব্যবহার এবং ধর্মীয় ও অন্যান্য অনুষ্ঠানের সহায়তা সম্পর্কে আলোচনা করেন।
এছাড়াও দার্জিলিং পাড়া, জাদিপাই পাড়া, সুংসাংপারা বাসি ২৬ প্রত্যাবর্তনকৃত বম পরিবারের মাঝে জনকল্যাণকর কাজের অংশ হিসেবে খাদ্য সামগ্রী প্রতি পরিবার চাল, আটা, ডাল, চিনি, তেল ও কম্বল এবং বস্ত্র সামগ্রী বিতরণ করা হয়।
১৬ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধিনায়ক স্থানীয় বাসিন্দাদের সন্ত্রাসবাদ এবং রাষ্ট্রবিরোধী অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি জানান, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসকারী সকল মানুষের দুর্যোগকালীন সময় এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সর্বদা সাহায্য করে আসছে। অধিনায়ক আশা প্রকাশ করেন যে, ভবিষ্যতেও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পার্বত্য অঞ্চলের সাধারণ মানুষের প্রয়োজনে সবসময় পাশে থেকে কাজ করে যাবে।
আরো পড়ুন→বান্দরবান ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজে ক্ষুদে বিজ্ঞানীদের প্রকল্প প্রদর্শনী