সাংবাদিকতা পেশাটি যেমন মহান তেমন দায়ীত্বশীলও,আবার এই পেশায় কিছু ঝুঁকি থাকলেও মজাটাও কিন্তু কম নয়। ফলে হাজার পেশার ভিড়েও এই পেশাটি একটি আলাদা ব্যক্তিত্ব নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।বর্তমানে আমাদের দেশে পত্রিকা, টেলিভিশন, অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও রেডিওর সংখ্যা কম নয়। কিছুদিন আগে কিছু টেলিভিশন ও রেডিওর অনুমোদন দিয়েছে সরকার।সেগুলো একে একে প্রচারেও আসছে। কিন্তু এর অনেক আগেই ঢাকা থেকে প্রকাশিত জাতীয় দৈনিক পত্রিকার সংখ্যা কয়েকশ ছাড়িয়েছে। তারপর আরো কয়েকশ আছে সাপ্তাহিক,পাক্ষিক,মাসিক,ত্রৈমাসিকসহ কিছু পত্রিকা। আর অনলাইন নিউজ পোর্টালের তো কোন হিসেবই নেই।নিউজ পোর্টালের রেজিস্ট্রেশনের আবেদন পরেছে ১৮০০০ এর বেশি।
জাতীয় দৈনিকের সংখ্যা কয়েকশ থাকলেও আমরা চিনি মাত্র ২০-৩০টি। বাকিগুলোর নাম পরিচয় মানুষ খুব একটা জানেনা ও বাজারেও কিনতে পাওয়া যায়না। খারাপ বিষয় হলো, সেইসব পত্রিকাতে টাকার বিনিময়ে সাংবাদিকের আইডি কার্ড কিনতে পাওয়া যায়। বিশেষ করে মফস্বলে এই বিষয়টি বেশি লক্ষ্য করা যায়। আজকাল চোর-বাটপার থেকে শুরু করে ছিনতাইকারী ও মাদক ব্যবসায়ীদের কাছেও প্রেস কার্ড পাওয়া যায়। পুলিশি সমস্যাসহ যে কোন সমস্যায় পরলে তখন তারা সাংবাদিক পরিচয় দেয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে অসাধু লোকেরা অসাধু কর্ম করার সময় কোন সমস্যা হলে যেন সাংবাদিক পরিচয়ে বাঁচতে পারে সেজন্যই এই পরিচয় বহন করে। এইসব পত্রিকার কার্ডধারী লোকেরা যখন সাংবাদিক পরিচয়ে অপকর্ম করে বেড়ায় তখন প্রকৃত সাংবাদিকরা পরে বিপাকে। লোকেরা তখন একজন প্রকৃত সাংবাদিককেও ওই অপকর্মকারী ব্যক্তির সাথে মেলায়। তখন প্রকৃত সাংবাদিকরা তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে অনেক সমস্যার মুখোমুখি হন। ওই সমস্ত পত্রিকাগুলো সামান্য কিছু টাকার বিনিময়ে যে কাউকে সাংবাদিক বানিয়ে দিচ্ছে। শুধু পত্রিকা বা অনলাইন নিউজ পোর্টালই নয়। বর্তমানে এরকম টিভির সাংবাদিকও দেখা যায় অহরহ তাদের দিয়ে সঠিক সাংবাদিকতা কতটুকু হবে এ বিষয়টিও যতেষ্ট ভাবার বিষয়।
গণমাধ্যম গণমানুষের কথা বলে। তাই এই গণমাধ্যমে যখন সাংবাদিকের বদলে কোন অসাংবাদিক নিয়োগ করা হয় তখন সেই ব্যাক্তি আসলে কতটা গণমানুষের কথা বলতে পারবে এ বিষয়টি যথেষ্ট সন্দিহান। যতটুকু জানা যায়, ঢাকায় সাংবাদিকতা করতে হলে সাংবাদিকতায় পড়াশুনা থাকতে হয়। আর মফস্বলে সাংবাদিকতা করতে হলে সাংবাদিকতায় পড়াশুনা না থাকলেও তার সাংবাদিকতা করার অভিজ্ঞতা থাকতে হয়। কিন্তু এসব না দেখে এমন লোককে টেলিভিশন চ্যানেলে নিয়োগ দেওয়া হয় জেলা প্রতিনিধি হিসেবে, যে কিনা জীবনে কখনো সাংবাদিকতা করেনি, জীবনে কোথাও এক লাইন লিখেনি, যে কিনা নিজের সাংবাদিক বড় ভাইয়ের মাধ্যমে টিভির অফিসে নিউজ পাঠায় আর নিজে বাড়িতে ঘুমায়। এই অসাংবাদিক দ্বারা দেশের গণমানুষ আসলে কতটা উপকৃত হবে এটি একটি বড় প্রশ্ন। সেই আবার সম্প্রতি সময়ে রাতারাতি একটি স্থানীয় দৈনিক পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকও বনে যায়। পরে পত্রিকার মালিক তার সম্পর্কে জানতে পেরে উক্ত পত্রিকাটি কেড়ে নেয়।
জনপ্রিয় টেলিভিশন চ্যানেল এশিয়ান টিভির কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে মঈনুল হোসেন নামের একজন যুবককে যে কখনো সাংবাদিকতা করেনি অর্থাৎ অসাংবাদিক। এমনকি সে ঠিকভাবে কথাও বলতে পারেনা। তার সব কাজ করে দেয় তার সাংবাদিক বড় ভাইয়েরা। সময়ের বহুল আলোচিত সমালোচিত ছিনতাইকারী, পতিতা ব্যবসায়ী ও ইয়াবাকারবারী সেই মঈনুল। এখন সে বড় মাপের সাম্বাদিক!
এর দ্বারা মানুষ আসলে কতটা উপকৃত হবে এটি একটি বড় প্রশ্ন। এটা ঠিক যে, চ্যানেল কর্তৃপক্ষ যাকে ইচ্ছা তাকে নিয়োগ দিতে পারেন। কিন্তু আমি দেশের একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ একটি চ্যানেলে এমন লোককে সাংবাদিক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া দেখে হতভম্ভ হওয়া ছাড়া আর কী করার থাকে?
লেখকঃ এম আমান উল্লাহ গণমাধ্যম কর্মী
আরো পড়ুন আলীকদমে টিসিবির পণ্য বিক্রয় শুরু তালিকা থেকে বাদ পড়েনি প্রতিবন্ধীরা