গত ৮ ফেব্রুয়ারি দেশের বহুল আলোচিত চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়ার মালুমঘাটে ঘাতক পিকআপভ্যানচাপায় প্রাণ হারানো সেই ছয় ভাইয়ের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে দেখতে ও সমবেদনা জানাতে এবং অর্থসহায়তা দিতে, কক্সবাজারের চকরিয়ার প্রত্যন্ত হাসিনা পাড়া গ্রামে ছুটে আসেন সরকারের ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান।
১ লা মার্চ (মঙ্গলবার) সকাল ১১টায় ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের মালুমঘাটস্থ হাসিনা পাড়ার প্রয়াত সুরেশ চন্দ্র সুশীলের বাড়িতে আসেন। এ সময় তিনি মহাসড়কে নিহত ছয় ভাইয়ের মা-স্ত্রী-সন্তানদের খোঁজখবর নেন এবং গভীর সমবেদনা জানান।
পরে তিনি ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ৫০ হাজার টাকা করে ক্ষতিগ্রস্ত আট পরিবারের হাতে মোট ৪ লাখ টাকার চেক হস্তান্তর করেন।এ সময় (কক্সবাজার-১)আসনের সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব জাফর আলমের সহধর্মিণী শাহেদা জাফরের পক্ষ থেকেও নগদ এক লাখ টাকা অর্থসহায়তা তুলে দেন।
পরে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান চকরিয়া উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক আয়োজিত নিহত স্বজনদের পরিবারের কাছে চেক হস্তান্তর ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ানের সভাপতিত্বে এবং উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি)মো. রাহাত উজ জামানের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো.ফরিদুল হক খান বলেন,এই ঘটনা হৃদয়বিদারক এবং মর্মস্পর্শী।সরকারের পক্ষ থেকে হাজার কোটি টাকা অনুদান দিলেও ছয় সন্তানকে ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব না।স্বজন হারানোর বেদনা কি জিনিস তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানেন এবং বোঝেন।সেজন্য তিনি এই ঘটনার পর থেকে প্রতি মুহূর্তে খবরাখবর রাখছেন।আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আপনাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য এসেছি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো.ফরিদুল হক খাঁন এমপি বলেন,আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও পরিবারের সবাইকে হারিয়েছেন পঁচাত্তরের পনেরো আগস্ট।অতএব তিনিই অনুধাবন করতে পারেন স্বজন হারানোর বেদনা কেমন।তাই প্রাথমিকভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমি আজ শোকাহত পরিবারগুলোকে দেখতে এসেছি,তাদেরকে সমবেদনা জানাতে।
এ সময় বক্তব্য রাখেন সাবেক মন্ত্রী ও খুলনা-৫ আসনের এমপি নারায়ণ চন্দ্র চন্দ,দিনাজপুর-১ আসনের এমপি মনোরঞ্জন শীল গোপাল, কক্সবাজার-১ আসনের সংসদ সদস্য ও চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাফর আলম, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ধর্মবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, সাবেক সচিব ও হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি অশোক মাধব রায়, কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বিভীষণ কান্তি দাশ, জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম, ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত পাল সিআইপি, কক্সবাজারের ট্রাস্টি বাবুল শর্মা, বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি সুপ্ত ভূষণ বড়ুয়া, ডুলাহাজারা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হাসানুল ইসলাম আদর প্রমুখ। উপস্থিত ছিলেন চকরিয়া সার্কেলের এএসপি মো. তফিকুল আলম, চকরিয়া থানার ওসি মুহাম্মদ ওসমান গনি।
উল্লেখ্য, গত ৮ ফেব্রুয়ারি প্রয়াত পিতা সুরেশ চন্দ্র সুশীলের ক্ষুদান্ন দান করতে গিয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়ার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের মালুমঘাটস্থ নার্সারি এলাকায় ঘাতক পিকআপভ্যানচাপায় নিহত হন ছয় ভাই অনুপম সুশীল, নিরুপম সুশীল, স্মরণ সুশীল, দিপক সুশীল, চম্পক সুশীলন ও রক্তিম সুশীল। এতে গুরুতর আহত হন ছোট ভাই প্লাবন সুশীল ও বোন হীরা সুশীল। তার মধ্যে প্লাবন সুশীল সুস্থ হলেও মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছেন এবং বোন হীরা সুশীল এখনো মালমুঘাট মেমোরিয়াল খ্রিষ্টান হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।