“বান্দরবানের প্রত্যান্তঞ্চলে বেশীর ভাগই বসবাস করেন ম্রো, বম, ত্রিপুরা, খুমী, চাকমা,তচঙ্গ্যা। বছরের মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত অন্তত এই চার মাস পানি সংকটে থাকতে হয় দুর্গম পাহাড়ি জনগোষ্ঠিদের। সেদিন তীব্র গরমে পানি স্তর নেমে যাওয়ার ফলে পানির জন্য হাহাকারে পড়তে হয়। পানি পেলেও সেটি আবার বিশুদ্ধ নয়। কিন্তু এখন পানি পাওয়া যাচ্ছে প্রত্যেক ঝিড়ি ও জংঙ্গলে। এই পানি সরক্ষণ করা গেলে বছরে ওই চারমাস পানি সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। তাছাড়া প্রত্যেক গ্রামে পানি উৎসের স্থানে জুম চাষ ও সেগুন গাছ লাগানো যাবে নাহ। বরংচ পানি উৎস আরো বাড়াতে হলে ঝিড়ির পাশে কলা গাছ লাগানো প্রয়োজন। আর নিজেদের মধ্যে প্রয়োজন সচেতনতা”– পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ভাষ্য।
আকাশ মারমা মংসিং >>
পাহাড়ের প্রত্যন্ত অঞ্চলের দীর্ঘযুগ ধরে বসবাস করে আসছে দুর্গম জনপদে বসবাসরত পাহাড়ি জনগোষ্ঠির। তাদের জীবনযাত্রা মান চলে পাহাড়ে জুম ধানের উপর। তাছাড়া সেসব জনগোষ্ঠিদের একমাত্র প্রধান কারণ পানি সংকট। গ্রীষ্মকাল আসলে কয়েকমাস পানি অথৈ সংকটে ভূগতে হয় তাদের। বান্দরবানের বিভিন্ন স্থানে পাহাড় কাটা, গাছ নিধন, বালু ও পাথর উত্তোলনের কারনে এমন দুর্ভোগ যেন সারা বছরের চিত্র।
এসব অপরাধমূলক কর্মকান্ডের ফলে পাহাড়ের প্রকৃতিতে কোনভাবে যেন প্রাণ ফিরছে নাহ। ফলে দিনদিন নদী-নালা, ঝিড়ি-ঝর্ণা ও শাখা প্রশাখা নদীর ঝিড়িগুলো শুকিয়ে দেখা নাই বিশুদ্ধ পানি। এতে পানি হাহাকারে থাকতে হয় সেসব পাহাড়ের দুর্গম বসবাসরত মানুষদের। কিন্তু শরৎতে এসে পালটে গেছে পাহাড়ের প্রকৃতির চিত্র। শুকনো মৌসুমে যেসব মরা ছিল তা এখন ঝিড়ি-ঝর্ণায় পানি ঝড়ছে অবিরাম। সহজেই বিশুদ্ধ পানি পাওয়াই দুর্গম জনপদের মানুষ এখন আছে বেশ স্বস্তিতে।
পাহাড়ের থেকে ঢলে পাড়া ঝিড়ির পানিতে গোসল করছেন স্থানীয় মুরুং ছেলে।
দুর্গম পাহাড়ি জনগোষ্ঠিরা জানিয়েছেন, বান্দরবানের বছরের অন্তত চারমাস পানি সংকটে পড়তে হয়। সেই চারমাস তীব্র গরমে ঝিড়িতে পানি শুকিয়ে যায়। বিশুদ্ধ পানি খুজতে মাইলে পর মাইল হাটঁতে হয়। তবুও বিশুদ্ধ পানি পাওয়া খুবই কঠিন। কিন্তু এখন বর্ষাকালে এসে বিশুদ্ধ পানি পাওয়াতেই খুশি সেসব দুর্গম জনপদের মানুষ। যেসব ঝিড়ি মরা ছিল সেসব ঝিড়িতে ঝড়ছে অধরা পানি । এখন এসব পানি সরক্ষন করা সময়। এই পানি সরক্ষণ করা গেলে বছরে অনান্য সময়েও সংকট কাটানো সম্ভব। তাছাড়া নিজদের মধ্যে সচেতনতা আনা জরুরী বলে মনে করছেন দুর্গম পাহাড়ের জনগোষ্ঠিরা।
জানা গেছে, পাহাড়ি অঞ্চলে ঝিরি ও নদীর পানি সঞ্চয়ের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে পাহাড়ি বন ও পাথর। প্রাকৃতিকভাবে তৈরিকৃত এই পাথরগুলো প্রাকৃতিক উপায়ে পানি সংরক্ষণ ও সঞ্চয় করে থাকে। আর এই সঞ্চয়কৃত পানি পাহাড়ি জনগোষ্ঠীরা দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করে। কিন্তু বর্তমান সময়ে অবাধে পাথর উত্তোলনের কারণে পানি সঞ্চয়ের এ প্রাকৃতিক মাধ্যমগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলস্বরূপ নদী ও ঝিরিগুলো মারা যাচ্ছে। বান্দরবানের কয়েকটি উপজেলার গভীর জঙ্গলের ঝিড়ি থেকে প্রতিদিন পাথর তোলা হচ্ছে। এর ফলে ইতিমধ্যে কয়েকশ ঝিরি মারা গিয়েছে। কিন্তু শরৎতে এসে সেসব ঝিড়ি এখন প্রাণ ফিরে পেয়েছে। সড়ক জুড়ে পাহাড় থেকে ধলে পড়ছে বিশুদ্ধ পানি। প্রত্যেক জঙ্গলে শুধু পানির তৈতুং শব্দের অবিরাম। এখন পানি সরক্ষনের পাশপাশি নিজেদের মধ্যে সচেনতা না থাকলে আবারও পড়তে হবে পানি সংকটে ।
চারিদিকে ঝর্ণা পানি পড়ছে অবিরাম।
পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বান্দরবানের প্রত্যান্তঞ্চলের বেশীর ভাগই বসবাস করেন ম্রো, বম, ত্রিপুরা, খুমী, চাকমা,তচঙ্গ্যা । বছরের মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত অন্তত এই চার মাস পানি সংকটে থাকতে হয় পাহাড়ি জনগোষ্ঠিদের। সেদিনে তীব্র গরমে পানি স্তর নেমে যাওয়ার ফলে পানির জন্য হাহাকারে পড়তে হয়। পানি পেলেও সেটি আবার বিশুদ্ধ নয়। কিন্তু এখন পানি পাওয়া যাচ্ছে প্রত্যেক ঝিড়ি ও জংঙ্গলে। এই পানি সরক্ষণ করা গেলে বছরে ওই চারমাস পানি সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব । তাছাড়া প্রত্যেক গ্রামে পানি উৎসের স্থানে জুম চাষ ও সেগুন গাছ লাগানো যাবে নাহ। বরংচ পানি উৎস আরো বাড়াতে হলে ঝিড়ির পাশে কলা গাছ লাগানো প্রয়োজন। আর নিজেদের মধ্যে প্রয়োজন সচেতনতা।
স্থানীয় নারীরা পানি সংগ্রহ করে বাড়ি ফিরছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বান্দরবান –রুমা- থানচি ও চিম্বুক সড়ক জুড়ে পাহাড় থেকে ঢেয়ে পড়ছে অবিরাম পানি। তৈতুং শব্দের স্বচ্ছ পানি ঝড়ছে কয়েকশত ছোট-বড় ঝিড়িতে। সেসব ঝিড়িতে পানি পড়ার দুরের কথা এক তুচ্ছ পানিও দেখা মিলত না ওইসব ঝিড়িতে। কিন্তু শরৎতে এসে প্রকৃতি চিত্র পাল্টেছে অন্যরুপে। দুর্গম জনপদের জনগোষ্ঠিরাও পানি পেয়ে খুবই খুশী।
বান্দরবান মানবধিকার সমাজকর্মী অংচমং মারমা জানান, বান্দরবানে মার্চ- জুন এই চারমাস পানি অভাব দেখা দেয়। কিন্তু এই বর্ষায় সব স্থানে পানি পড়ছে। দুর্গম এলাকায় জনগোষ্ঠিদের এখন পানি সরক্ষণ করার সময় । তাছাড়া সরকার কিংবা প্রশাসন এই পানি ধরে রাখতে কোন টেকনোলজি অর্থাৎ ঝিড়িতে বাঁধ নির্মাণ কিংবা পাইপে মাধ্যমে শুষ্ক মৌসুমে পানি ধরে রাখা গেলে দুর্গম বসবাসরত জনগোষ্ঠিদের পানি সংকট কমে আসবে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম ‘বন ও ভূমি অধিকার সংরক্ষণ আন্দোলনের বান্দরবানের চ্যাপ্টার সভাপতি জুয়ামলিয়ান আমলাই বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে দুর্গম এলাকায় প্রতিবছর শুকনো মৌসুমে পানির অভাব দেখা দেয়। সেসব মৌসুমে যদি সারাবছর পানি পাওয়া পদক্ষেপ নেওয়া হয় তাহলে দুর্গম এলাকায় পানি পাওয়া যাবে। আর পানি পেতে হলে সাধারণ মানুষের মাঝে আনতে হবে সচেতনতা। তাছাড়া প্রতিটি বাড়িতে যদি ওয়াটার রিজারভার তোরী করা যায় নিজের কিংবা সরকারের উদ্যেগে তাহলে শুকনা মৌসুমে পানি পাওয়া যাবে।